ইফতেখার শাহজীদ, কুতুবদিয়া:

পূর্ণিমার ভরা কটাল ও লঘুচাপের প্রভাবে টানাবর্ষণ এবং কঠোর লকডাউনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার মানুষ। ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর ক্ষত শুকানোর আগে জোয়ারের আঘাত, টানাবৃষ্টি ও লকডাউনে কর্মহীন হয়ে চরম দূর্ভোগে পড়েছে নি¤œ আয়ের মানুষ। এ অবস্থায় এনজিওর ঋণের কিস্তি যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কর্মহীন মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হলেও তা প্রয়েজনের তুলনায় খুবই সামান্য।

দ্বীপের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তালিজোড়ার বেড়িবাঁধের বায়ুবিদ্যুৎ পয়েন্ট দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তাছাড়া, সপ্তাহ্ কালের টানাবৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে দ্বীপের বেশিরভাগ এলাকা। এতে পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে অর্ধলাখ মানুষ। ভেসে শত শত পুকুর ও মাছের ঘের। পঁচন ধরেছে কয়েক হাজার হেক্টর রোপা আমনে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দ্বীপের পানি নিষ্কাশণের জন্য তৈরি স্লুইস গেটগুলো বন্ধ থাকায় কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

এদিকে মা ইলিশ সংরক্ষণে সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা গত ২৩ জুলাই শেষ হলেও বৈরি আবহাওয়ার কারণে মাছ ধরতে যেতে পারেনি জেলেরা। ফলে অভাব-অনটনে দিন কাটাচ্ছে জেলেরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গত মে মাসের শেষে উপকূলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ তান্ডবে দ্বীপের সাড়ে ৭ কি.মি. বেড়িবাঁধের মারাত্মক ক্ষতি হয়। বেড়িবাধেঁর এই ভাঙ্গা অংশ মেরামতের জন্য পুনরায় ৮৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের গাফেলতির কারণে যথা সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় গত পূর্ণিমার জোয়ারের আঘাতে বায়ুবিদ্যুৎ এলাকার প্রায় ২ কি.মি. বেড়িবাঁধ আবারো বিলীন হয়ে গেছে। এ পয়েন্ট দিয়ে পানি ঢুকে আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের তেলিপাড়া, কাহারপাড়া, সাইটপাড়া, কিরনপাড়া, হায়দারপাড়া সহ ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় দেড় হাজার পরিবার পানিবন্ধি হয়ে পড়ে।

উপজেলা নির্বাহী অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ জুলাই থেকে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটি (এমআরএ) সার্কুলার লেটার নং-৬৫ মতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথভাবে স্বাস্থ্য বিধি মেনে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালু রয়েছে। গত ২৩ জুলাই লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিধি মেনে প্রায় আড়াই হাজার পরিবারকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।

কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ নুরের জামান চৌধুরী জানান, লকডাউনে নি¤œ আয়ের পরিবারগুলোকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে স্লুইস গেট গুলো জরুরীভাবে পরিদর্শন খুলে দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।