হেলাল উদ্দিন, টেকনাফ :
টেকনাফের হ্নীলায় গত ৩/৪দিনের টানা ভারীবর্ষণ, পাহাড়ি ঢল এবং নবনির্মিতব্য সীমান্ত সড়কে পর্যাপ্ত পরিমাণ সুলিশ গেইট না থাকায় সৃষ্ট বন্যায় জনজীবন লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ঝুঁকির মধ্যে থাকা পরিবারের লোকজন আশ্রয় কেন্দ্র এবং প্রতিবেশীদের নিকট আশ্রয় নিয়েছে। এই ভারীবর্ষণ, পাহাড় ধ্বসে প্রাণহানির পাশাপাশি বসত-ঘর, মৎস্যঘেঁর, গ্রামীণ জনপদের সড়ক-উপসড়ক ও বনায়নের গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনতে সরকারের উর্ধ্বতন মহলের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ভূক্তভোগীরা।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, গত ২৬জুলাই বিকাল হতে শুরু হওয়া ৩/৪দিনের টানা ভারীবর্ষণে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের ৬ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ নবনির্মিতব্য সীমান্ত সড়কে পর্যাপ্ত সুলিশ গেইট না থাকায় এই দূরাবস্থা বলে মনে করেন স্থানীয়রা। বসত-বাড়ি ডুবে যাওয়ায় প্রায় ২হাজার মানুষ ৭টি সাইক্লোন শেল্টারসহ প্রতিবেশীদের নিকট আশ্রয় গ্রহণ করে। পাহাড় ধ্বস ও গাছ পড়ে পশ্চিম পানখালী ভিলেজার পাড়ায় একই পরিবারের ৫জন ছেলে-মেয়ে নিহত ও ৬ জন আহত হয়। এছাড়া রঙ্গিখালী লামার পাড়া, চৌধুরী পাড়া, নাটমোরা পাড়া, বৃহত্তর জালিয়াপাড়া, পূর্ব ফুলের ডেইল, গুদাম পাড়া, সুলিশ পাড়া, বৃহত্তর পূর্ব সিকদার পাড়া, হোয়াকিয়া পাড়া, হোয়াব্রাং, বঙ্গবন্ধু আশ্রয়ন প্রকল্প-২, আলী আকবর পাড়া, মৌলভী বাজার লামার পাড়া, মুসলিম পাড়া, বঙ্গবন্ধু আশ্রয়ন প্রকল্প-১ সহ পুরো ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার জনবসতি পানিতে তলিয়ে যায়। এতে বেশ কিছু ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী সরকারীভাবে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে বরাদ্ধকৃত শুকনো খাবার বিভিন্ন আশ্রয়ন কেন্দ্র ও গ্রামে গ্রামে গিয়ে বিতরণ করেন।
এছাড়া বন্যার কারণে বাণিজ্যিক মাছ চাষী এডভোকেট মীর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, মৌঃ গোলাম মোস্তফা, মোহাম্মদ আলী, জালাল উদ্দিন ও সাবেক মেম্বার ছালেহ আহমদসহ অনেকের প্রায় শতাধিক একর মৎস্যঘেঁর প্লাবিত হয়ে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে বলে দাবী করছেন।
এদিকে হ্নীলা চৌধুরী পাড়া গ্রামের প্রধান সড়ক পানির স্রোতে তলিয়ে গেছে। ঊলুচামরী কোনার পাড়ার প্রধান সড়কের বিরাট অংশ পানির চাপে ছিড়ে তলিয়ে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন গ্রামের প্রধান সড়ক, উপসড়কে কার্পেটিং, এইচবিবি, ব্রিকসলিং ও মাটির কাঁচা রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হওয়ায় বিভিন্ন গ্রামে স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

অপরদিকে রঙ্গিখালী গাজীপাড়ার পশ্চিমে পাহাড় ধ্বসের কারণে মরহুম আব্দুল মজিদের পুত্র আবুল আলমের সৃজিত ফলদ (পেয়ারা) এবং বিভিন্ন প্রজাতির বনজ বনায়নের ৬/৭হাজার ফলসহ চারাগাছ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ি ফলদ বাগানকারীদের মধ্যে আরো অনেকের ব্যাপক গাছপালার ক্ষতি হয়েছে।
এই ব্যাপারে হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, চলতি বর্ষার গত কয়েক দিনের ভারীবর্ষণে পানিবন্দি মানুষের আহাজারী বেড়েছে। পাহাড় ধ্বসে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। জেলা ও উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে আমরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। এখনো পর্যন্ত প্রায় ৪ কোটি টাকার মতো ক্ষতি সাধিত হয়েছে। মৎস্যঘেঁর ও গ্রামীণ রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। যা এখনো জরিপ চলছে। প্রাকৃতিক এই দুঃসময়ে স্বচ্ছল ও বিত্তবান সবাইকে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশে দাড়ানোর আহবান জানাচ্ছি।