সিবিএন ডেস্ক:
ব্যয় বাড়ছে মাতারবাড়ী-মদুনাঘাট বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন প্রকল্প। সেই সঙ্গে মেয়াদ ও বাড়ছে এক বছর ৬ মাস। এ জন্য মাতারবাড়ী আল্ট্র সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ারড পাওয়ার শীর্ষক প্রকল্পটির ( পিজিসিবি অংশ: মাতারবাড়ী-মদুনাঘাট ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ) প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

প্রকল্পটির আওতায় মাতারবাড়ীতে বাস্তবায়নাদীন বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ইভাকুয়েশনের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ এবং মাতারবাড়ী-মদুনাঘাটের মধ্যে ৯৪ দশমিক ৬০ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। এটি এখন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় উপস্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। অনুমোদন প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ শেষ করবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি)।

সূত্র জানায়, শুরুতে প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল এক হাজার ৯০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সেখান হতে ২৩২ কোটি ২৩ লাখ টাকা বাড়িয়ে প্রথম সংশোধনীতে প্রস্তাব করা হয়েছে ১ হাজার ৩২৩ কোটি ৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহববিলের ৩০৯ কোটি ৬ লাখ টাকা, বৈদেশিক সহায়তা হতে ৯৪৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারি সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৬৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি ৬৯ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি ৭৬ শতাংশ।

এদিকে প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত মেয়াদ ছিল ২০১৭ সালের ২০২০ সালের ডিসেম্বও পর্যন্ত। এখন সেটি বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা এবং কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ১লা জুলাই হলি আর্টিজেন দুর্ঘটনা ইস্যুতে জাইকা নিয়োজিত কনসালটেন্ট টেপসকো, জাপান বিড ডকুমেন্ট ও মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রস্তুত ও দাখিলে দেরি হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া একই কারণে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) মেয়াদের শেষে প্রকল্প বাস্তবায়ন চুক্তি সম্পাদন হওয়ায় ডিপিপি মেয়াদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে স্থানীয় ও বৈদেশিক মুদ্রায় চুক্তি সর্বসাকুল্যে ডিপিপি মূল্য থেকে বেশি হওয়ায় ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের সংশোধিত লাইন রুট ২ দশমিক ৬ কিলোমিটার বৃদ্ধি এবং বর্ধিত সঞ্চালন লাইন নির্মাণে ৩৪টি অতিরিক্ত টাওয়ারসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক কন্ডাক্ট, ইন্সুলেটর, হার্ডওয়্যার ফিটিংস ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও বৈদ্যুতিক স্থাপনা অংশগুলো ২২৪ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। সিডি ভ্যাট অংশে ১০৩ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রাইজ কনটেজেন্সি ও ফিজিক্যাল কন্টিজেন্সি অংশগুলোয় ৭৩ কোটি ২৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা হ্রাস পেয়েছে। পরিবহন ব্যয় ও বীমা অংশগুলো সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, মুদ্রা বিনিময় হারের পরিবর্তন হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রকল্প অনুমোদনের সময় ১ ডলার সমান ছিল ৭৭ টাকা ৫০ পয়সা। এখন প্রথম সংশোধনীতে এতে ধরা হয়েছে এক ডলার সমান ৮৪ টাকা ৮৭ পয়সা। এ সব কারণে প্রকল্পটি সংশোধন করতে হচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) গিয়ে শরিফা খান বলেন, কক্সবাজার জেলার মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইভাকুয়েশনের জন্য প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন সঞ্চালন লাইনের রুট পরিবর্তন এবং প্রকৃত দরের ভিত্তিতে অংশ ভিত্তিক পরিমাণ ও ব্যয় পুনঃপ্রাক্কলন করে এক বছর ৬ মাস বৃদ্ধি করে প্রথম সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়। তাই একনেকের বিবেচনার জন্য উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। -সারাবাংলা