সরওয়ার আজম মানিক:
উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সহযোগিতার অভিযোগে এনে সংবাদ সম্মেলন করে ইউনিয়ন পরিষদের ঘোষিত ফলাফলে স্থগিত ও একটি কেন্দ্রে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে কক্সবাজারের রামুর খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল মাবুদ।
ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হক কে জেতাতে উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় তাকে হারিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
শনিবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবী জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নৌকার প্রার্থী আবদুল মাবুদ অভিযোগ করেন, নির্বাচনের দিন রাত থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত খুনিয়াপালং ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ তথা নৌকার কর্মী-সমর্থকদের ৩০ বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা চালিয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল হকের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বাহিনী। তার সাথে যোগ দিয়েছে বিএনপির নেতারা। শুধু হামলা-ভাংচুর নয়, ভয়ে আতংকে এলাকা ও বাড়িঘর ছাড়া শত শত নৌকার কর্মী।
সংবাদ সম্মেনে আবদুল মাবুদ বলেন, নির্বাচনের দিন (১১ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণের নিয়ম থাকলেও ৬নং ওয়ার্ড ধোয়াপালং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরুষ ও মহিলা কেন্দ্রে বিকেল সাড়ে ৪টার পর লাইনে কোন ভোটার ছিল না। এরপরও সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত নিয়ম বর্হিভূতভাবে প্রশাসনের সহযোগিতায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল হকের সমর্থকেরা দলে দলে এসে লাইন ছাড়াই কেন্দ্রে প্রবেশ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী চশমা প্রতীকে জাল ভোট প্রদান করে। এসময় নৌকার এজেন্টরা প্রতিবাদ করলে তাদেরকে মারধরের হুমকি দিয়ে জিম্মি করে রাখা হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থীর স্বপক্ষে থাকা ডামি প্রার্থী ঘোড়া, অটোরিক্সা, টেলিফোনসহ কয়েকটা প্রার্থীর এজেন্টরাও চশমার পক্ষে যোগ দিয়ে জাল ভোট প্রদানে সহযোগিতা করে। এত অনিয়মের পরও চশমা উক্ত কেন্দ্রে পুরুষ ও মহিলা মিলিয়ে ১৫০১ ভোট এবং নৌকা ৬২৭ ভোট প্রাপ্ত হয়।
এতে চশমার প্রার্থী আবদুল হক নিশ্চিত পরাজয় দেখে ৪ শতাধিক লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে কেন্দ্রের বাইরে ৪ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে আতংক সৃষ্টি করে প্রার্থী নিজে ও তার সাথে বিএনপি নেতা শাহেদুজ্জামান বাহাদুরসহ প্রিসাইর্ডিং অফিসারের রুমে প্রবেশ করে। এসময় জোরপূর্বক অস্ত্রের মুখে নৌকার এজেন্টদের নিকট খালি রেজাল্ট শীটে স্বাক্ষর আদায় করে এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ করা হয় উক্ত সংবাদ সম্মেলনে। পরে প্রিসাইর্ডিং অফিসারের নিকট চেয়ারম্যান-মেম্বার, মহিলা মেম্বারের ১০০ করে ব্যালট নিয়ে চশমা প্রতীকের প্রার্থী ও তার সহযোগিরা সীল দিতে থাকে। এতে নৌকার কর্মী সমর্থকেরা কেন্দ্রের বাইরে বাধা দিলে চশমার সমর্থকেরা তাদের উপর হামলা চালায়। এতে অন্তত ১৫/২০ জন লাঠির আঘাতে নৌকার কর্মী-সমর্থক আহত হয়। নৌকার প্রার্থী সেখানে গেলে তার গাড়িও ভাংচুর করা হয়।
এজেন্টদের বের করে দেয়ায় ও দরজা-জানালা বন্ধ থাকায় ছবি ধারণ করা সম্ভব হয়নি। ভোট গননার সময় নিয়ম বর্হিভূতভাবে চশমা প্রতীকের প্রার্থী ও তার সমর্থকদের প্রিসাইডির্ং অফিসারের রুমে প্রবেশ ও ব্যালটে সীল দেয়ার বিষয়টি কয়েক দফায় রামুর ইউএনও, রামু থানার ওসিকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নিজে ফোনে জানান। তারা এক ঘন্টারও বেশি সময় পর কেন্দ্রে আসেন। ইতোমধ্যে নৌকার কর্মী-সমর্থকেরা ভোট ডাকাতির প্রতিবাদে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের ধোয়াপালং রাস্তার মাথা ও ধেছুয়াপালং স্টেশনে ব্যারিকেট দেয়।
আবদুল মাবুদ অভিযোগ করেন, প্রশাসন বিলম্বে কেন্দ্রে পৌঁছায় ততক্ষনে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে প্রিসাইর্ডিং অফিসারের নিকট থেকে ১৫০১ ভোটের স্থলে ১৬০১ ভোট দেখিয়ে জোরপূর্বক স্বাক্ষর আদায় করা হয়। বিলম্বে ইউএনও ও ওসি কেন্দ্রে পৌঁছলে তখন ৫ শতাধিক লোক কেন্দ্রে হাঙ্গামায় লিপ্ত হলে নৌকার প্রার্থী আবদুল মাবুদ উক্ত কেন্দ্রের ফলাফল ও নির্বাচন স্থগিত করার দাবী জানান। ইউএনও দেখছি বলে কেন্দ্রে প্রবেশ করলেও নৌকার প্রার্থীকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নৌকার প্রার্থী আবদুল মাবুদ আরো অভিযোগ করে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নৌকা প্রতীক নিয়ে জামায়াত-বিএনপি অধ্যুষিত খুনিয়াপালং ইউনিয়নে তার নিশ্চিত বিজয়কে প্রশাসনের সহযোগিতায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল হক ও বিএনপির ইউনিয়ন সভাপতি ফরিদুল আলম, গত ইউপি নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী শাহেদুজ্জামান বাহাদুরসহ মিলে ছিনিয়ে নেয়। রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজলের যোগসাজসে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় তাকে হারিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই উক্ত ৬নং ওয়ার্ড ধোয়াপালং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল, পুনঃনির্বাচন ও খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের ঘোষিত ফলাফল স্থগিতের জন্য নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট দাবী জানান তিনি। পাশাপাশি তিনি বিষয়টি নিরপেক্ষ তদন্তের জন্যও দাবী করেন। এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতা কামনা করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবদুল মাবুদ।