রিয়াজুল হাসান খোকন, শামলাপুর:
দেশের সর্বদক্ষিনের উপজেলা টেকনাফ থানার অন্তর্গত বাহারছড়া যেন এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের এক লীলা ভুমি। এখানে রয়েছে পর্যটকদের ঘুরাঘুরি ও আনন্দ করার জন্য বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান যা পর্যটকদের মনকে মাতিয়ে তুলবে। বাহারছড়া এই দর্শনীয় স্থান গুলো যদি সরকার বা উদ্যােগতাদের যতাযত সঠিক ব্যবস্থাপনা পায় তাহলে এই স্থান গুলো হয়ে উঠবে দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট।

কুদুম গুহা
টেকনাফ শামলাপুর বাজার থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার পূর্ব দিকে পাহাড়ের ভেতরে এই কুদুম গুহা অবস্থিত। প্রাচীন এই কুদুম গুহা সম্পর্কে স্হানীয়দের প্রচলিত উপকথা হচ্ছে কুদুম অর্থ লম্বা গুহা। কুদুম শব্দটি এসেছে চাকমা ভাষা থেকে। আধিকাল থেকে এটি ছিল চাকমা অধ্যুষিত এলাকা। স্থানীয়দের মতে বহুকাল পূর্বে কুদুম গুহায় এক অপরুপ সুন্দরী পরী বাস করতো। গুহার ভিতরে ছিল সোনালী ধান ও ফসলের ক্ষেত, আর ছিল বিস্তৃত সবুজ মাঠের চরণ ভুমি। গুহার মুখে বসে সোনার সুতা দিয়ে কাপড় বুনতো পরী। পাশে ছিল চমৎকার এক বন। রোজ সকালে গুরু চরাতে আসত এক রাখাল ছেলে। এক সময় রাখাল ছেলের সাথে ঐ পরীর বন্দুত্ব হয়। পরী প্রতিদিন রাখালকে গুহার ভেতরে নিয়ে যেত। নানান ধরনের খাবারের যোগান দিত। রাখালের গরু গুলোর জন্য পরী ঘাসের ব্যবস্থা করে দিত। পরীর এসব গুপন কথা যেন কাউকে প্রকাশ না করে সে জন্য রাখালকে প্রতিজ্ঞা করালো। পার্শবর্তী আরাকান রাজ্যের এক যাদুকর ইন্দ্রজালের মাধ্যমে জেনে ফেলল পরীর এই সব গোপন কথা। পরীর দুইটি চোখ ছিল খুবই মুল্যবান। চোখ দুইটি নিতে পারলে সে জাদুকর অমরত্ব লাভ করতে পারবে। জাদুকর রাখালের গ্রামে এসে হাজির হল। রাখালকে জাদুকর বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে পরীর সমস্ত গোপন রহস্য জেনে নিল। গুহার ভেতর সমস্ত ধন রত্নের লোভ দেখিয়ে জাদুকর রাখালকে বশ করলো। মন্ত্র পড়া এক গ্লাস পানি হাতে দিয়ে রাখালকে বললো পরীর গাঁয়ে ছিঁটিয়ে দিতে। কথা মত রাখাল মন্ত্র পড়া পানি পরীর গায়ে ছিটিয়ে দিল। মন্ত্র পড়া পানি ছিটানোর পর পরীর রুপ বদলে গেল। অপরুপ সুন্দরী পরী ভয়ংকর বাঘের রুপ ধারণ করলো। পরে মন্ত্র পড়া পানি পরীকে পাথরের মুর্তিতে রুপান্তরিত করল। জাদুকর পরবর্তীতে তার কথা রাখেনি। রাখালকে ও সে জাদুকর মেরে ফেলল। সাথে জাদুকর গুহার ভেতরের বিস্ময়কর প্রকৃতি ও ধ্বংস করে দিল। কথিত আছে কখনো কখনো কুদুম গুহায় একা ঘুরতে গেলে সে বিস্ময়কর পরীর পাথরের মূর্তি দেখা যায়। গুহাটি আবিস্কারের পর থেকে স্থানীয় ও দুরের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কথিত আছে কুদুম গুহার ভিতরে নাকি টর্চের আলো প্রবেশ করেনা। গুহার ভেতরে শেষ তিন মিটার জায়গা ঘুটঘুটে অন্ধকার। গুহার আশে পাশের এলাকাতে বিভিন্ন প্রজাতির পশু পাখি বাস করে। তার মধ্যে মৌটুসী, কাঠ ঠোকরা, বুলবুলি, ফিঙ্গে,ধনেস,ময়না,টিয়ে,টুনটুনি, কাঠবিড়ালি,বানর,হনুমান ইত্যাদি উল্লেখ যোগ্য। মাঝে মধ্যে বন্য হাতি, শিয়াল,হরিণ ইত্যাদির প্রাণীর দেখা মেলে।

