বিশেষ প্রতিবেদক:

পাসপোর্ট করতে প্রবাসী স্ত্রীর অভিনব কৌশল যা বাংলা সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম পাড়া গ্রামে। উক্ত গ্রামে মোঃ আবদুল্লাহ নামের মালয়েশিয়া প্রবাসীর স্ত্রী পাসপোর্ট বানাতে আশ্রয় নিয়েছেন এক ভয়ংকর প্রতারনার। এই জালিয়াতি চক্রের প্রধান সানজিদা বেগম এর স্বামীর নাম মোঃ আবদুল্লাহ এবং সে প্রবাসী। তার স্বামীর বাংলাদেশী কোন বৈধ কাগজপত্র নাই। পাসপোর্ট করতে টার্গেট করেন একই এলাকার নিরীহ দোকানদার আরেক মোঃ আবদুল্লাহ কে।

একি এলাকার একই নামে হওয়ায় দোকানদার মোঃ আবদুল্লাহকে স্বামী বানিয়ে জালিয়াতি চক্র প্রথমে একটি ভুয়া কাবিননামা তৈরি করে। ভোক্তভোগী মোঃ আবদুল্লাহর পিতামাতা ও ভাইবোন সহ তার বেশ কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করে। এছাড়াও সানজিদা বেগমের পিতার নাম ইউনুছ হওয়ায় পিএমখালী মৌজার ইউনুছ আলী নামের একটি বিএস খতিয়ানও সংগ্রহ করে এই চক্র। সব কাগজপত্র দিয়ে পাসপোর্ট আবেদন করে সানজিদা বেগম। যথারীতি ফিঙ্গারও দিয়ে ফেলে পাসপোর্ট অফিসে। বাধা আসে যখন ডিএসবি হতে পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনে আসে। তদন্ত কর্মকর্তা ভেরিফিকেশন এসে কাগজপত্র মিল না থাকায় বাতিল করে দেন আবেদনটি।

উক্ত পাসপোর্ট সত্যায়নের দায়িত্বে ছিলেন কক্সবাজার ডিএসবি অফিসের কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক মোঃ দুলাল হোসেন। তিনি এটি সরেজমিনে তদন্ত করতে দায়িত্বভার দেন পুলিশ উপ-পরিদর্শক আতিকুল ইসলামকে। আতিকুল ইসলাম জানান, পাসপোর্ট আবেদনকারী মহিলা সানজিদা বেগমের আবেদনে দেওয়া তথ্যমতে ও জাতীয় পরিচয় পত্র দেওয়া লোক তার স্বামী মোঃ আবদুল্লাহ নয়। আদতে, মোঃ আবদুল্লাহকে স্বামী সাজিয়ে সব ধরনের কাগজাদি দুই নাম্বারি করে তারা কাজটি করতে চেয়েছিল। এমনকি সানজিদা বেগমের পিতা মাতার মৃত্যু সনদও কম্পিউটারে বানানো ভুয়া। আমি সকল তথ্য বিবেচনা করে রিপোর্ট নেগেটিভ দিয়ে আমার দায়িত্ব শেষ করেছি।

সানজিদা বেগমের কথিত স্বামী ভোক্তভোগী দোকানদার মোঃ আবদুল্লাহ জানান, সানজিদা বেগম নামে এই মহিলাকে সে কখনো দেখেনি, এমনকি চিনেওনা। পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনে এসে পুলিশ তার কাছে সানজিদা বেগমের তথ্য জানতে চাইলে সে রীতিমতো অবাক হয়। তার আসল স্ত্রীর নাম শাকিলা শারমিন কিন্তু পুলিশ জানান তার স্ত্রীর নাম সানজিদা বেগম। বিষয়টি তিনি বুঝতে পেরে স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বারদের অবগত করেন। এবং তিনি এই জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের নিকট অনুরোধ জানান।

