কালের কণ্ঠ :
প্রায় ১০ লাখ লেবুসহ পাঁচ হাজার গাছ কেটে দেওয়ার পর সেই ভুক্তভোগী চাষির বিরুদ্ধে গত ২৩ দিনে থানা ও আদালতে পাঁচটি মামলা করেছে কক্সবাজারের উত্তর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও)। মামলায় প্রতিবন্ধী ওই কৃষক নজির আলম (৪৩) ও তার ছেলে আরিফুল হককে আসামি করা হয়েছে। আয়ের উৎস বাগানটি হারানোর পর পাঁচ মামলা নিয়ে বিপাকে পড়েছে ভুক্তভোগী পরিবার। মামলাগুলো বিভাগীয় বন কর্মকর্তার (ডিএফও) মাধ্যমেই হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বন বিভাগের চট্টগ্রামস্থ বন সংরক্ষক (কনজারভেটর অব ফরেস্ট-সিএফ) আবদুর আউয়াল সরকার বলেন, ‘কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের জোয়ারিয়ানালা এলাকার প্রতিবন্ধী কৃষকের লেবু বাগান কেটে দেওয়ার বিষয়টি আমি দেখছি। এ ঘটনায় দোষী মাঠ পর্যায়ের বনকর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অভিযোগ উঠেছে, প্রতিবন্ধী কৃষক বনবিভাগের জোয়ারিয়ানালা বনবিটের জুমছড়ি বনাঞ্চলের ৪০ হেক্টর সেগুন বাগানে পাহারাদারের দায়িত্বে ছিলেন। কতিপয় দুর্নীতিবাজ বন কর্মকর্তা স্থানীয় হেডম্যান বশির আহমদের যোগসাজসে ২০ বছর পুরনো সেগুন বাগানটি ‘রক্ষক হিসাবে ভক্ষকের’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে উঠে পড়ে লাগে। এ কারণে প্রতিবন্ধী কৃষক নজিরকে পথের কাঁটা সরাতে তার পাওনা টাকা না দিয়েই পাহারাদারের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে একে একে তার লেবু বাগানটি কেটে ফেলা হয়। সর্বশেষ তার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা দিয়ে একেবারে ঘর ছাড়া করে দেওয়া হয় তাকে।
এসব ঘটনায় বন বিভাগের নিয়োজিত হেডম্যান (বনজায়গীরদার) বশির আহমদ ও আলী আহমদ বনকর্মীদের সহযোগিতা করে আসছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, নজির আলমকে পাহারাদারের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর থেকে দিনরাত জুমছড়ির সেগুন বাগানটি সাবাড় করা হচ্ছে। বশির আহমদ হেডম্যানের নেতৃত্বে বাগানটির কোটি কোটি টাকার সেগুন গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। গত ২৯ জুলাই নজির আলমের লেবু বাগানটি কেটে ফেলার পর থেকে সংরক্ষিত বন বাগানের সেগুন গাছ কাটার ঘটনা ঘটছে অহরহ। গত শুক্রবার এক দিনেই ৩০/৪০টি সেগুন গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।
তবে, এ ব্যাপারে বনকর্মীরা বলেছেন ভিন্ন ভিন্ন কথা। জোয়ারিয়ানালা রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ টিটু রবিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গাছ থাকলেই কাটা যাবে, এটা সত্যি। শুক্রবার সাতটি কাটা সেগুন গাছ উদ্ধার করা হয়েছে।’
অপরদিকে, বনবিট কর্মকর্তা এলমুন বাহার জানান, তিনি সরেজমিন সেগুন বাগানে গিয়ে কাটা গাছের শেকড় দেখেছেন এবং চারটি কাটা সেগুন গাছ অফিসে নিয়ে এসেছেন।
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) তৌহিদুল ইসলাম পরিত্যক্ত বনভূমিতে গড়ে তোলা লেবু বাগানটি ইতিপূর্বে কেটে ফেলার কথা স্বীকার করলেও কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ব্যাপারে কথা বলেননি। রবিবার কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে ডিএফওর কাছে মামলার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি চুপ থাকেন। তবে ওই কৃষককে তার (ডিএফও) কাছে পাঠিয়ে দিতে বার বার অনুরোধ করেন।
এসব মামলার মধ্যে বিভাগীয় কর্মকর্তা নিজেই বন আইনের চারটি মামলা কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম (আমলি আদালত ১) আদালতে রুজু করেছেন। অপরদিকে, রামু থানায় গত ৫ আগস্ট রেকর্ড করা হয়েছে অপর একটি। পাহাড়ে অনধিকার প্রবেশ করে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি ও বনকর্মীদের হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে জোয়ারিয়ানালা বনবিট কর্মকর্তা এলমুন বাহার বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। সবগুলো মামলার আসামি কৃষক নজির আলম ও তার ছেলে আরিফুল হক।
জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল শামসুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স বলেন, ‘এমন অমানবিক ঘটনা আমাদের এলাকায় নজিরবিহীন। কৃষক নজির আলম নিজে প্রতিবন্ধী এবং তার দুই ছেলের মধ্যেও একজন প্রতিবন্ধী। পাঁচ হাজার লেবু গাছের বাগানটি কেটে তাকে একদিকে পথে বসিয়ে দিয়েছে অপরদিকে তার মাথার ওপর তুলে দেওয়া হয়েছে পাঁচটি মামলাও।’
কৃষক নজির আলম বলেন, বন বিভাগের বাগান পাহারাদারের একটি টাকাও না দিয়ে উল্টো আমাকে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে। আমি সেগুন বাগান কাটতে না দেওয়াই আমার অপরাধ। এ জন্য আমার লেবু বাগানটি কেটে দেওয়া হয়েছে। এরপর মামলাও দেওয়া হয়েছে পাঁচটি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।