আকতার নুর

প্রসঙ্গঃ সুখহরণী সমুদ্র ও সর্বগ্রাসী মাফিয়া-চক্র!

অন্যান্য জেলার বাসিন্দারা যখন বিশ/ত্রিশ শীতের তরতাজা সবজি কেনে, তখন আমরা তা ষাট/সত্তর টাকায় কিনি। পুরো বাংলাদেশে যে পরিমাণ লইট্টা মাছ উৎপাদিত হয়, তার শতকরা আশি শতাংশ যোগান দাতা জেলার নাম কক্সবাজার। এই লইট্টা মাছ আমরা দুই টাকা কেজিতে কিনতাম একুশ শতকের শুরুতেও। এমন কী, ফ্রি ও দিয়ে দিতো জেলেরা। সেই লইট্টা মাছ এখন আমরাই দুই থেকে আড়াইশো টাকায় কিনি!

অন্যান্য যে কোন জেলায় যে পণ্যের দাম একশো টাকা (কর্পোরেট কোম্পানির পণ্য ব্যতিত) সেই পণ্য কক্সবাজারে অন্তত একশো পঞ্চাশ টাকা কেজি! হোটেল মোটেল জোনে একটি ছোট্ট দোকান নিয়ে ব্যবসা করতে চাইলেও জামানত দিতে হয় ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ লাখ টাকা। মাসে ভাড়া গুণতে হয় তত হাজার টাকা আবার!

সরকারি হিসেব মতে বাংলাদেশের সব’চে ব্যায়বহুল জীবনযাত্রার শহর কক্সবাজার! এমনকি, বাংলাদেশের মিনি ইউরোপ গুলশান বনানীর চেয়েও বেশি ব্যায়বহুল এলাকা কক্সবাজার! ভাবা যায়!

এসবের কারণ এবং অত্র এলাকার মানুষের দোষ কী জানেন?

সুন্দরী নারী ও হরিণ নিয়ে একটি দারুণ প্রবাদ আছে, “আপনা মাংসে হরিণা বৈরী!” মানে হরিণের মাংস-ই হরিণের শত্রু! হরিণের মাংসের স্বাদের কারণে যে কেউ হরিণ দেখলেই শিকার করতে চায়। তেমনী সুন্দরীর রঙ ও তার প্রধান শত্রু, যে কেউ পেতে চায়! কক্সবাজারবাসীর পাঁপ তারা এই সুন্দরতম প্রকৃতিতে জন্মেছে। তাই জন্ম-পাঁপের শোঁধ দিয়ে যাচ্ছে যেনো ওষ্ঠাগত ঘামে জীবন পার করে!

ব্রিটিশ-ওলন্ধাজ-পর্তুগিজ দস্যুর দলের মত বাইরের লোকজন এসে ছিনিমিনি খেলছে এই জেলা নিয়ে। লুটতন্ত্র-ই শুধু তাদের উদ্দেশ্য নয়, বেদখলও তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য বটে!
তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে প্রকৃতি গিলে খায়, ধ্বংসযজ্ঞ চালায়; লুটে নিয়ে যায়! আর ভাঙচুর হয় এখানকার কেটে খাওয়া মানুষের ভাসমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও!

একটা উদাহরণ দেই?
এই যে কর্ণফুলি নামের একটি শীপ কোম্পানি শীপ চালায় না? তারা ঢাকার ব্যাগ সর্বস্ব ট্যুর কোম্পানি, হোম অফিস করা ট্যুর কোম্পানি বা হোটেলের রিসিপশানে বসা বরদস্তি-ট্যুর অপারেটরদের জন্য যে কমিশন বরাদ্ধ রাখে, কক্সে বিশ ত্রিশ লাখ টাকায় অফিস করা ট্যুর কোম্পানির জন্যও সেম কমিশন রাখে! আমরা প্রতিবাদও করতে পারিনা! কারণ, তারা আমাদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে টাকা দিয়ে দালাল নিয়োগ দ্যায়! ফলশ্রুতিতে যারা এই পথ চিনিয়েছিলো, তাদের বাড়তি দুই টাকা কমিশন তো দূরের কথা, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়।

যে সেন্টমার্টিন-টেকনাফের লক্ষ লক্ষ মানুষ গত দুই দশক ধরে ট্যুরিজম নির্ভর জীবন নির্বাহ করে, সেই লক্ষ লক্ষ মানুষের পেটে স্রেফ জানোয়ারের মত লাথি মেরে বসেছে একটি চক্র! মাত্র কয়েকজনের কারণে ভুগছে লক্ষ লক্ষ পরিবার! ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পর্যটন উদ্যোক্তারা ফ্যালফ্যাল করে আরশে তাকিয়ে জিকির করছে মুক্তির জন্য! মুক্তি নেই, মুক্তি মেলা সহজ না৷ সবকিছু মাফিয়াদের দখলে যাচ্ছে, যাবে!

দশ টাকার অটো ভাড়া একশো টাকায় চড়তে হয় উদ্বাহু-ঊর্বশী সুন্দরীদের নিয়ে ঘুরতে আসা পর্যটকের চাপে! এই জেলার জেলেদের দ্বারা উৎপাদিত দেড়শো টাকার মাছ সাতশো টাকায় কিনতে হয়, রঙীন ট্যুরিস্টদের নিত্য আনাগোনার কারণে! তাই এখন আমরা অর্ধনগ্ন বা প্রায় নগ্ন নারীর বক্ষ, উরু দেখেও উষ্ণতা অনুভব করিনা৷ শুধু অন্তর্জালে ব্যথা অনুভব করি, নিদারুণ পুড়ি বেঁচে থাকার প্রার্থনায়; ঠিকে থাকার কামনায়!

আমরা এই জুলুমের কথা বলবো কাকে!?