এব্যাপারে জানতে পাসপোর্ট আবেদনকারী সানজিদা বেগম পাসপোর্ট আবেদন ফরমে উল্লিখিত নাম্বারে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, তার স্বামী মোঃ আবদুল্লাহ মালয়েশিয়া প্রবাসী। তার স্বামীর পিতার নাম জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন আবদুস সালাম। যদিও পাসপোর্ট আবেদন ফরমে যে আবদুল্লাহ উল্লেখ রয়েছে তার পিতার নাম সোলতান আহমদ। তার সাথে কথা শেষ না হতেই অপরপ্রান্তে মোবাইল কেড়ে নেন সানজিদা বেগমের বড় ভাই আয়ুব। তাদের পূর্ব পুরুষ কোথাকার ও কত বছর ধরে ছনখোলা তারা বসবাস করে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তারা এখানকার স্থানীয়। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এখানে বসবাস করে আসতেছে। তার পিতার নামে খতিয়ানও আছে। তার ছোট বোনের জামাই আবদুল্লাহ থাকেন মালয়েশিয়া। তার কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। তার ছোট বোন মালয়েশিয়া যেতে গেলে স্বামীর বৈধ কাগজ দরকার। সানজিদা বেগমের স্বামী মালয়েশিয়া প্রবাসী আবদুল্লাহ কথা বলেন পিএমখালী কোন এক স্কুল প্রধান শিক্ষকের সাথে। সেই প্রধান শিক্ষক কথা বলিয়ে দেন পিএমখালী ইউনিয়নের মুহসিনিয়া পাড়া গ্রামের এরশাদ নামে এক দালালের সাথে। এরশাদ নামের দালাল টার্গেট করেন ছনখোলা গ্রামের মৃত সোলতান আহমদের পুত্র দোকানদার মোঃ আবদুল্লাহ কে। তিনি অকপটে পুরা ঘটনাটি সত্যতা স্বীকার করেন ও সংবাদ প্রকাশ না করতে অনুরোধও জানান।

সানজিদা বেগমের ২০১৫ সালের ইস্যু করা জন্ম নিবন্ধন কার্ড দেখে তৎসময় পিএমখালী ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার সোলতান আহমদ এর সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি মুঠোফোনে জানান, সানজিদা বেগম নামে একটি মহিলা তার দখলীয় একটি পাহাড়ে বসবাস করেন যার স্বামী হ্নীলার বলে জানেন তিনি। তারা পূর্বের কোন পরিচয় নেই তবুও আপনি মেম্বার থাকাকালীন জন্ম নিবন্ধন কিভাবে করলো এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, আমি কোন রোহিঙ্গা কে জন্ম নিবন্ধন করতে দি নাই। আমার অজান্তে জাল জালিয়াতি করে হয়তো করেছে। বিষয়টি তদন্ত করলে জাল জালিয়াতির বিষয় উঠে আসবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। এদিকে পিএমখালী ছনখোলা গ্রামের সমাজ সেবক মোহাম্মদ আলম,মাস্টার অছিউর রহমান সহ অনেকে বলেন,সানজিদা বেগম সহ তার পুরু পরিবার রোহিঙ্গা। তারা কয়েক বছর আগে এখানে এসে বসবাস শুরু করেছে। এই জঘন্য ঘটনার সাথে যারা জড়িত সবার বিরুদ্ধে মামলা হওয়া দরকার।

পিএমখালী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার অহিদুল আলম জানান, সানজিদা বেগম ও তার পরিবারকে তিনি চিনেন ৬ বছর পূর্ব হতে। তারা সবাই জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে ৫ থেকে ৬ বছর আগে বান্দরবান হতে এসে জায়গা জমি কিনে ছনখোলা পশ্চিম পাড়া বসবাস করে আসতেছে। ভোক্তভোগী মোঃ আবদুল্লাহ অভিযোগ করেন সানজিদা বেগমের পাসপোর্ট আবেদনে তার কাগজপত্র জালিয়াতির বিষয়টি। এব্যাপারে চেয়ারম্যান সহ বসার কথা থাকলেও এখনো কোন বৈঠক হয়নি।

এব্যাপারে পিএমখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আবদুল্লাহ জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। স্থানীয় মেম্বার সহ বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। সানজিদা বেগম ও তার পরিবারকে তিনি চিনেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের আমি চিনিনা। আমি নিজেও এলাকায় থাকতামনা তাই তাদের ব্যাপারে তেমন কিছু জানিনা। মেম্বার সহ বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা থাকলেও এখনো কোন সুরাহা হয়নি।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাহাবুবুর রহমান বলেন, উক্ত রোহিঙ্গা নারীকে যারা পাসপোর্ট আবেদন করতে সহায়তা করেছে,যারা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে দিয়েছে,যারা তার পাসপার্ট ফরমে সত্যায়িত করেছে সবার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হওয়া উচিত। আর প্রয়োজন হলে আমরা রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে আইনের সহায়তা নেব। এভাবে সব কিছু ছাড় দেওয়া যায় না।