অনলাইন ডেস্ক:

‘একতরফা’ নির্বাচনে ভোট বর্জনসহ সরকারের বিরুদ্ধে ‘সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে’র কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। অসহযোগে রয়েছে- ৭ জানুয়ারি ভোট বর্জন, ভোট কেন্দ্রে না যাওয়া, নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নির্বাচনী দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকা, সেবামূলক কর, খাজনাসহ বিভিন্ন প্রদেয় না দেয়া, ব্যাংককে অর্থ আমানত না রাখা এবং আদালতে হাজিরা না দেওয়া। আজ বুধবার দুপুরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই ঘোষণা দেওয়ার পরপরই দুপুরে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমের কাছে এই কর্মসূচি ‍তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, বিএনপিসহ সকল আন্দোলনরত দল এবং জনগণের পক্ষ থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এই ঘোষণায় বলা হয়েছে যে, প্রতিটি নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আজ থেকে অবৈধ সরকারকে সব ধরনের অসহযোগিতা শুরু করার বিকল্প নেই। এই মুহূর্ত থেকে এই অবৈধ সরকারকে সহযোগিতা না করার জন্য প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আপনারা ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচন বর্জন করুন। ডামি নির্বাচনের নামে ৭ জানুয়ারির বানর খেলার আসরে অংশগ্রহণ করবেন না। আপনারা কেউ ভোট কেন্দ্রে যাবেন না… এটি আপনার গণতান্ত্রিক অধিকার। নির্বাচন কমিশন ৭ জানুয়ারি কাকে এমপি ঘোষণা করবে সেই তালিকা তৈরি হয়ে গেছে। সুতরাং ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের ভোট গ্রহণে নিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালনে বিরত থাকুন।

ভোট বর্জন ছাড়াও সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষিত অন্যান্য কর্মসূচির কথা তুলে ধরে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রিজভী বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকারের সকল প্রকার কর-খজনা-ইউনিটিলিটি বিলসহ অন্যান্য প্রদেয় স্থগিত রাখুন। ব্যাংকগুলো এই অবৈধ সরকারের লুটপাটের অন্যতম মাধ্যম। সুতরাং ব্যাংককে টাকা জমা রাখা নিরাপদ কিনা সেটি ভাবুন। মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় লক্ষ নেতাকর্মী আপনারা আজ হতে আদালতে হাজিরা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। আপনাদের প্রতি সুবিচার করার আদালতের স্বাধীনতা ফ্যাসিবাদী এই সরকার কেড়ে নিয়েছে। এই অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে আপামর জনগণের স্বার্থ বিরোধী এই মাফিয়া সরকারকে প্রতিহত করে শ্রমজীবী-কর্মজীবী মানুষের সরকার প্রতিষ্ঠার এখনই চূড়ান্ত সময়।

তিনি বলেন, চলমান এই আন্দোলন চূড়ান্ত সফলতায় পৌঁছাতে দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গণতন্ত্রকামী প্রতি মানুষকে বর্তমান অবৈধ সরকারকে অসহযোগিতা শুরু করুন, অপরকে অসহযোগিতা করতে উদ্বুদ্ধ করুন। এই আন্দোলনে বিজয় লাভ করেই এই শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে রেখে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ইনশাল্লাহ।

গত বছরের ১০ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন, সংসদ বাতিলের ‘একদফা’ দাবিতে বিএনপি ও সমমনা জোট গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণফোরাম-পিপলস পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, এলডিপি, লেবার পার্টি, এনডিএম প্রভৃতি সংগঠন যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে। দীর্ঘ একবছরের অধিক সময়ে নানা কর্মসূচি মাধ্যমে তারা আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়। এছাড়া এই আন্দোলনে আলাদা আলাদাভাবে গণতান্ত্রিক বাম জোট, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ, এবি পার্টি প্রভৃতি দলও রাজপথে রয়েছে।

গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পুলিশ পণ্ড করে দেওয়ার পর ‘একতরফা’ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো চার দফায় ৫ দিন হরতাল ও ১১ দফায় ২২ দিন অবরোধ কর্মসূচি করে। এরপর পর অসহযোগ আন্দোলনের এই কর্মসূচি দিলো বিএনপি।

বর্তমান সরকার সাংবিধানিকভাবে ‘অবৈধ’ উল্লেখ করে রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসীরা যদি গণতন্ত্রের পক্ষের একজন রাজনৈতিক কর্মী-সমর্থকদের হয়রানি করে দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। ঐক্যভাবে এই সরকারকে অসহযোগিতা অব্যাহত রাখলে গ্রেফতার-নির্যাতন-হয়রানি করার সাহস পাবে না। দেশে জনগণের অধিকার নেই। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আজ থেকে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু হলো। শেখ হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। গণআন্দোলনের মাধ্যমেই পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে গণমানুষের অধিকার।

একইসঙ্গে সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগিতা করতে গিয়ে প্রশাসন ও সাধারণ মানুষ যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তাদের বিষয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দেওয়া প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে রিজভী বলেন, এই অবৈধ সরকারকে অসহযোগিতা করতে গিয়ে প্রশাসন কিংবা দেশপ্রেমিক জনগণ যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন পরবর্তী গণতান্ত্রিক সরকার অবশ্যই তাদেরকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেবে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠান আন্দোলনে আপনাদের ত্যাগের প্রতি সুবিচার করবে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং লুণ্ঠিত ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনে বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষে যারাই হতাহত হয়েছে ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক সরকার তাদের অবদান দলীয় ও রাষ্ট্রীয়ভাবে দেবে।

– কালবেলা