বিশেষ প্রতিবেদক:
বাংলাদেশের উপকূলীয় জনসাধারণের দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস ও কমিয়ে আনার মানসে এবং ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, বন্যা, নানাধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে যারা নিজেদের জীবনকে সঁপে দিয়ে দুর্যোগকালীন মানুষকে নিরাপদ রাখতে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে হরহামেশা কাজ করেন তারা Cyclone preparedness program ( CPP) ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির একজন গর্বিত সদস্য হিসেবে পরিচয় বহন করতে পারেন। এমন একজন কক্সবাজারের সফল সিপিপির সদস্য ইউসুপ নুরের সাফল্যগাথা ইতিহাসের কথা জানাবো
যিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে সিপিপির স্বেচ্ছাসেবক হয়ে যোগদান করার পর দক্ষতার মধ্যদিয়ে স্বী-কাজে অনবদ্য ভুমিকা রেখেছেন বিভিন্নতার মাঝে এবং ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ হতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সিপিপি সুপারভাইজার এবং ২০১৮ সাল থেকে উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের ৪ নাম্বার ওয়ার্ডের ৭ নং ইউনিটের টিম লিডারের দায়িত্ব পালন করছেন। এই সময়ে তিনি সিপিপির স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার জন্য দরকার যে ১৪ টি গুণাবলি:-
অবশ্যই সংশিস্নষ্ট ইউনিট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে, বয়স ১৮-৩০ বছরের মধ্যে হতে হবে, শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যুনতম ৮ম শ্রেনী পাশ হতে হবে, স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার নির্বাচনী পরীক্ষায় অবশ্যই উত্তীর্ন হতে হবে, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে, আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকতে হবে, নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, স্বেচ্ছায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে শ্রম দেয়ার সময় ও সুযোগ থাকতে হবে, স্থানীয় জনসাধারণের নিকট গ্রহনযোগ্যতা থাকতে হবে, সরকারী চাকুরি জীবি হতে পারবেন না, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে বদলীযোগ্য চাকুরী জীবি হলে স্বেচ্ছাসেবক হতে পারবেন না, বলিষ্ঠ কন্ঠস্বরের অধিকারী হতে হবে, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মূলনীতির উপর আস্থা থাকতে হবে, স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নির্ধারিত চাঁদা প্রদান করতে হবে।

তিনি এসব নীতিমালা ও নীতিকথা সুচারুভাবে নিয়মাদি মেনে চলার অভ্যাস গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করেন এবং সেটার উপর বাস্তবিকভাবে সফল হন। বিশেষ করে তিনি
মৌলিক গুণাবলির নিরীক্ষণে জাতীয়ভাবে শ্রেষ্ঠ স্বেচ্ছাসেবক নির্বাচিত হন গত বছর ১৩ অক্টোবর ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে। এমনকি তিনি বেশ-কয়েকবার উপজেলা ও ইউনিট পর্যায়ে সিপিপির শ্রেষ্ঠ স্বেচ্ছাসেবক পর্যন্ত নির্বাচিত হন।

ইউসুফ নুরের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এর একটি যৌথ কর্মসূচী। ১৯৭০ সালের নভেম্বর মাসের মহা প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অনুরোধক্রমে তৎকালীন লীগ অব রেডক্রস বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস এন্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ বাংলাদেশের উপকূলীয় জনসাধারণের জান ও মাল রক্ষার্থে ১৯৭২ সালে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসুচী প্রতিষ্ঠতা করে। এক বছর যেতে না যেতেই লীগ অব রেডক্রস এন্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ ১ লা জুলাই, ১৯৭৩ হতে মাঠ পর্যায়ে কর্মসূচী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। উপকূলীয় জনসাধারণ এবং কর্মসূচীর গুরুত্ব বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার এগিয়ে আসে এবং ১ লা জুলাই ১৯৭৩ হতে কর্মসুচীটি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক কর্মসূচীটি অনুমোদিত হয়। ফলে ১৯৭৩ সালের ১লা জুলাই হতে ‍’ ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী’ বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এর একটি যৌথ কর্মসূচী হিসেবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে Early warning Signal Dissemination, Evacuation, Sheltering, Search & Rescue, First aid & Relief and Rehabilitation এর ক্ষেত্রে সফলতার সাথে কাজ করে আসছে। সিপিপিতে ১০৩ কর্মকর্তা /কর্মচারী এবং ৭৪০২০স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে যার মধ্যে ৩৭০১০ জন মহিলা স্বেচ্ছাসেবক ৩৭০১ ইউনিট, ৩৫৫ ইউনিয়ন, ১৬ উপকূলীয় জেলার ৪১ টি উপজেলা সিপিপির কমান্ড এলাকা।

তিনি বলেন, আমি আমার বাবা মা’য়ের একদম সর্ব কনিষ্ঠতম সন্তান। পড়ালেখা যদিও আলিম পাশ করে আর করতে পারিনি তারপর ১৯৯৯ সালে আমার এলাকার দুর্যোগময় সময়ে লোকজনকে সতর্ক করার জন্য এই সিপিপিতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করি সেই থেকে পথচলা।

এরপর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ শুরু করি ২০১৭ সালের আগস্টের ২৮ তারিখ থেকে। এরপর আমার উপর দায়িত্ব আসে সিপিপি’র একজন ক্যাম্প সুপারভাইজার হিসেবে। এ ছাড়া আমি ঘূর্ণিঝড় নিয়ে মহড়া ও গান করতাম। যা আমাদের চিটাগাং এর ভাষায় গানের মাধ্যমে আমি মানুষকে সতর্ক করতাম। তাই এই কাজের দক্ষতা মূল্যায়ন করে আমি উখিয়া উপজেলা থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করি পরবর্তীতে উখিয়া উপজেলা থেকে শ্রেষ্ঠ স্বেচ্ছাসেবক নির্বাচিত হই।
বলতে গেলে সিপিপিতে কোন বেতন নিয়ে কেউ কাজ নিজের স্ব-ইচ্ছায় সেবা দিয়ে থাকি। তাই শুধুমাত্র ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের সময় আমরা কাজ করি। এপ্রিল-মে ও অক্টোবর- নভেম্বর এই চারমাস হচ্ছে মূলত ঘূর্ণিঝড়ের মাস। আমরা যেকোনো দূর্যোগের সময় কাজ করি। যেমন ভারী বৃষ্টিপাত,ভূমিকম্প, আকস্মিক আগুন। আল্লাহ আমাকে যতদিন হায়াত দেই ইনশাআল্লাহ আমি মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করবো এতেই আমি খুব বেশি আনন্দ পাই।

তিনি আরো জানান, ঘূর্ণিঝড় প্রস্ততি কর্মসূচির মাঠ পর্যায়ে প্রতিটি ইউনিটে ১০ জন পুরুষ ও ১০ জন নারীসহ মোট ২০ জন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। উক্ত স্বেচ্ছাসেবকগণ তাদের ভোটের মাধ্যমে প্রতিটি ইউনিটে একজন ইউনিট টিম লীডার ও একজন ডেপুটি ইউনিট টিম লীডার নির্বাচন করেন। প্রতিটি ইউনিটে ৫ টি বিভাগ রয়েছে যথাঃ সংকেত, আশ্রয়, উদ্ধার, প্রাথমিক চিকিৎসা ও ত্রাণ । প্রতিটি বিভাগে ৪ জন করে স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। যার মধ্যে ২ জন পুরুষ ও ২ জন নারী স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। ইউনিট টিম লীডার এই কমিটির সভাপতি এবং অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকগণ এই কমিটির সদস্য।