মোঃ ফারুক,পেকুয়া:

ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়েছে পেকুয়া উপজেলার সব-ক’টি ইউনিয়ন। পুরো ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় তিন হাজার এর অধিক ঘরবাড়ির মধ্যে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন প্রায় হাজার পরিবার। এই সমস্ত পরিবারগুলো যেমন খাবার সংকটে ভুগছেন তেমনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন পরিবারের অনেক সদস্য।

এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্ক বিহীন পুরো উপজেলায় সড়কে সারি সারি বিদ্যুৎ এর খুঁটি পড়ে আছে। বিদ্যুৎ সচল করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সাব-স্টেশন কার্যালয়ের সদস্যরা।

পেকুয়া সদরের হরিণাফাঁড়ি, গোয়াখালী, সিরাদিয়া, বটতলিয়া পাড়া, দিয়া পাড়াসহ উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রামে কাচাঘর ভেঙে গেছে। কারো কারো টিনের চালা উড়ে গেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিয়ে বসবাস করছেন। কারো কারো ঘরে অল্প খাদ্য থাকলেও বেশিরভাগ ঘরে খাদ্যের অভাব হয়ে পড়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়েছে পরিবারের অনেক শিশু। ঘরবাড়ি খোলা আকাশের নিচে রেখে চিকিৎসার জন্যও যেতে পারছেনা বাড়ির কর্তারা। তবে সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম বাহাদুর শাহের নির্দেশে ইউপি সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে এমন করুণ ও অমানবিক চিত্র দেখা গেছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপ প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ৬শত ঘরবাড়ি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত ও ৮শত ঘরবাড়ি মাঝারি ক্ষতিগ্রস্ত বলে এই পর্যন্ত খবর পেয়েছি। আমরা সরেজমিন পরিদর্শন করে তালিকা প্রস্তুত করছি৷ ইতোমধ্যে সরকারি দপ্তর থেকে পাওয়া ১৮টন চাল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিতরণ শুরু করেছি।

খোলা আকাশের নিচে বাস করা পেকুয়া সদন টেকপাড়ার বাসিন্দা বিধবা রেহেনা বেগম, সালাউদ্দিন, মগনামার শরতঘোনার নুর মুহাম্মদ ও জসিম উদ্দিন পৃথক পৃথক ভাবে জানান, ঘূর্ণিঝড় শুরু হওয়ার ৫ মিনিটের ভিতর প্রচণ্ড বাতাসে আমাদের ঘর-বাড়ি উপড়ে নিয়ে যায়। এমনিতেই গত বন্যার পর আমরা খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছি। তার মাঝেই ঘূর্ণিঝড়ে সব নিয়ে গেলো। এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি।

এখন পর্যন্ত ত্রাণ সামগ্রী পেয়েছে কিনা প্রশ্ন করলে তারা জানান, এক লোক এসে তালিকা করে গেছে তবে ত্রাণ পায়নি।

মগনামা আর উজানটিয়ায় সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সরকারি পর্যায়ে ১০কেজি করে চাল বিতরণ করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দীর্ঘ সারির মাঝে অল্প সংখ্যক মানুষ চাল পাচ্ছে এমন তথ্যও উঠে এসেছে।

মগনামা ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুস চৌধুরী জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে মগনামা ইউনিয়নে ১২১টি বসতঘর সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে, ৩৯২টি ঘর আংশিক ভেঙে গেছে তার ইউনিয়নে ত্রাণ সরকারি বিতরণ অব্যাহত আছে।

পেকুয়া পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের এজিএম দিপংকর জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পেকুয়ায় মেইন লাইনের ৫৭টি খুঁটি সহ মোট ১২৭টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লাইন সচল করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সাথে যোগ দিয়েছে সীতাকুণ্ড পল্লী বিদ্যুৎ ইউনিটের লোকজন।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমা বলেন, এই পর্যন্ত পেকুয়ায় ১৮টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। আজ (বৃহস্পতিবার) ত্রাণ মন্ত্রী মহোদয়ের বৈঠকে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মাধ্যমে ত্রাণের পর্যাপ্তের চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। আশা করি পেকুয়ায় খাদ্যের সংকট থাকবেনা। এছাড়াও তালিকার মাধ্যমে খোলা আকাশের নিচে বসবাসকারী লোকজনের মাঝে টিন বরাদ্দ দেওয়া হবে।