এম.আর মাহমুদ:
প্রিয় কবি রফিক আজাদের হৃদয় গ্রাহী কবিতাটি বহু আগে পড়লেও মুখস্থ নেই। লকডাউন জনিত কারণে গৃহবন্ধী অবস্থায় সময় কাটছে। এই অলস সময়ে তাই স্মৃতির পাতা থেকে কবিতাটি পড়তে গিয়ে বড়ই ভালো লেগেছে।

তিনি ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ চলাকালীন সময় হয়তো দেশবাসীর করুণ অবস্থা দেখে কবিতাটি লিখেছিলেন। সে সময়ে কবিতাটি ছিল সময়োপযোগী এবং তিনি সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে কবিতাটি লিখে সাড়া জাগিয়েছিলেন। করোনাজনিত কারণে লকডাউন চলাকালীন সময় নতুন কোন কবি এমন একটি কবিতা লিখে সাড়া জাগাতে পেরেছে বলে মনে হয় না।

১৯৭৪ সালে আমি পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। তবে দুর্ভিক্ষ চলাকালীন সময় অনাহারী মানুষের করুণ আর্তনাদ দেখেছি। নিজেও একবেলা আটার রুটি ভক্ষণ করে ক্ষুধা নিবারন করেছি। তবে কৃষক পরিবারের সন্তান হিসেবে বাপের গোলায় কিছু ধান মওজুদ ছিল বলে তেমন কষ্ট পায়নি।

তবে প্রতিবেশীদের করুণ অবস্থা স্বচক্ষে দেখেছি। গ্রাম পর্যায়ে লঙ্ঘরখানা দেখেছি। রেশনের দোকানে ২ সের (কেজি) আটার জন্য সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি ক্ষুধার্ত মানুষগুলোকে। তারপরও অন্তত কক্সবাজার এলাকার মানুষ অনাহারে মারা যাওয়ার নজির তেমন একটা নেই।

করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে সরকার অনেকটা বাধ্য হয়ে রোগ থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য লকডাউনের মত কঠিন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। তবে মানুষের জীবন রক্ষার জন্য সরকার লকডাউন দিলেও জীবিকার ব্যাপারে কোন উদ্যোগ এখনও পর্যন্ত গ্রহণ করেছে বলে মনে হয় না। যে কারণে লকডাউন চলাকালে হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাটে কর্মহীন মানুষের ছুটাছুটি দেখলে মনে হয় যেন সবই আগের মত আছে।

এদিকে সারাদেশে করোনা প্রাদুর্ভাব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দেখে মনে হয় করোনা লাগামহীন ঘোড়ার মত ধাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু ক্ষুধার্ত মানুষ পরিবার পরিজনের জীবিকার স্বার্থে নেমে পড়েছে জলে-স্থলে। গেল বছর করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সরকার লকডাউন দেয়া শুরু করে। তখন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা সাধ্যমতো ত্রাণ সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। সরকারি ভাবে নগদ টাকাও বিতরণ করেছে। কিন্তু চলতি বছরের লকডাউনে হতদরিদ্র, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা কোন ধরণের সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছে না। ফলে একদিকে করোনা আক্রান্তের ভয় অন্য দিকে ক্ষুধার জ্বালা যেন কেহ কারে নাহি ছাড়ে অবস্থা।

মধ্যবিত্তদের অবস্থা সবচাইতে মারাত্মক। তাদের অবস্থা সাহিত্যের ভাষায় বলতে হয় ‘বুক ফাঁটে তো মুখ ফাঁটে না’। সংবাদকর্মী ছোট ভাই মনছুর রানা আক্ষেপ করে বলতে শোনেছি, পোশাকের কারণে আমরা বিপদে পড়েছি। শত সমস্যায় থাকলেও কহনও যাচ্ছে না, সহনও যাচ্ছে না।

আর ক’দিন পরেই কোরবানীর ঈদ (ঈদুল-উল-আযহা)। সঙ্গতিসম্পন্নরা সাধ্যমতে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানী দেবে এবং নিয়ম মোতাবেক পাড়া প্রতিবেশীদের মাঝে কিছু গোস্ত বিলি-বন্টন করবে। সে জন্য সরকার ঘোষণা দিয়েছেন, এক কোটি পরিবারের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করবে। সে ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিরা স্বচ্ছতার সাথে চাল বিতরণ না করলে হয়তো অনেক হতদরিদ্র মানুষ সরকারি পাওনা থেকে বঞ্চিত হবে।

আবার পাওয়ার উপযুক্ত নয় এমন অনেক মানুষও ত্রাণের চাল পেয়ে থাকে। যা দেখলে বলতে হয় “তেলা মাথায় তেল ঢাল, ন্যাড়া মাথায় বেল মার”।

বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের অবস্থা এমনই। যাক! আর কথা না বাড়িয়ে কবি রফিক আজাদের কবিতার ভাষায় বলতে হয় ‘ভাত দে হারাম জাদা, তা না হলে মানচিত্র খাব!’।