এম.এ আজিজ রাসেল :
মহামারি করোনা ভাইরাস (কোভিড—১৯) এর প্রভাবে জীবনের সবচেয়ে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ। বিশেষ করে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অবস্থা সবচেয়ে বেশি নাজুক। গত কয়েক মাস কোনো আয় রোজগার না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে অনেকেই।
এ অবস্থায় তাদের জন্য মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে এনজিওর ঋণের কিস্তি। এই দুঃসময়েও এনজিওগুলো কিস্তির টাকার জন্য চাপাচাপি শুরু করছে।

জেলার বিভিন্ন স্থানে এনজিও কর্মীরা লকডাউনের মধ্যে ও কিস্তি আদায়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এসব এনজিও কর্মীদের কারণে নাজেহাল হয়ে পড়েছে নিম্ন আয়ের ঋণগ্রহীতারা। ঋণের কিস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছে তারা।

এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ইজিবাইক, অটো রিকশা, সিএনজি, থ্রি—হুইলার, ভ্যান, আলমসাধুসহ কিনে চালান অনেকে। এছাড়া ঋণগ্রহীতারা অধিকাংশ ছোটখাট ব্যবসায়ী। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে চলমান লকডাউনে তাদের আয়ের উৎস বন্ধ থাকলেও বন্ধ নেই এনজিওর কিস্তি আদায়।

কক্সবাজার জেলার পৌর শহর, সদর উপজেলার, খুরুশকুল, চৌফলদন্ডী, ভারুয়াখালী, ঝিলংজা, পিএমখালী, ঈদগাহ, ইসলামাবাদ, জালালাবাদ, পোকখালীসহ জেলার প্রতিটি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, এসময় আমাদের খাবার জোগাড় করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। তারপর এনজিওকর্মীরা কিস্তি আদায় করছে। ঋণের বোঝা মাথা নিয়ে কাজের সন্ধানে বের হলোও তেমন কোন ইনকাম করার সুযোগ নেই। লকডাউনে না নিজের পরিবারের ভরণপোষণ করবো না কিস্তির ঋণ পরিশোধ করবো। বাঁচার মরার লড়াই আমাদের জীবন।

কক্সবাজার শহরের বৈদ্যঘোনা এলাকার সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি একটি ইজিবাইক কিনেছে লোন নিয়ে। এখন রাস্তায় গাড়ি চালানো নিষেধ। কিন্তু এনজিওকর্মীরা এসে ঋণের টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে টাকা না দিলে ইজিবাইক নিয়ে যাবে।

কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল এলাকার বাসিন্দা আয়শা বেগম জানান, ছোটখাটো ব্যবসা করার জন্য লোন নিয়ে ছিলাম,লকডাউন কারণে সেটা বন্ধ হয়ে আছে। এই লকডাউনের মধ্যে খেতেও পারছি না। তারপর আবার কিস্তির জন্য চাপ। এটা অমানবিক। আমাদের উপর জুলুম করার হচ্ছে। সরকারের উচিত এটা কম হলেও ৬ মাসের জন্য এনজিওর কিস্তি আদায় বন্ধ করে রাখা।

শহরের বার্মিজ মার্কেটের রাখাইন ব্যবসায়ীরা জানান, পর্যটক ঘিরেই তাদের ব্যবসা। কিন্তু পর্যটন সেক্টর বন্ধ থাকায় করুণ অবস্থা তাদের। দোকান বন্ধ তাই নেই আয়—রোজগার। পরিবার—পরিজন নিয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। এই অবস্থায়ও এনজিওগুলো কিস্তির টাকার জন্য প্রতিনিয়ত চাপ দিয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় কিস্তির জন্যও হুমকী দেওয়া হচ্ছে। আমরা বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করেছি।

কক্সবাজার পৌরসভার কলাতলীর এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবু তাহের জানান, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতেছি কলাতলীতে। তার মাঝে দীর্ঘদিন ধরে সব কিছু খুলা থাকলেও বন্ধ ছিলো আমাদের পর্যটন স্পট ও হোটেল মোটেলগুলো।
অনেক আন্দোলন করে হোটেল মোটেল খোলার ঠিক ৪ দিন পরেই আবারো লকডাউনের শিকার হলাম।
করোনা পরিস্থিতি শুরুতে বিভিন্ন ধারদেনা ও এনজিও থেকে লোন নিয়ে পরিবারের খরচ জুগিয়েছি এখন আর কিভাবে সম্ভব। প্রতিনিয়ত কিস্তির আদায়ের জন্য চাপ দিচ্ছে তারা। তাদের কারণে মাঝে মাঝে পরিবার পরিজন ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যাওয়া ছাড়া আর উপায় খুঁজে পাই না। সরকারের তরফ থেকে লকডাউনের সময়ে ঋণ আদায় বন্ধ করলে আমরা বাঁচবো।

গত সোমবার থেকে সারাদেশে করাকরি লকডাউন বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে সরকার। খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষদের কি পরিস্থিতি হচ্ছে এ লকডাউনের এর মধ্যে সেটা খুব সহজেই অনুমান করা গেলেও এনজিওকর্মীরা এর টাকা আদায় করতে ব্যস্ত।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠানের ঋণ আদায়কারী কর্মচারী জানান, আমরাও চাকরি করি। প্রতিষ্ঠান থেকে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে টাকা আদায়ের জন্য। ঠিকমতো কিস্তির টাকা আদায় করে অফিসে জমা দিতে না পারলে আমারও বেতন বন্ধ। চাকরিও হারাতে হতে পারে।

এ নিয়ে জেলা প্রশাসকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এনজিও কিস্তি আদায়ের বিষয় এবার তেমন কোনো নির্দেশনা পাইনি। তারপরেও মানবিক কারণে জবরদস্তি করে আদায় না করা সমীচিন। যাদের দিতে সামর্থ্য রয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। জবরদস্তি করে আদায় করলে প্রয়োজনীয় আইনানুক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।