আবু সায়েম, কক্সবাজারঃ

সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের চূড়াফুলা ফুইজার ঝিরি নামক এলাকায় খাদ্যের সন্ধানে বন্য হাতির পাল ধান ক্ষেতে নামতে গেলে একটি বন্যহাতিকে বৈদ্যুতিক ফাঁদে ফেলে হত্যা করা হয়। হাতি হত্যার এ অপকর্ম ধামাচাপা দিতে হত্যাকন্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা হাতিটির দেহ মাটিতে পুঁতে ফেলে।
নৃশংস এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় বনবিভাগ বন্যপ্রাণী ( সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর তফসিল ০১ বিধি লঙ্ঘন অপরাধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। বন্যহাতি হত্যায় এক মাস ১২ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর ২৫ ডিসেম্বর (শুক্রবার) হত্যা মামলার ৫ নং আসামি চকরিয়া উপজেলার হারবাং এলাকার গোদার পাড়ার আঃ ছালামের পুত্র মোঃ জমিরকে আটক করেছে।এদিকে অভিযোগ উঠেছে মূল আসামীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।
বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের চূড়াফুলা ফুইজার ঝিরি নামক এলাকায় গত ১৩ নভেম্বর এই হাতি হত্যার ঘটনা ঘটে। হাতি হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বনবিভাগ বন্যপ্রাণী ( সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর তফসিল ০১ বিধি লঙ্ঘন অপরাধে ৫ জনকে আসামি করে গত ১৪ নভেম্বর চকরিয়া উপজেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে টৈটং বিট কর্মকর্তা জাবেদুল আব্বাছ চৌধুরী বাদী হয়ে একটি হাতি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
বনবিভাগ সূত্রে আরো জানা যায়, হাতি হত্যা মামলার আসামীরা হলেন, চকরিয়া উপজেলার হারবাং এলাকার মোছন সিকদার পাড়ার মৃত জব্বার আলীর পুত্র আহমদ হোছন ওরফে লুলা মিয়া, একই ইউনিয়নের মসজিদ মুড়া এলাকার মৃত শামসুল আলমের পুত্র জানে আলম। এদিকে জানে আলম (৩৫) হাতি হত্যার ২ সপ্তাহের মাথায় হাতির আক্রমণে প্রাণ হারান।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন,
ভায়াকাটা এলাকার নন্না মিয়ার পুত্র জসিম উদ্দিন, মসজিদ মুড়া এলাকার মীর কাসেম আলীর পুত্র হারুন।
এদিকে ঐ মামলার সর্বশেষ ৫ নং আসামি আঃ ছালামের পুত্র জমিরকে আটকে করে হারবাং পুলিশ ফাঁড়ি। বর্তমানে ঐ আসামি পুলিশ হেফাজতে আছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হারবাং সংরক্ষিত বনের ভেতর সমতল জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। সেই ধান রক্ষায় চারদিকে গাছের খুঁটি পুঁতে তার দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। হাতি মারার ঐ মরণ ফাঁদে পড়ে ওই তারে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার পরই তাতে জড়িয়ে মারা পড়ে বন্য হাতিটি।
মূলত শীত মৌসুমের শুরুতে বন্য হাতির বিচরণ বাড়ে ওই এলাকায়। খাবারের সন্ধানে এসে প্রায়ই ধানক্ষেতসহ ফসলি জমি নষ্ট করছিল হাতির দল। তাই হাতির উপদ্রব থেকে ধানক্ষেত রক্ষায় একটি দখলবাজ চক্র জেনারেটর দিয়ে বৈদ্যুতিক তারের ফাঁদ বসানো হয়। ওই বৈদ্যুতিক ফাঁদে পড়ে হাতি হত্যার ঘটনাটি ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানায়।
এদিকে হাতি সংরক্ষণে বন অধিদপ্তরের কড়াকড়ি নির্দেশনায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলামের নির্দেশে বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুল হকের নেতৃত্বে সাঁড়াশি অভিযান চালান।
অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে ফল বাগান রক্ষার নিমিত্তে বন্যহাতি ফাঁদে ফেলে হত্যার অপচেষ্টার দায়ে বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহিড়ায়াখালির মৃত কবির আহমদ এর পুত্র মহসিন এর বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।বন্যহাতি ও বন্য প্রাণী রক্ষায় অভিযান অব্যাহত থাকবে। হাতির করিডোরে কোন স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। বন্যহাতি ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় বনবিভাগ সজাগ ও সতর্ক রয়েছে বলে জানান বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুল হক।
বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুল হক বলেন, বন্যহাতির ৫ নং আসামি জমিরকে আটক করে হারবাং পুলিশ। কিন্তু মূল আসামিরা এখনো গ্রেফতার না হওয়ায় তিনি চকরিয়া থানা পুলিশের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
তিনি আরো বলেন, বন্যহাতি হত্যার সাথে যারা জড়িত সকল আসামি কে আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।যাতে আর কোন ব্যক্তি নৃশংস হাতি হত্যার মতো জঘন্যতম হত্যাকান্ড না ঘটায়। কোন ব্যক্তি ইচ্ছে কৃত হাতি হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকলে বন্যপ্রাণী ( সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর তফসিল অনুসারে ২ থেকে ৭ বছর কারাদন্ড এবং ১ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডের বিধান আছে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন,চকরিয়া উপজেলার হারবাং এলাকায় হাতি হত্যার ঘটনার ৫ নং আসামি জমির কে আটক করেছে পুলিশ।অভিযুক্ত আাসামি জমিরকে কোর্টে সোপর্দ করলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
ঘটনার সাথে জড়িত মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করতে তিনি সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ কে অবহিত করেন।হাতি হত্যার ঘটনায় জড়িত বাকি আসামিদের আইনের আওতায় আনা হলে আর কোন ব্যক্তি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ধান চাষ করে হাতির পাল লোকালয়ে চলে আসলে বৈদ্যুতিক ফাঁদে ফেলে নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটাবে না। তিনি অভিযুক্ত বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আটকপূর্বক জেল হাজতে প্রেরণ করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে চকরিয়া থানা পুলিশকে আহ্বান জানান।
দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সহকারী পুলিশ সুপার ( চকরিয়া সার্কেল) মোঃ তফিকুল আলম বলেন,জমির নামক ওয়ারেন্ট ভুক্ত একজন আসামি কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বনবিভাগ যেহেতু কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন সেহেতু হাতি হত্যা মামলার ঐ আসামিরা ওয়ারেন্ট ভুক্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে কোর্ট ওয়ারেন্ট ইস্যু করলে বাকি আসামিদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। শীঘ্রই বাকি মূল আসামিদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।