ছোটন কান্তি নাথঃ
এক মাস ধরে বন্য হাতির দল খাবারের সন্ধানে ছুটে চলছিল। সৃজিত বনে তারা খাবার পেয়েছে। কিন্তু এই বন পার্কের হওয়ায় তা কর্তৃপক্ষের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনা ঘটেছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে।

বন্য হাতির পাল তিন দিন ধরে পার্কের বন্য প্রাণী আবাসস্থল উন্নয়ন এবং চারণভূমি সৃজনের তিনটি প্রকল্পের দুই শ হেক্টর এলাকায় সৃজিত ফলদ ও বনজ বাগান সাবাড় করছে। খাবার ও নিরাপদ আবাস খুঁজে পাওয়ায় কোনোভাবেই তাদের সরানো যাচ্ছে না।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সীমানার কাছের পূর্ব মাইজপাড়ার বাসিন্দা গুরা মিয়ার ছেলে আবদু রহিম ও লাঠের ঘাট এলাকার আবু ছৈয়দের ছেলে আমিনুল ইসলাম মঙ্গলবার দুপুরে জানান, দুই দিন আগে গহীন জঙ্গল থেকে ১৭-১৮টি বন্য হাতি পার্কের বন্য প্রাণী আবাসস্থলের সৃজিত বাগানে ঢুকে পড়ে। যেদিন হাতিগুলো এখানে ঢুকে পড়ে, সেদিন থেকে আশপাশের চার-পাঁচটি পাড়ার মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। এসব পাড়ার লোকজন আগুনের মশালসহ বিভিন্ন কায়দায় হাতি তাড়ানোর কৌশল নিয়ে রাত জেগে পাহারা বসিয়েছে। তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে, কখন লোকালয়ে হানা দেয় এসব বন্য হাতি।

পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, সাফারি পার্কের বগাচতর মৌজা, পাগলির বিল মৌজায় সৃজিত বন্য প্রাণী আবাসস্থল উন্নয়ন ও চারণভূমি সৃজন প্রকল্পের জীববৈচিত্র্য জোনে হাতিগুলো অবস্থান করছে।

পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ওই দুই মৌজার ৫০ হেক্টর করে ১০০ হেক্টর বনভূমিতে বন্য প্রাণী আবাসস্থল উন্নয়ন এবং বগাচতর মৌজার ১০০ হেক্টরজুড়ে সৃজন করা হয় চারণভূমির বনায়ন। যেখানে রোপণ করা হয় উড়ি আম, বৈল আম, আমলকী, হরীতকী, বহেরা, চালতা, নলি, পুঁতি ও কলা প্রজাতির জাম, ঢাকী জাম, চাপালিশ, বর্তাসহ হরেক প্রজাতির ফলদ ও বনজ গাছ। কিন্তু তিন দিন ধরে বন্য হাতির পাল এখানে হানা দেওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয় এই বাগানের।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘মাসখানেক আগে চকরিয়ার মানিকপুরে যে হাতির পালটি হানা দিয়েছিল, একই পাল তিন দিন ধরে অবস্থান করছে সাফারি পার্কের জীববৈচিত্র্য জোনে। গত তিন দিনে হাতির পালটি একেবারে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে তিনটি বনায়ন প্রকল্পের ৭০ হেক্টরে সৃজিত ফলদ ও বনজ বাগান।’

তিনি জানান, পার্কের ভেতরের বন্য প্রাণী আবাসস্থল ও চারণভূমিতে হাতিগুলো যেভাবে খাবারের নিরাপদ স্থান খুঁজে পেয়েছে, এতে ধারণা করা যাচ্ছে, এক মাসেও তারা এখান থেকে যাবে না। তাই আগত পর্যটক-দর্শনার্থীদের ভ্রমণের স্থান তথা পার্কের বন্য প্রাণীর বেষ্টনী এলাকায় যাতে হাতিগুলো চলে আসতে না পারে, সে জন্য কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক এবং চট্টগ্রাম বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খাবারের সন্ধানে চকরিয়া-লামার পাহাড়ে এক মাস ধরে ছুটে চলা বন্য হাতির পাল পার্কের জীববৈচিত্র্য জোন এলাকায় নিরাপদ খাদ্যভাণ্ডার খুঁজে পেয়েছে। তাই হাতিগুলোকে তাড়ানো যাচ্ছে না। এই অবস্থায় পার্কের পর্যটক-দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’