এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া:

কক্সবাজারের চকরিয়ায় দীর্ঘ দুইযুগ সময় ধরে পাহাড়ের চালুতে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি নির্মাণপুর্বক বসবাস করছে অন্তত ১০ হাজার পরিবার। প্রতিবছর বর্ষামৌসুমে ভারী বর্ষণে মাটি নরম হয়ে একাধিক স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে এসব পাহাড়ি এলাকায় যে কোন মুর্হুতে পাহাড় ধসে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে বলেও দাবি করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ১ জুলাই ভোরে চকরিয়া উপজেলার হারবাং মইস্যার ঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসে রাবেয়া খাতুন নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।

নিহত রাবেয়া খাতুন পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বকশির ঘোনা এলাকার ফিরোজ আহমদের স্ত্রী। তাঁরা প্রায় একযুগ আগে পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী থেকে চকরিয়া উপজেলার হারবাং মইস্যার ঘোনা এলাকায় এসে বসতি নির্মাণপুর্বক নিয়ে স্বপরিবারে বসবাস করতো। সচেতন মহলের অভিমত, সরকার এসব পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে না নিলে যে কোন মুহূর্তে বড় ধরণের বিপর্যয় ঘটতে পারে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের মছন্যাকাটা, বানিয়ারছয়া, মাহমুদনগর, পাহাড়তলী, ভিলেজার পাড়া, হারবাং ইউনিয়নের মুসলিমপাড়া, শান্তিনগর, মইস্যার ঘোনা, ফইজ্যার ডেবা, লম্বা ঘোনা, কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ইসলামনগর, সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের উত্তর মানিকপুর, খুটাখালী ইউনিয়নের মেধাকচ্ছপিয়া, নয়াপাড়া, কাকারা ইউনিয়নের বার আউলিয়া নগর, শাহ ওমরনগর, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের নয়াপাড়া, ছগিরশাহ কাটা, ছায়েরা খালী, ডুলাহাজারা ও বমু বিলছড়ি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায় অন্তত ১০ হাজার পরিবার চরম ঝুঁকিতে বসবাস করছে। প্রায় দুইযুগ ধরে এসব পরিবার পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করছেন বলে দাবি করেন জনপ্রতিনিধিরা।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফাসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো.মাজহারুল ইসলাম বলেন, চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জে তিন হাজার ৩৪৫টি ও ফুলছড়ি রেঞ্জে তিন হাজার ৪৭১টি পরিবারসহ বন বিভাগের ছয়টি রেঞ্জে অন্তত ১২ হাজার পরিবার বসবাস করছে। তবে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে অন্তত দুই হাজার পরিবার। পাহাড়ধসের ঝুঁকি থেকে এসব পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে প্রশাসন উদ্যোগ নিলে বন বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।

এদিকে, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের চুনতি রেঞ্জের আওতাধীন হারবাং ও বরইতলী এলাকায় আরও এক হাজার পরিবারের তিন হাজার মানুষ চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পাহাড়ের ঢালুতে বসবাস করছে।

চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত বেশির ভাগ লোক দরিদ্র শ্রেণির। এরা অভাব-অনটনে জর্জরিত হয়ে ও নদীভাঙনের শিকার হয়ে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে বসবাস করছে।

পরিবেশ সাংবাদিক ফোরাম চকরিয়া উপজেলা সভাপতি এমআর মাহমুদ বলেন, গেল দুইবছরে উপজেলার বিভিন্নস্থানে বিপুল পাহাড়কাটা হয়েছে। এই অবস্থায় লাগাতার ভারী বর্ষণে কাটা পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে যায়। এতে একসময় পাহাড় ধসে পড়ে।

তিনি বলেন, এখন বর্ষামৌসুম সন্নিকটে। তাই ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।’ এই অবস্থায় পাহাড়ে বসবাসরত জনগনকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি পাহাড় নিধনকারীদের বিরুদ্ধেও আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ‘উপজেলার যেসব ইউনিয়নগুলোতে পাহাড়ি এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে মানুষ বসবাস করছে তাদেরকে স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছে। এরপরেও যেসব এলাকা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ তা শনাক্ত করে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, একইসঙ্গে যারা পাহাড় নিধন করে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।