ডেস্ক নিউজ:
শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে যুবলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার সায়িদুল হক সুমনকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শনিবার (০৭ আগস্ট) রাতে তাকে এ অব্যাহতি দেওয়া হয়।

যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, জয় বাংলা স্লোগান নিয়ে কটাক্ষ করায় ও সংগঠন বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে তাকে আরেও আগেই সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ দেশের বাইরে থাকায় ব্যবস্থা নিতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।

ইতোমধ্যে বারিস্টার সুমনের কাছে অব্যাহতি পত্র পাঠানোর কথা জানিয়েছেন যুবলীগের উপদপ্দর সম্পাদক দেলোয়ার শাহজাদা। এছাড়া, সংগঠনের নীতি ও আদর্শ বহির্ভুত কর্মকাণ্ডের দায়ে আরেও কয়েকজনকে অব্যাহতি দেয়া হতে পারে বলেও দল সুত্রে জানা গেছে।

এর আগে গত বছরের ১৪ নভেম্বর আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন যুবলীগের ২০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেখানে যুবলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন আলোচিত আইনজীবী ও যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সুমন।

জানা গেছে, শরীয়তপুরের পালং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শোক দিবসের কর্মসূচি জয় বাংলা ও দলীয় শ্লোগান দিয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে গত শুক্রবার (৬ আগস্ট) ব্যারিস্টার সুমন তার ফেইসবুক পেইজে বিষয়টির তীব্র সমালোচনা করেন। যা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনকে যুবলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। ফলশ্রতুতিতে তাকে সংগঠন থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

লাইভে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘শেখ কামাল সাহেবের জন্মদিনে শরীয়তপুরের পালং থানার ওসি আক্তার হোসেনের আওয়ামী লীগের দলীয় স্লোগান দেয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এই জিনিসটা দেখার পর আমার কাছে মনে হয়েছে দু-একটা কথা বলা দরকার। আওয়ামী লীগের স্লোগান দেয়ার মানুষ কী এতই কম যে একজন ওসি সাহেবের এই স্লোগান দিতে হবে। আমি খেয়াল করে দেখলাম যে উনি বলছেন আবেগ থেকেই স্লোগান দিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার কথা হচ্ছে, আপনি যখন সরকারি দায়িত্বে থাকবেন কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন, তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে আবেগ দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু আপনার বিরুদ্ধে পানিশমেন্ট নিয়ে আসা উচিত। কিন্তু তিনি এখনো ওই জায়গাতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন।’

আইনজীবী সুমন বলেন, ‘আবেগ দেখানো ভালো। কিন্তু আপনি যখন আবেগ দেখাতে গিয়ে সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিলেন, তখন সরকারের কিন্তু অনেক ক্ষতি করে দিলেন। অনেক ওসি এবং পুলিশ কর্মকর্তারা দলমতের ঊর্ধ্বে দেশের সেবা করে যাচ্ছেন। এই ওসির কর্মকাণ্ডের কারণে তাদের অবস্থাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে?’

সবাইকে সতর্ক করে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘আপনারা জানেন যে সামান্য চাকরিজীবী লীগের কারণে সরকার কতো কঠোর। হেলেনা জাহাঙ্গীরকে সরকার আটক করেছে এমন ভুঁইফোঁড় চাকরিজীবী লীগ সংগঠন করায়। এখন এমন অবস্থা হইছে এ ধরনের ওসি সাহেবরা দুদিন পরে বলবেন একটি পুলিশ লীগ করা যায় কি-না।’

তিনি বলেন, ‘সতর্ক হওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় এখন। পঁচাত্তর সালে আমরা সতর্ক হতে পারিনি বলেই বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি। আপনি যদি দলকে সত্যি ভালোবাসেন, তাহলে দলের প্রতি এমন কোনো আবেগ দেখাতে পারবেন না, এমন কোনো কাজ করতে পারবেন না, যে কারণে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আপনি যদি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের হয়ে কাজ করবেন, তখন এমন কোনো আবেগ দেখাতে পারবেন না, এমন কোনো কাজ করতে পারবেন না, যে কারণে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি পুরো পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে বিব্রত করেছেন।’

ব্যারিস্টার সুমন আরও বলেন, ‘আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপির কাছে অনুরোধ করব রাষ্ট্র-দল সবগুলাকে একাকার করার জন্য এবং বিশেষত এই সরকারকে কলঙ্কিত করার জন্য, বিব্রত করার জন্য, পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে বিব্রত করার জন্য তার (ওসির) বিরুদ্ধে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অ্যাকশন নিতে হবে।’

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের ছেলে সায়েদুল হক সুমন। ২০০৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ সম্পন্ন করার পর ২০০৯ সালে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে চলে যান। সেখানে সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে বার অ্যাট ল’ করেন তিনি। ‘ফেসবুক লাইভের’ মাধ্যমের সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী ব্যাপক পরিচিতি পান।