এম.এ আজিজ রাসেল:
মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দুর্গাপূজা। দুর্গাদেবীর ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ এবং বিহিত পূজার মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হল।

সোমবার (১১ অক্টোবর) সকাল থেকেই মন্দিরে মন্দিরে শোনা যাচ্ছে উলুধ্বনি, শঙ্খ, কাঁসর আর ঢাকের বাদ্য, চণ্ডিপাঠে মুখরিত হয়ে ওঠে মণ্ডপ এলাকা। ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। শারদীয় দুর্গোৎসব ঘিরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। করোনার কারণে প্রায় দুই বছর আয়োজন ছিল সীমিত। তবে এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎসবের মাত্রা বেড়েছে। মণ্ডপগুলোতে তাপমাত্রা পরীক্ষা করে প্রবেশ করানো হচ্ছে সবাইকে। সামাজিক দূরত্বের জন্য রাখা হয়েছে ব্যবস্থা। মাস্ক ছাড়া কাউকে মন্ডপ এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। মঙ্গলবার মহা সপ্তমী।

গোলদিঘির পাড়স্থ ইন্দ্রসেন দূর্গাপূজা উদযাপন কমিটির সদস্য দিপু দাশ বলেন, “স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রচারণা করছি। মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। বেশি সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক রাখা হয়েছে।”

শ্রাবন্তী মূখার্জি নামে এক পূজার্থী বলেন, করোনার কারণে দুই বছর পুজোয় তেমন একটা ঘুরতে পারিনি। কিন্তু এবার পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে সানন্দে ঘুরে বেড়াবো”
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এড. রনজিত দাশ বলেন, জেলায় উৎসবমুখর পরিবেশে আগামী ১১ অক্টোবর থেকে ৩০৪টি মণ্ডপে শুরু হয়েছে বাঙালি সনাতনী সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। তাঁরমধ্যে ১৪৯টি প্রতিমা ও ১৫৫টি ঘট পূজা হবে। ১৫ অক্টোবর শুক্রবার সৈকতে বিজয়াদশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বৃহৎ এই উৎসব শেষ হবে। বিজয়া দশমীর অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমদ, জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ, ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান, পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামানসহ জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।

হিন্দু পুরাণ মতে, দুর্গাপূজার সঠিক সময় বসন্তকাল; কিন্তু বিপাকে পড়ে রামচন্দ্র, রাজা সুরথ ও বৈশ্য সমাধি সে পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শরতেই দেবীকে অসময়ে জাগিয়ে পূজা করেন। সেই থেকে অকালবোধন হওয়া সত্ত্বেও শরৎকালেই দুর্গাপূজা প্রচলন হয়ে যায়।

সনাতন ধর্ম মতে, যা কিছু দুঃখ—কষ্টের বিষয়, যেমন বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ—শোক, জ্বালা—যন্ত্রণা এসব থেকে ভক্তকে রক্ষা করেন দেবী দুর্গা। শাস্ত্রকাররা দুর্গা নামের অর্থ করেছেন ‘খের দ্বারা যাকে লাভ করা যায় তিনিই দুর্গা’। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন। মহালয়াতেই দেবী আগমনের ঘণ্টা বাজে আর বিজয়া দশমী দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানোর দিন। এই দিনটি শেষ হয় মহা—আরতির মাধ্যমে। এর মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার সব কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। এবার দেবী আসবেন ঘোড়ায় চড়ে এবং বিদায় নিবেন দোলায় চড়ে।