সিবিএন ডেস্ক:
যুদ্ধাপরাধের দায়ে ইতোমধ্যে যাদের ফাঁসি হয়েছে, তাদের অনেকের সন্তান বিদেশে আছে। বিএনপি ও জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার রাজ্জাকের সঙ্গে তারা বিদেশে বসে কোটি কোটি টাকা খরচ করে সরকারের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগ করে অপপ্রচার চালাচ্ছে। দলীয় নেতাদের এমনটা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেন, ‘টাকা বিনিয়োগ করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে, আল জাজিরা ও কিছু মানবাধিকার সংস্থাকে দিয়ে বিদেশে কুৎসা রটানো হচ্ছে।’

বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের রুদ্ধদ্বার সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এ নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে আরও বলেন- প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘গত বছর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যাইনি করোনার কারণে। এবারও যেতাম না। তবুও যাচ্ছি, কারণ একসঙ্গে অনেক দেশের সরকারপ্রধান থাকবেন। সরকারের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চলছে সেসবের জবাব দিতে যাচ্ছি।’

কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় গুরুত্ব পায় দলের সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয়। ৮ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা সাংগঠনিক কার্যক্রমের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

শাজাহান ও নাছিমের বাহাস
এসময় ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম তার বক্তব্যে মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সমস্যা নিয়ে বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একদিকে, শাজাহান ভাই আরেকদিকে। আবার জেলা আওয়ামী লীগ একদিকে তো গোলাপ ভাই (প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ) আরেক দিকে।’

মাদারীপুর জেলার পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সামনেই বাহাসে জড়ান দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

এ প্রসঙ্গে শাজাহান খান বলেন, ‘রাজৈর উপজেলায় একটি মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এস এম কামাল হোসেন বিশেষ অতিথি, শাহাবুদ্দিন ফরাজি বিশেষ অতিথি। এরা যাচ্ছে, কিন্তু আমি ওই এলাকার এমপি, আমি জানি না।’

তার কথার জবাবে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘শাজাহান খান খুনির দল করেছে। যেখানে আওয়ামী লীগ আছে সেখানে উনি ডিস্টার্ব করেন। ওনার জন্য প্রকৃত আওয়ামী লীগাররা আওয়ামী লীগ করতে পারে না। বিএনপি-জাসদ সব উনি পালেন।’

এ সময় দুই নেতাকেই থামিয়ে দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

পরে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খানকে। দলীয় সভাপতিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আমি যা করি সেটা আপনি জানেন। আমি জাসদ করতাম। আমি যখন অন্য দলে ছিলাম, তখন কি আপনার কথা শুনিনি?’

এমন বক্তব্যের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নাছিম (বাহাউদ্দিন নাছিম) আমি তো বলেছিলাম শাজাহান খানকে দলে এনো না। তুমি (বাহাউদ্দিন নাছিম) আর দাদা ভাই (ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী) মিলে শাজাহান খানকে দলে নিয়ে এলে। আমাকে বললে, শাজাহান খান জাসদে বসে আমাদের সহযোগিতা করে। তুমি এখন এত কথা বলো কেন? তোমরা মিলেমিশে দল করো না কেন?

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘৮৬ সালে আমার সঙ্গে তার (শাজাহান খান) যোগাযোগ ছিল। উনি আমাদের সহযোগিতা করেছেন। যখন আমরা সংসদ থেকে পদত্যাগ করি তখন উনি জাসদের সংসদ সদস্য ছিলেন। আমার কথায় পদত্যাগ করেছেন। ২০০১ সালের কথা ভুলে যাও কেন? তোমরা দুজন যদি মিলে যাও তা হলে আর সমস্যা হয় না।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘মাদারীপুরের কারা কারা আছো? উনি (শাজাহান খান) এখন থেকে মুরুব্বি।’ এরপর শাজাহান খানকে বলেন, ‘আপনি মুরুব্বি হয়ে যান। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করেন।’

বারবার ক্ষমা পেলে দলের বদনাম
পাবনা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীর বিরোধিতা করায় ১৮ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। বহিষ্কৃত নেতারা পদ ফিরে পেতে আবেদন করেছেন।

এদেরকে ক্ষমা করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

এ প্রসঙ্গে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. আব্দুর রহমান বলেন, ‘এভাবে শাস্তি দিয়ে পরে আবার ক্ষমা করে দিলে বদনাম হয়। পরে সমস্যা হয়। তারপরও আপনি বিবেচনা করুন। কয়দিন পর পর ক্ষমা পেয়ে যাবে এমনটা যেন না হয়।’

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের তো শাস্তি হয়েছে। ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার আছে। তারপরও এ ধরনের কাজ আর কোনও দিন করবে না এ রকম শর্তসাপেক্ষে যদি বন্ডসই দেয় তবে দল করার সুযোগ পাবে।’

শিমুল ভয়ংকর
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল একসঙ্গে বসেন না। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেন। এমন অভিযোগ করেন সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন।

এ সময় কেন্দ্রীয় নেতারা অভিযোগ করেন ‘শিমুল দানব হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় নেতারা ফোন করলে গুরুত্ব দেয় না। ডাকলে আসে না।’

দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম শফিকুল ইসলাম শিমুলের পক্ষ নিয়ে বলেন, ‘সেখানে বিএনপি জামায়াতকে শিমুলই মোকাবেলা করে। বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু শিমুলকেই প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন।’

এ সময় সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘আপনি সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করুন। আমি সব ঠিক করছি।’ এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তুমি শিমুলকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে?’

মুন্সীগঞ্জের সাংগঠনিক কার্যক্রম তুলে ধরে মির্জা আজম বলেন, ‘এখানকার সাংগঠনিক পরিস্থিতি খুবই নাজুক।’

১২ বছর সরকারে থাকলে অনেক দল হারিয়ে যায়

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘দল শক্তিশালী না হলে সরকারও শক্তিশালী হবে না। সংগঠনকে শক্তিশালী করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, শৃঙ্খলা না মানলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে আমি সবাইকে নিয়ে দল করতে চাই। ঐক্যের বিকল্প নেই।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘১২ বছর ক্ষমতায় থাকলে অনেক দল হারিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ আদর্শ নিয়ে কাজ করে বলে এখনও টিকে আছে।’