মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (BPSC) এর সদস্য, স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব, কক্সবাজারের কৃতি সন্তান হেলালুদ্দীন আহমদ এর ৬০ তম জন্মদিন আজ মঙ্গলবার ২৩ মে। ১৯৬৩ সালের ২৩ মে কক্সবাজার সদর উপজেলার তৎকালীন বৃহত্তর ঈদগাহ ইউনিয়ন, বর্তমানে ঈদগাহ উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ফাঁহাসিয়াখালী গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

সেই ৬০ বছর আগে ভূমিষ্ট হওয়া পৃথিবীর আলো দেখা শিশুটি ক্রমান্বয়ে হয়ে উঠেন স্বপ্নবাজ আইকন হেলালুদ্দীন আহমদ। হেলালুদ্দীন আহমদ শুধু কক্সবাজারের কৃতি সন্তানের মধ্যে আবদ্ধ নেই আজ, তিনি দেশের নীতিনির্ধারণী ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম একজন।

তাঁর সারল্য, মানবিকতা, উদারতা, জনবান্ধব কর্তা, মিষ্টভাষি, সর্বোপরি পেশাগত কর্মদক্ষতা দিয়ে জয়জয়কার করে তুলেছেন নিজের যোগ্যতাকে। আর কি নেই ওনার মাঝে, নন্দন চিন্তা দিয়ে জয় করে চলেছেন পুরো বাংলা। তাই তিনি একজন কক্সবাজারবাসীর গর্বের হেলালুদ্দীন আহমদ।

হেলালুদ্দীন আহমদ একজন সাবেক উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সচিবের দায়িত্ব থেকে নির্বাচন পরিচালনা করেছেন।

কক্সবাজারের ভূমিসন্তান, এই মানুষটি কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হতে ১৯৭৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মেধার স্বাক্ষর রেখে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যায় সম্মানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন কৃতিত্বের সাথে। পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ওরিয়েন্টেশন ডিগ্রি লাভ করেন।

দেশের সবচেয়ে অভিজাত ও সিদ্ধান্তগ্রহনকারী ক্যাডার হিসাবে পরিচিত বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) প্রশাসন ক্যাডারে সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়ে যোগ দেন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে ১৯৮৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এই যোগদানের মধ্যদিয়ে শুরু হয় মেধাবী, স্বপ্নবাজের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা। ৭ম বিসিএস ১৯৮৫ ব্যাচের সফল এই কর্মকর্তা কর্মজীবনের শুরুতে মাঠ প্রশাসনে প্রথমে সহকারী কমিশনার হিসেবে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি সহকারী কমিশনার (ভূমি), প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট, সিনিয়র সহকারী কমিশনার, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট, কগনিজেন্স ম্যাজিস্ট্রেট, রাঙ্গামাটি জেলার নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি), চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এর মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে সর্বক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন।

এভাবেই শুরু হয়, হেলালুদ্দীন আহমদ এর সামনে এগিয়ে যাওয়া। মাঠ প্রশাসনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসেবে চার উপজেলা- যথাক্রমে রুমা উপজেলা, হাটহাজারী, পূর্বধলা এবং লামা উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেন। হবিগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম), চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের একান্ত সচিব, বাংলাদেশ চা বোর্ডের উপ সচিব, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাফল্যের সাথে।

হেলালুদ্দীন আহমদ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ফরিদপুর জেলায় দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশ ওভারসিস এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ২০১৩ সাল প্রথমে রাজশাহী ও পরে ২০১৬ সালে ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তৃণমূল চষে বেড়ানো এই কর্মঠ ও দৃঢ় আত্ম প্রত্যয়ী মানুষটি একদিন চলে আসেন দেশের কেন্দ্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে। ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই বাংলাদেশ সরকার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করে এবং ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সচিব মর্যাদায় তাঁকে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

২০১৯ সালের ২৬ মে তাঁকে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারী তিনি সিনিয়র সচিব হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন এবং আগের দপ্তরেই তিনি পদায়িত হন। বৈশ্বিক মহামারী করোনা সংকটে হেলালুদ্দীন আহমদ তাঁর নিজের জেলা কক্সবাজারে ত্রাণ কার্যক্রম সহ সার্বিক সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০১০ সালের ৬ই মার্চ শ্রেষ্ঠ বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন হেলালুদ্দিন আহমদ। দেশি-বিদেশি অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত এই কর্মবীর ভূমি ব্যবস্থাপনায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ একই বছরের জুলাইয়ে শ্রেষ্ঠ বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশন পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর বহুমুখী অর্জনে কক্সবাজারবাসী গর্বিত হন। তাঁর কৃতিত্ব, দায়িত্বশীলতা, পেশাদারিত্ব ও অসাধারণ যোগ্যতার কারণে সিভিল প্রশাসনে প্রশংশিত হয়েছে বার বার।

বাংলাদেশ এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি হিসাবেও সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন সাবেক সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। ঢাকাস্থ কক্সবাজার সমিতির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব নিয়ে ঢাকাতে বসবাসকারী কক্সবাজার জেলার নাগরিক ও কক্সবাজারবাসীর জন্য তাঁর সাধ্য ও সামর্থের সর্বোচ্চটা দিয়ে যাচ্ছেন সবসময়।

হেলালুদ্দীন আহমদ ২০২২ সালের ২৩ মে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হতে পিআরএল-(অবসরত্তোর ছুটি) তে যান।

হেলালুদ্দীন আহমদ-কে গত ১১ মে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (BPSC) এর সদস্য পদে আগামী ৫ বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। গত ১৭ মে হেলালুদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী’র কাছ থেকে শপথ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্য পদে সেদিন থেকে দায়িত্ব পালন করছেন।