মিজানুর রহমান :

কুতুবদিয়ায় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। প্রতিদিনই নতুন নতুন আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। এই নিয়ে গত দেড় বছরে কুতুবদিয়ায় করোনায় আক্রান্ত ১২০ জন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সূত্রে জানা যায়, কুতুবদিয়ায় কোভিট ১৯ চিকিৎসার বেড ২৭টি রয়েছে। তার বিপরীতে চিকিৎসক আছে ১৩ জন এবং সেবিকা আছে ৭ জন। গত দেড় বছরে কুতুবদিয়ায় ১ হাজার ৬৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয় ১২০ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রামে উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত হয়। পরে কুতুবদিয়ায় লাশ দাফনের আগে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বাড়ীতে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৭ জন। সুস্থ হয়েছেন ১০৮ জন। এখন পর্যন্ত মোট ১০৯৩ জনকে কোয়ারেন্টাইনে আনা হয়েছিল। এর মধ্যে ১০৯৩ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।

গত বছরের মে মাসে উপজেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। কক্সবাজার জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সব চেয়ে কম কুতুবদিয়া। এ পর্যন্ত উপজেলায় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর মধ্যে, আলি আকবর ডেইল ইউনিয়নে ৬ জন, উত্তর ধুরুং ইউনিয়নে ৪২ জন, কৈয়ারবিল ইউনিয়নে ৪ জন, দক্ষিণ ধুরুং ইউনিয়নে ৩ জন, বড়ঘোপ ইউনিয়নে, ৪১ জন এবং লেমশীখালী ইউনিয়নে ১৮ জন।

এব্যাপারে উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির আহবায়ক ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে’র চিকিৎসক রেজাউল হাসান বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে এ অঞ্চলের মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টেষ্ট করতে আসছে না।
তাই সবাইকে সচেতন ও স্বাস্থ্য বিধি মেনেই চলতে হবে। নয়তো আগামী দিনে করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে হুশিয়ার করেন তিনি।

এ দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. মামুনুল হক বলেন,আমার দ্বীপটার ভীষণ জ্বর,ভাল নেই কুতুবদিয়া। কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত আছি প্রায় দেড় বছর। বাংলাদেশে করোনার থাবাটাও প্রায় সমসাময়িক।এই সময়ের মধ্যে কখনো এতটা অসহায় লাগেনি,এতটা দূরাবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি আমাদের।

বিগত সপ্তাহ খানেকের ডিউটি আর চেম্বার অভিজ্ঞতা- রোগী আসছে সামান্য জ্বর সর্দির ট্রীটমেন্ট নিতে।স্টেথো বসায়া দেখি লাংসভর্তি ক্রেপস।অক্সিমিটার দিয়ে দেখি স্যাচুরেশান সত্তরের ঘরে।ওনাকে যে রেফার করব,বিশ্বাসই করতে চায় না রোগীর লোকজন।

আজকে ইমার্জেন্সীতে রোগী আসল বমির কমপ্লেইন নিয়ে। জ্বরের কথা কিছুতেই বলবেনা, পরে জিজ্ঞেস করার পর বলে সাত আটদিন ছিল, দুইদিন ধরে নাই। অক্সিজেন মেপে দেখি পয়ত্রিশ।

এগুলা সব আনডায়াগনসড কেইস।পাঁচ সাতজন করোনা রোগীর যে হিসাব আমরা দেখি সেটা হল টিপ অব দ্যা আইসবার্গ। অদৃশ্য অংশের তুলনায় দৃশ্যমান অংশটা কিছুই না।

আর কিছু রোগী পাচ্ছি ইদানীং, যাদের স্যাচুরেশান ৯৪/৯৫। হয়ত দুয়েকদিনের মধ্যে তাদের স্যাচুরেশান আরো ফল করবে অথবা ইমপ্রুভও করে আসতে পারে। তাদেরকে ট্রীটমেন্ট দিয়ে বলি রিগুলার অক্সিজেন মেপে দেখবেন, কমে গেলে অবশ্যই যোগাযোগ করবেন। কিন্তু অক্সিজেন মাপার সেই সুযোগটা নেই। সারা কুতুবদিয়া ঘুরে হয়ত হাতে গোনা কয়েকটা অক্সিমিটার পাওয়া যাবে। অথচ এই মুহূর্তে থার্মোমিটারের চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ এই অক্সিমিটার।যদি আমরা হসপিটালাইজড পেশেন্টের পরিমাণ কমাতে চাই,তাহলে অক্সিমিটারকে আরো বেশি এভেইলেবল করে তুলতে হবে।ঘরে ঘরে একটি করে অক্সিমিটার প্রয়োজন এই মহামারীতে।

কভিডের সবচাইতে ভয়ংকর দিকটা হচ্ছে এই সাইলেন্ট হাপোক্সিয়া বা হ্যাপী হাইপোক্সিয়া।মানে এদিকে অক্সিজেন কমে যাচ্ছে অথচ রোগী দিব্যি স্বাভাবিক দেখাচ্ছে।

উপজেলা লেভেলে আমাদের যে অক্সিজেনের মজুদ,তা দুয়েকটা খারাপ রোগীর জন্যও অপর্যাপ্ত।সেই অক্সিজেন আবার রিফিল করে আনতেই লেগে যায় বহুদিন।এদিকে এসব রোগীর প্রয়োজন বুকের সিটিস্ক্যান,অথচ আমাদের সামান্য এক্সরের সুযোগটাও নেই।সব মিলিয়ে আসমানী সাহায্য ব্যতীত এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠার কোন সুযোগ দেখছিনা এই মুহূর্তে।

আগে অনেককে মাস্ক পড়তে বললে বলত,আমার পাড়া কিংবা আত্নীয় স্বজনদের মধ্যে কাউরে দেখলাম না করোনা নিয়ে ভুগতে।এসব করোনা লোকদেখানো বা সরকারের বানানো।এখন বলব,একটু চোখকান খোলা রাখেন,তখন দেখবেন আপনার কত পরিচিতজন যম আর জীবনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে এই করোনার কারণে।