ছোটন কান্তি নাথ :

আগামী ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার নির্বাচন হবে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ। এই নির্বাচনে কোন পেশীশক্তি, অস্ত্রবাজ, সন্ত্রাসীকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। প্রতিটি কেন্দ্রের বাইরে এবং ভেতরে কয়েকস্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি, আনসারসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য মোতায়েন থাকবে নির্বাচনী মাঠে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী এবং ভোটারদের চাওয়া অনুসারেই চকরিয়া পৌরসভার নির্বাচন হবে অতীতের যে কোন নির্বাচনের চেয়ে শতভাগ সুষ্ঠু ভোট। এজন্য সর্বমহলের আন্তরিক সহায়তা কামনা করছি।
আজ শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চকরিয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচন-২০২১ উপলক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী ও গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় উপস্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর পদের বিভিন্ন প্রার্থীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) মো. মামুনুর রশীদ উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন, চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. রাহাত উজ-জামান, ডিজিএফআই, এনএসআই এর প্রতিনিধি। সভার শুরুতে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে নির্বাচনের সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম আচরণবিধি সংক্রান্ত ডকুমেন্টারী প্রদর্শন করেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন মেয়র পদের চারপ্রার্থী যথাক্রমে সরকারি দল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের আলমগীর চৌধুরী (বর্তমান মেয়র), জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের মনোহর আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী নারিকেল গাছ প্রতীকের জিয়াবুল হক ও কম্পিউটার প্রতীকের অ্যাডভোকেট ফয়সাল উদ্দিন সিদ্দিকী। এছাড়াও সংরক্ষিত তিনটি ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর প্রার্থী, ৯টি সাধারণ ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্ধিতায় থাকা সর্বমোট ৬৭ জন প্রার্থী এবং স্থানীয় মূলধারার গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় চকরিয়া প্রেস কাবের সভাপতি এম আর মাহমুদ বলেন, ‘নির্বাচন চলাকালীন ভোটকেন্দ্র এবং বাইরে কোন ভুইফোঁড় ও নামধারী সাংবাদিক যাতে পর্যবেক্ষণ কার্ড পাওয়ার মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। এছাড়াও বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়ার পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের মাধ্যমে আগামী পৌরসভা নির্বাচনকে একটি শতভাগ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার আশা করছেন পৌরবাসী।’
সভায় বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য দেন মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীরা। অনেক প্রার্থী অভিযোগ করেন, প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী তাদের কর্মীকে হুমকি দিচ্ছেন নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে দাঁড়াতে। রাতের আঁধারে বাড়ি বাড়ি গিয়েও হুমকি দিচ্ছেন।
সভায় জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনকে শতভাগ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত ফোর্স চাওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন অতিরিক্ত ফোর্সের অনুমোদন দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করেছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের দুইদিন আগে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট প্রদানের বিষয়েও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ভোটারদের।’
সভায় জেলা পুলিশের মুখপাত্র মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে, কোন ধরণের ফাঁক-ফোকর রাখা হবে না। অবৈধ অস্ত্রধারী-সন্ত্রাসীদের ধরতে ব্লক রেইড কার্যক্রম শুরু করবে পুলিশ। তবে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কেউ বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ালে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ আরও বলেন, ‘বৈধ অস্ত্রের বিষয়ে পরিপত্র অনুযায়ী এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান জোরদার করা হবে। ১৮টি কেন্দ্রের সবগুলোকে অতি গুরুত্বপূর্ণ ধরে নিয়ে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নির্বাচন চলাকালে যে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনের যথাযথ প্রয়োগে দ্বিধাবোধ করবে না প্রশাসন।’