এম.এ আজিজ রাসেল:
ব্যাপক উৎসাহ—উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে কক্সবাজারে শুরু হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা। এই উৎসব ঘিরে বৌদ্ধ বিহারগুলোতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। শনিবার (২৮ অক্টোবর) বুদ্ধপূজা, শিবলী পূজা, পঞ্চশীল ও অষ্টশীল গ্রহণ, কর্মদেশনা, ধ্যান অনুশীলন, প্রার্থনা, হাজারো প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও ফানুস উড়ানো হয়। রবিবার প্রবারণা পূর্ণিমার দ্বিতীয় দিন। এ দিন আকাশে উড়ানো হবে শত শত ফানুস। আগামী ৩০ অক্টোবর সোমবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও রামু বাঁকখালী নদীতে কল্প জাহাজ ভাসার মধ্য দিয়ে এই উৎসব শেষ হবে।

কক্সবাজার কেন্দ্রীয় মাহাসাংদোগ্রী বৌদ্ধ বিহারে গিয়ে দেখা যায়, বিকাল থেকে রাখাইন সম্প্রদায়ের নারী—পুরুষ নতুন পোশাক ও উন্নতমানের খাবার নিয়ে বিহারে আসেন। সেখানে সুখ—শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় প্রার্থনা করেন সবাই। এবার শহরের অ¹মেধা বৌদ্ধ বিহার, পিটাকেট, মোহাজের পাড়া বৌদ্ধ বিহার, জাদিরাং বিহার ও রাখাইন সামাজিক এবং ধর্মীয় সংগঠনগুলো নজরকাড়া প্রায় ৫০টি নান্দনিক প্যান্ডেল তৈরি করেছে। প্যান্ডেলগুলোর মূল আকর্ষণ বুদ্ধ। জমকালোভাবে সাজানো হয়েছে এসব প্যান্ডেল। বিহারগুলোও সেজেছে নব রূপে। বর্ণিল আলোকসজ্জায় আলোকিত করা সর্বত্র। প্রবারণা ঘিরে বৌদ্ধ পল্লীর ঘরে ঘরে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।

এবার কক্সবাজার কেন্দ্রীয় মাহাসিংদোগ্রী বৌদ্ধ বিহারে প্রবারণার প্যান্ডেল তৈরি করেছে কক্সবাজার সিটি কলেজ বৌদ্ধ ছাত্র মৈত্রি, কক্সবাজার সরকারি কলেজ বৌদ্ধ ছাত্র মৈত্রি, বড় বাজার রাখাইন যুব সংঘ, বাংলাদেশ রাখাইন স্টুডেন্ট কাউন্সিল, ফ্রি স্টাইল রিলেশনশীপ, রাজধানী ফ্রেন্ডস সার্কেল, রাখাইন যুব ইউনিটি, হ্যাংগিং গার্ডেন, কে, আর ভিক্টোরিয়া, রাখাইন তরুণ সংঘ ও বৌদ্ধ মৈত্রি পরিষদ, ক্যাং পাড়াসহ আরও বিভিন্ন সংগঠন।

শহরের মোহাজের পাড়া, বাজার ঘাটা, বৈদ্যঘোনা ও জাদিরাম বৌদ্ধ বিহার, মহেশখালী, উখিয়া, চকরিয়া, রামু, পেকুয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়িতেও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপিত হচ্ছে।

কক্সবাজার রাখাইন একতা সংঘের সভাপতি উসেন থোয়েন (উসেনমি বাবু) বলেন, ‘প্রবারণার মূল প্রতিপাদ্য আত্মশুদ্ধি, শুভ, সত্য ও সুন্দরকে বরণ করে অসত্য ও অসুন্দরকে বর্জন করা। আমি কামনা করি মানুষের অন্তর থেকে সব মলিনতা দূর করে অহিংসা, সাম্য, মৈত্রী, প্রেম ও দয়া জাগ্রত হোক।’

কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক মং এ খেন বলেন, ‘প্রবারণা উপলক্ষ্যে সব ধর্মের মানুষ বিহারগুলোতে আসছে। এতে সম্প্রীতির মেল বন্ধন তৈরি হয়েছে। মূলতঃ আষাঢ়ী থেকে আশ্বিন পর্যন্ত বৌদ্ধ ভিক্ষুদের তিন মাস বর্ষাব্রত শেষে এই প্রবারণা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মাসজুড়ে অনুষ্ঠিত হবে কঠিন চীবর দানোৎসব।’

জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ—সভাপতি সাবেক সাংসদ অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন বলেন, ‘সিদ্ধার্থ যখন বুদ্ধিসত্ত রূপে শ্রাবন্তী নগর থেকে গৃহত্যাগ করেন। তখন অনুমাদ্ধর্শী নদী তীরে অবস্থান কালে অধিষ্ঠান করে নিজ চুলকে কর্তন করে উপরে দিকে নিক্ষেপ করেন। সে চুল গুচ্ছ মহাতাবতিংস স¦র্গের প্যাগোডা হিসেবে স্থির আছে। তাই চুলামনি নামে প্যাগোডা উদ্দেশ্যেই পূঁজা এবং প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করতে ফানুস উড়ানো হয় বলে জানা গেছে। তথাগত ভগবান বুদ্ধের আড়াই হাজার বছর পূর্বে সময়ের তাবতিংসা স্বর্গের তিন মাস বর্ষাবাস করে কাত্তির্কী পূর্ণিমাকে ঘিরে মানবকুলের মহাপৃথিবীতে অবতরণ করেন।’