বাংলা ট্রিবিউন:
আফগানিস্তানে ২৭ জন বাংলাদেশি আটকা পড়েছেন। তাদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। এদের মধ্যে ব্র্যাকের কর্মী ছয় জন, একটি আফগান টেলিকম কোম্পানির সাত জন, তাবলিগে অংশ নেওয়া ছয় জন, তিন জন কয়েদি, দুই জন একটি জার্মান কোম্পানিতে কর্মরত, দুই জন আফগান স্যুয়ারেজ কোম্পানি এবং আরেকজন বেসরকারি খাতে কর্মরত বলে জানিয়েছেন উজবেকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জাহাঙ্গির আলম।

বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) রাতে তিনি এ তথ্য জানান।

রাষ্ট্রদূত মো. জাহাঙ্গির আলম টেলিফোনে বলেন, ‘এদের মধ্যে ১৮ জন কাবুলে আছেন। তাবলিগের ছয় জন পাকিস্তান সীমান্তের কাছে জালালাবাদ শহরে আছেন এবং বেসরকারি খাতে কর্মরত ব্যক্তি আছেন মাজার-ই-শরীফে। তিন জন কয়েদির একজন কাবুলে রয়েছেন এবং বাকি দুই জনের খবর এখনও জানা যায়নি।’

তিনি বলেন, ‘তাবলিগের ছয় জন লোক এখনও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি এবং আমরা ধারণা করছি তারা ভালো আছেন।’

উল্লেখ্য, আফগানিস্তানে বাংলাদেশের কোনও দূতাবাস নেই এবং উজবেকিস্তান থেকে দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হয়।

কাবুলের পরিস্থিতি:
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন সোর্সের কাছ থেকে কাবুলের পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করছি।’

বেশ কিছু আফগান মানবাধিকার ও নারী কর্মীর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে এবং তারা আমাদের জানিয়েছেন, তালেবানরা নির্যাতন বা গোলযোগ করছে, তারা এমন কোনও কিছু দেখেনি বলে রাষ্ট্রদূত জানান।

বাংলাদেশিদের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে যতটুকু খবর আছে সেটি থেকে বলা যায়, এ মুহূর্তে বড় ধরনের নিরাপত্তা সংকট হয়তো নেই।’

বাংলাদেশিদের অবস্থা:
কাবুলে যারা রয়েছেন তারা নিরাপদে আছেন, কিন্তু তারা ভীতির মধ্যে আছেন বলে তিনি জানান।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বলতে গেলে প্রায় অধিকাংশ বিদেশি কাবুল ত্যাগ করেছেন এবং তারা (বাংলাদেশিরা) কিছুটা একাকী আছেন। এছাড়া নিরাপত্তার বিষয়ে তারা উদ্বিগ্ন।’

আটকে পড়া ব্যক্তিদের অর্থকষ্ট আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একজন কয়েদি মইন আল মেজবার অর্থ সংকট ছিল, কিন্তু আমি উদ্যোগ নিয়ে আফগানিস্তানের বিভিন্ন উৎস থেকে তাকে প্রায় তিনশ’ ডলারের মতো অর্থ সংগ্রহ করে দিয়েছি।’

উজবেকিস্তানের সহায়তা:
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘জার্মান কোম্পানিতে কর্মরত দুই জন বাংলাদেশি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান যে জার্মান সরকার একটি বিশেষ বিমান পাঠাচ্ছে, যা তাসখন্দ হয়ে অন্য দেশে যাবে। যদি উজবেক সরকার ওই বাংলাদেশিদের ভিসা দেয়, তবে তারা ওই প্লেনে ভ্রমণ করতে পারবেন।’

তিনি বলেন, ‘আমি সঙ্গে সঙ্গে উজবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি ফরেন মিনিস্টারকে বিষয়টি জানালে তারা সহায়তা করতে রাজি হয়। এখন আফগানিস্তান থেকে বাংলাদেশিরা উজবেকিস্তানে পৌঁছালে ভিসা জটিলতায় পড়তে হবে না।’

বাংলাদেশিরা কবে নাগাদ আসতে পারেন:
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘নিয়মিত ফ্লাইট চালু না হলে এদের পক্ষে ফেরত আসাটা কঠিন হবে।’

তিনি বলেন, ‘ওখানে বাংলাদেশিদের সংখ্যা কম থাকার কারণে চার্টার ফ্লাইট পাঠানো ফিজিবল না। এখানে কয়েকটি উদাহরণ আছে, দুটি বা তিনটি উন্নত দেশ একসঙ্গে মিলে একটি চার্টার ফ্লাইট পাঠিয়ে তাদের লোক নিয়ে গেছে।’

ব্র্যাকের কর্মীদের ফেরার বিষয়ে ওই সংস্থা ব্যবস্থা করবে বলে আমরা জানি। বাকিদের মধ্যে যারা আমাদের কাছে যখন যে সহযোগিতা চাইছেন, আমরা সেটি করছি।’

তিনি বলেন, ‘একজন বাংলাদেশি তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের জানিয়েছে। আমরা আফগান সরকারের কাছে আগামীকাল একটি চিঠি পাঠিয়ে তাকে বিমানবন্দর পার করে দেওয়ার জন্য সহযোগিতা চাইবো, যেহেতু অস্থির পরিস্থিতির কারণে তার পক্ষে ভিসা নবায়ন করা সম্ভব হয়নি।’

এছাড়া তিন জন ব্যক্তির পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে এবং তারা যে মুহূর্তে চাইবে, তাদের আমরা ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করবো বলে তিনি জানান।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এখানে বাংলাদেশিদের স্বার্থ রক্ষার জন্য আমরা সর্বতো চেষ্টা করছি। উজবেক ও আফগান—সবার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ বজায় রেখে চলেছি।’