তোফায়েল আহমদ, কালেরকন্ঠ:
মিয়ানমার থেকে ইয়াবার সঙ্গে ক্রিস্টাল ম্যাথ বা আইস পাচার বেড়েছে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে ইয়াবা ও আইসের চালান। আবার সাগরপথে মাছ ধরার ট্রলারে করেও আসছে বিরামহীন গতিতে। বর্তমানে বেড়ে যাওয়া আইসের কারবারে রোহিঙ্গাদের বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা শিবির ঘিরেও সক্রিয় কারবারিরা।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত এক মাসেই অন্তত ২০ লাখ ইয়াবা এবং প্রায় সাত কেজি আইস উদ্ধার করা হয়েছে সীমান্তে। শুরুতে গ্রাম হিসাবে আইস আনা হলেও এখন কেজিতে পাচার হচ্ছে। পাচার হওয়া আইসের সবচেয়ে বড় বাজার ঢাকায়। সর্বশেষ শুক্রবার টেকনাফ সীমান্তে র‌্যাব-১৫-এর সদস্যরা একজন রোহিঙ্গাকে তিন কেজি আইসসহ গ্রেপ্তার করেছেন। গত সপ্তাহে টেকনাফের বিজিবি-২ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা উদ্ধার করেছেন দুই কেজি আইস। এর দুই সপ্তাহ আগে টেকনাফের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কর্মকর্তারা দুই দফায় দুই কেজি এবং ৬৫ গ্রাম আইস উদ্ধার করেন। গত এক সপ্তাহেই র‌্যাব সদস্যরা বঙ্গোপসাগরে পৃথক দুটি মাছ ধরার ট্রলার থেকে প্রায় ১০ লাখ ইয়াবাসহ ১২ পাচারকারীকে আটক করেছেন।

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ইউএনওডিসির তথ্য মতে, যে পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়, তা মোট মাদকের মাত্র ১০ শতাংশ। ৯০ শতাংশই প্রশাসনের নজর এড়িয়ে পাচার হয়ে যায়।

সীমান্তের সূত্রগুলো জানিয়েছে, পাচারকারীরা সীমান্ত এলাকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের চোখে চোখে রেখেই ইয়াবার চালান পাচার করছে। সীমান্ত এলাকায় পাচারকাজে রোহিঙ্গারা সবচেয়ে বেশি পারদর্শী হওয়ায় নানা সরকারি সংস্থার সদস্যরা এ ক্ষেত্রে রীতিমতো বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছেন। ২০১০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চার দফা করা তালিকায় বড়জোর ইয়াবা কারবারির সংখ্যা হচ্ছে দুই থেকে আড়াই হাজার জন। অথচ ২০১৭ সালের রোহিঙ্গা ঢলের পর থেকে ইয়াবা কারবারের বেশির ভাগ রোহিঙ্গাদের দখলে চলে গেছে। বেড়েছে কারবারির সংখ্যা।

ডিএনসির টেকনাফ বিশেষ জোনের সহকারী পরিচালক সিরাজুল মোস্তফা জানান, গত ১৭ সেপ্টেম্বর টেকনাফ হাসপাতাল এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় ৪০ হাজার ইয়াবার একটি চালান। আটক চালানের মামলায় আত্মসমর্পণকারী টেকনাফ লেজিরপাড়ার ইয়াবা কারবারি মোহাম্মদ ইদ্রিসের ছেলে ইব্রাহিমকেও আসামি করা হয়েছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোই এখন ইয়াবা কারবারের প্রধান ডিপোতে পরিণত হয়েছে। মিয়ানমারের পশ্চিম রাখাইনের নাফ নদ-তীরবর্তী এলাকায় রয়েছে সে দেশের ৩৭টি ইয়াবা কারখানা। আমদানি পণ্যের আড়ালে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক পাচারে টেকনাফ স্থলবন্দরটি ব্যবহার করা হচ্ছে। কুতুপালং নিবন্ধিত শিবিরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রোহিঙ্গা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের রোহিঙ্গাদের ভাষাগত সুবিধাও রয়েছে। এত দিনে এপার-ওপারের পথঘাটও আমাদের অতি চেনাজানা। আবার ইয়াবা কারখানাসংশ্লিষ্ট মিয়ানমারের লোকজনের সঙ্গে আমাদের লোকজনের যেকোনো বোঝাপড়া করতেও সহজ।’

কক্সবাজারের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক আজিম আহমেদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ইয়াবা কারবারে রোহিঙ্গারা উদ্বেগজনকভাবে জড়িয়ে পড়েছে। এমনকি সীমান্তের ইয়াবা কারবারে জড়িতদের মধ্যে শতকরা ৮০ জনই রোহিঙ্গা বলে তিনি জানান।

কক্সবাজারের সীমান্তে বিজিবির তিনটি ব্যাটালিয়নের সদস্যরা কাজ করছেন। তাঁদের মধ্যে টেকনাফের বিজিবি-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. ফয়সাল হাসান খান জানিয়েছেন, শুধু আগস্ট মাসেই পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার ইয়াবাসহ ৬৬ জন পাচারকারীকে আটক করা হয়েছে।