মোঃ রেজাউল করিম, ঈদগাঁও, কক্সবাজার:
কক্সবাজার জেলায় নবসৃষ্ট ঈদগাঁও উপজেলার উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন/ সদর দপ্তর ইসলামাবাদ ইউনিয়নে স্থাপনের যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ বৃহস্পতিবার দুপুরে এ স্থগিতাদেশ দেন। স্থগিতাদেশের খবর ঈদগাঁওতে এসে পৌছুলে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে স্বস্তি নেমে আসে।
জানা গেছে, প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি (নিকার)-র সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে হাইকোর্ট এ সিদ্ধান্ত দিয়েছে বলে জানা গেছে।

ঈদগাঁও উপজেলার প্রশাসনিক ভবনের জমি ইসলামাবাদ ইউনিয়নে অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমতি দেয়ায় স্থানীয় ৬ জন ব্যক্তি অধিগ্রহণের অনুমতি/বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে গত ৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। দুইদিন যাবত এ পিটিশনটির এর উপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। মহামান্য হাইকোর্ট
পিটিশনটি বিবেচনায় নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে রুল জারি করে বিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম স্থগিত করে আদেশ দেন। হাইকোর্ট বিভাগের মান্যবর বিচারপতি মোঃ খসরুজ্জামান এবং মোঃ মাহমুদ হাসান তালুকদার এর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। হাইকোর্ট ডিভিশন ২/১১/২১ তারিখের ঈদগাঁও উপজেলা পরিষদ গঠনের জন্য ইসলামাবাদ ইউনিয়নে জমি অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তি কেন বে-আইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানাতে রুল জারি করেন। আদালত এক অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে ২/১১/২১ তারিখের জমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম স্থগিত করেন।
শুনানিতে বাদীপক্ষের কৌশলী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত এর সর্বোচচ কর্তৃত্ব হচ্ছে নিকার এর। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঈদগাঁও ইউনিয়নের ঈদগাঁও মৌজায় উপজেলার প্রশাসনিক ভবন স্থাপনের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হলে নিকারে তা গৃহীত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে প্রশাসনের এক ব্যক্তির হস্তক্ষেপে নিকার কর্তৃক নির্দিষ্ট ম্যাপ পরিবর্তন করে অন্য ইউনিয়নে উপজেলার প্রশাসনিক ভবন তৈরি করার জন্য সরকারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ বে-আইনি ও অবৈধ।

রিটকারীরা হলেন ঈদগাঁও ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যান ছৈয়দ আলম, ঈদগাঁও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান চৌধুরী, আনোয়ারুল আজিম চৌধুরী, ঈদগাঁও ইউনিয়নের ২ নাম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার বজলুর রশিদ, কালিরছড়া নিবাসী মেম্বার মাহমুদুল হাসান মিনার ও জালালাবাদ ইউনিয়নের পালাকাটার মেম্বার আরমান উদ্দিন মোরশেদ।
বিবাদীরা হলেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, বিভাগীয় কমিশনার (চট্টগ্রাম), কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা, কক্সবাজারস্থ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী, জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সহ মোট ১৫ জন। বাদীপক্ষের শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট রিপন বাড়ৈ ও এডভোকেট সঞ্জয় মন্ডল। সরকার পক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) অরবিন্দ কুমার রায়।

উল্লেখ্য, কক্সবাজার জেলায় সদর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে নতুন “ঈদগাঁও উপজেলা” পরিষদ গঠন করতে ৫/৮/১৯ তারিখের বিভাগীয় কমিশনার (চট্টগ্রাম) এর প্রস্তাব অনুসারে ২৯/৭/২১ তারিখে নিকারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। উক্ত সিদ্ধান্ত অনুসারে যে স্থানে উপজেলার সদর দপ্তরে স্থাপনের কথা সে স্থানে না করে কোন এক প্রভাবশালী সদর দপ্তর ইসলামাবাদ ইউনিয়নে করতে ভূমি অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। এ ব্যাপারে ঈদগাঁও বাজার ভূমি ও স্থাপনা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামরুল এহেসান বাবু বলেন, ঈদগাঁও উপজেলার সদর দপ্তর ঈদগাঁও মৌজার ঈদগাঁও ইউনিয়নে হতে হবে। ঈদগাঁওবাসী দীর্ঘদিন আন্দোলন- সংগ্রাম করে ঈদগাঁওকে উপজেলা হিসেবে অনুমোদন নিয়েছেন। কারো ইশারা বা ইঙ্গিতে ঈদগাঁওবাসী তা হাতছাড়া করতে পারে না। শামিম শহিদ চৌধুরী জানান, নিকারে অনুমোদনের আগে প্রেরিত প্রস্তাবনা ও ম্যাপ মতে ঈদগাঁও মৌজার ঈদগাঁও ইউনিয়নে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লাগোয়া স্থানে উপজেলার প্রাণকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ঈদগাঁও বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, হোটেল নিউ স্টার এর স্বত্বাধিকারী আরিফুর রহিম জানান, কয়েক যুগ ধরে ঈদগাঁওর বঞ্চিত জনগণ উপজেলার জন্য আন্দোলন করে আসছেন। দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত এ উপজেলার সদর দপ্তর ঈদগাঁও ইউনিয়নের মহাসড়ক সংলগ্ন স্থানে স্থাপন করতে হবে। অন্যথায় ঈদগাঁওর আপামর জনগণ তা কখনো মেনে নেবেন না।