শামলাপুর নৌকা বীচ
টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত শামলাপুর নৌকা বীচ দেশী বিদেশী পর্যটকদের মনকে উৎফুল্ল ও আকর্ষণীয় করার জন্য এক মনোরম স্থান। এই বীচে রয়েছে প্রায় পাঁচ শতাধিক ছোট মাছ ধরার ট্রলার। এইখানে সহজে অনেক তাজা মাছ মিলে যা পর্যটকদের মনকে ভ্রমনের আনন্দে আরো জাগিয়ে তুলবে। এখানকার মানুষের প্রধান জীবিকা হল ছোট ট্রলার দিয়ে মাছ ধরা। আর জোসনার রাতে শামলাপুর নৌকা বীচে শুকনো বালিতে বসে সমুদ্রের সৌন্দর্য্য উপভোগ করলে যে কোনো পর্যটকদের মনকে শান্তিময় করে তুলবে। এই বীচ শামলাপুর বাজার থেকে আধা কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত।

জাহাজপুরা গর্জন বাগান
টেকনাফ শামলাপুর থেকে ৬ কিলোমিটার দক্ষিনে এই অপরুপ জাহাজপুরা গর্জন বাগান অবস্থিত। দেখলে মনে হবে প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সারি সারি ভাবে রোপন করেছে মূল্যবান এই গর্জন গাছ গুলো। স্থানীয়দের মতে এই গর্জন বাগান কেউ পরিকল্পিত ভাবে রোপন করেনি। প্রাকৃতিক শক্তির সাহায্যে এই বাগানের সৃষ্টি হয়েছে। লম্বা সোজা সাদা আকৃতির এই গর্জন বাগানের গাছ গুলো যেন নীল আকাশকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। দেশে বিদেশে এই মাদার গর্জন বাগান ও বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়াই খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ইতি মধ্যে বিভিন্ন এন জি ও সংস্থার উদ্যােগে এই জাহাজপুরা গর্জন বাগানকে পর্যটন স্পট হিসেবে ঘোষনা করেছে। দেশি বিদেশি অনেক পর্যটককে এখানে বেড়াতে আসতে দেখা যায়।

নোয়াখালি পাড়া ঝর্ণা পাহাড়
নোয়াখালি পাড়া ঝর্ণা পাহাড় প্রকৃতির যেন এক অপরুপ দৃশ্য। এই পাহাড়ের পাদদেশে উঠলে মনোরম ভাবে দেখা যাবে সমুদ্র ও গ্রামের সারি সারি সুপারি বাগান। এই পাহাড়ের একপাশে রয়েছে ভ্রমন পিপাসোদের মন ভোলানো একটি অপরুপ ঝর্ণা। মনে হবে যেন এই পাহাড়ের আশে পাশে সব কান্নার পানি এক হয়ে এই পাহাড়ের একপাশ দিয়ে যাচ্ছে আর সমুদ্রপৃষ্টে জমা হচ্ছে। এই পাহাড়ের উপরে দাড়িঁয়ে সমুদ্রের দিকে তাকলে মনে হবে যেন অপরুপ সমুদ্র হাতছানি দিয়ে ডাকছে। তাই নোয়াখালী পাড়া ঝর্ণা পাহাড় উদ্যোগতাদের সঠিক ব্যবস্থাপনা পেলে এটি হবে দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট।