মিছবাহ উদ্দিন:
শতাধিক তরুণ সংবাদকর্মীদের পদভারে মুখরিত প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। পরিণত হয়েছিলো এক মিলনমেলায়।
জেলার ৯ উপজেলা থেকে উদ্যমী তরুণ সংবাদ শ্রমিকদের অংশগ্রহণ দেখা যায় এই মিলনমেলায়। গত ১৭-১৮ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার জেলার অন্যতম প্রতিনিধিত্বশীল সাংবাদিক সংগঠন রিপোর্টার্স ইউনিটি কক্সবাজারের উদ্যোগে এই আয়োজন সম্পন্ন হয়।

সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পূর্ব পরিকল্পনা, আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীলতায় বিশাল এ আয়োজন সুশৃঙ্খলভাবে সমাপ্ত হয়েছে। কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় বিভিন্ন উপজেলা ও কক্সবাজার সদরের তরুণ সংবাদকর্মীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত কল্পে সকলের জন্যে বিগ বাজেট করে সাধারণ সভা, খাবার ও থাকার ব্যবস্থা, বিনোদন, জাহাজের টিকেট নিশ্চিত করণ, সকলের জন্যে একই পোশাক ব্যবস্থাসহ র্যাফেল ড্র সবকিছু নিশ্চিত করেন তারা। ফলে শতাধিক সদস্য আনন্দগণ পরিবেশে দুই দিনের ভ্রমণ সফল করতে সক্ষম হয়।

সংগঠনের অন্যান্য দায়িত্বশীল ও উপজেলা নেতৃবৃন্দরা বলছেন ব্যয়বহুল এই আয়োজন সফল করার পিছনে সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের ভুমিকা প্রশংসনীয়। পরিবারের অভিভাবকদের মত দায়িত্বশীল আচরণ, সুবিধা- অসুবিধা পর্যবেক্ষণ ভ্রমণকে আরো আনন্দময় করে তুলেছে। দুইদিন ভাল সময় পার করেছি সকলে। এমন উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্যে রিপোর্টার্স ইউনিটি কক্সবাজারের সভাপতি এইচ এম নজরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ওসমান গণির প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

দুইদিনের আনন্দ ভ্রমণে সংগঠনিক সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, র‍্যাফেল ড্র, সমুদ্র স্নানসহ বিভিন্ন টপিক নিয়ে সিডিউল ছিলো আগে থেকে। ফলে সবকিছু শেষে সফলভাবে ফিরে আসতে সক্ষম হয় সকলে। রাত জেগে থাকা তরুণ সংবাদকর্মীরা ভোর পাচটায় কক্সবাজার শহিদ মিনার চত্বরে উপস্থিত হয়েছে। দূরের উপজেলার ডিলিগেটরা আগেরদিন রাতে চলে আসে কক্সবাজার। ফলে ঠিক সাড়ে পাচটার দিকে টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় গাড়ি। ঘাটে পৌঁছার পর চা-নাস্তা, প্রাকৃতিক ডাক ইত্যাদি সেরে ৯ টার দিকে জাহাজে সিট গ্রহণ করে সকলে। পরে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় জাহাজ। দশ মিনিট মতো সিটে বসে থাকার পর জমে উঠে আড্ডা। কেউ সাগরের উত্তাল দৃশ্য দেখছে, কেউ ঘুমাচ্ছে, আর কেউ গানের আড্ডায় মগ্ন, আবার কেউ সংবাদ পরিবেশ, কেউ ছবি ধারণ করতে ব্যস্ত। একই সময় র‍্যাফেল ড্র টিকিট বিক্রির কাজটি শেষ করে দায়িত্বশীলরা। এভাবেই পৌঁছে যায় সেন্টমার্টিন ঘাটে।

পরে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে জাহাজ ছেড়ে হেটে হেটে যাত্রা শুরু হয় আবাসিক হোটেলের উদ্দ্যেশ্যে। ঘাট থেকে একদম পাশেই ছিল হোটেল ব্যবস্থা। দীর্ঘক্ষণ ক্লান্তি শেষে হোটেলে অবস্থান করে ফ্রেস হতে হতে দুপুরের খাবারের সময় হয়ে যায়। সকলে খাবার গ্রহণ করে কেউ ঘুম, আর কেউ বেরিয়ে পড়ে দর্শনীয় বিভিন্ন স্পট দেখতে। এভাবে ঘনিয়ে আসে রাত। ঘুরেফিরে হোটেলে আসতে আসতে রাতের নয়টা। শুরু হয় র‍্যাফেল ড্র অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি। ৯ টা ৪৫ মিনিটের দিকে শুরু র‍্যাফেল ড্র। সকলে পুরস্কার জিতার লোভে নাম্বার মিলাতে থাকে। এভাবে করে ৬০ পুরস্কার পেয়ে যায় র‍্যাফেল ড্র’তে অংশ নেওয়া সদস্যরা। যেখানে প্রথম পুরস্কার পায় পেকুয়া থেকে ইমরাম আর ৬০ তম পুরস্কার জিতে ঈদগাঁও উপজেলার শাহিদ মোস্তফা। তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, বেশী পুরস্কার জিতেছে সাধারণ সম্পাদক ওসমান গনি ও সভাপতি নজরুল ইসলাম। এভাবে শেষ হয় র‍্যাফেল ড্র।

পর পরই ডাক আসে রাতের খাবার রেডি। সকল সদস্য খাবার হোটেলের দিকে ছুটছে। সেখানে দাড়ানো ছিলো সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক। ফলে হৈচৈ না করেই বসে পড়ে সদস্যরা। কিছুক্ষনের মধ্যে শেষ হয় রাতের খাবার।

ঠিক ১২ টার আগে হাজির শিল্পী সদস্যরা। এবার জমে উঠে নাচ, গান-আড্ডা। গান শুরু হওয়ার সাথে সাথে সাধারণ সম্পাদক ওসমান গণি নাচ শুরু করে। ফলে সকল সদস্যদের মধ্যে বিরাজ করে উৎসাহ, উদ্দিপনায় আনন্দ উপভোগের মুহুর্ত।

ঘন্টাখানেক পরে শুরু হয় সাধারণ সভা। দেওয়া হয় সংগঠনকে আরো গতিশীল করার লক্ষে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা। একই সাথে সকল সদস্যদের ফর্ম ও সাংগঠনের নাম সম্বলিত পানির মগ তুলে দেওয়া হয়।

পরে ঘুমিয়ে পড়ে সকলে। পরদিন জুমাবার। টিশার্ট, ক্যাপ, লুঙ্গি, গামছা ও সংগঠনের পরিচয় পত্র দ্বারা আবৃত হয়ে সকাল ৮ টার দিকে আসে খাবার হোটেলে। পর পরই ফটোসেশান ও সমুদ্র স্নানে যোগ দিতে নেমে পড়ে সমুদ্র সৈকতে। বিভিন্ন ভঙ্গিতে ছবি, ভিডিও ধারণ করা হয়। অনেক সদস্য পানিতে নেমে পড়ে। গোসল ও আড্ডায় উপভোগ করে আনন্দ।

শুধু এটুকুতেই শেষ নয়, শুরু করে সেন্টমার্টিন রক্ষায় সংবাদ পরিবেশন। এসময় টিটিএন, কোহেলিয়া টিভিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে রিপোর্টার্স ইউনিটি কক্সবাজারের সভাপতি ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন(বাপা’র) সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলছেন দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনটি ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। মানা হচ্ছে না প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেয়া ১৩ নির্দেশনা। নতুন নতুন স্থাপনা নির্মাণ, যাতায়াত নিষিদ্ধ ছেড়াদ্বীপে পর্যটক যাওয়ার ফলে বিলুপ্ত হতে পারে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন। এই দ্বীপ রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

জুমার নামাজের আজান শুরু এদিকে হোটেল ছেড়ে দেওয়ার তাড়া। দ্রুত সমুদ্র ত্যাগ করতে বলা হয় সকলকে। সবাই চলে আসে হোটেলে। জিনিসপত্র গুছিয়ে প্রস্ততি গ্রণন করে। শেষ করে জুমার নামাজ। পরে দুপুরের খাবার। এভাবেই ঘনিয়ে আসে দুইদিন সেন্টমার্টিনে ভ্রমনের সময়। আবারো টিক তিনটার দিকে ঘাটে আসা শুরু করে। প্রায় সাড়ে তিনটার দিকে জাহাজে অবস্থান। ঠিক কয়েকঘন্টা পর টেকনাফে পৌছে জাহাজ। টেকনাফ থেকে গাড়ি যোগে কক্সবাজার শহরে পৌছাঁতে পৌঁছাতে প্রায় রাত দশটা। পরে যার যার গন্ত্যবে চলে যায়। তবে কিছু অসংগতি ছিলো যা খুবই নগন্য। তাই ভ্রমণ ছিলো খুবই আনন্দময়।