সৈকতে যেতে পারবেন না কেউ, বন্ধ থাকবে হোটেল-মোটেল

প্রকাশ: ২৪ মে, ২০২১ ০৮:১১

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


কক্সবাজার সৈকতে পর্যটক নেই। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন কাঠের রেস্তোরাঁ -প্রথম আলো

প্রথম আলো:
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে লোকসমাগম নিষিদ্ধ এবং হোটেল–মোটেল বন্ধ থাকবে। রোববার রাতে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির ভার্চ্যুয়াল সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। গণপরিবহন চালু ও শর্ত সাপেক্ষে হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়ে ৩০ মে পর্যন্ত চলমান বিধিনিষেধ বাড়ানোর ঘোষণায় আশার আলো দেখেছিলেন এখানকার পর্যটন ব্যবসায় জড়িত ব্যক্তিরা। তবে কমিটির এমন সিদ্ধান্তে তাঁরা এখন হতাশ।

কক্সবাজারের ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার (এসপি) মো. জিললুর রহমান বলেন, করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সৈকতে পর্যটকসহ লোকসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই সময়ে সৈকতে যেন কেউ নামতে না পারেন, সে জন্য পুলিশের পাহারা বসানো আছে। বিনোদনকেন্দ্রগুলোও বন্ধ আছে।

আজ সোমবার বেলা দেড়টার দিকে সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে নেমে দেখা গেল, কেউ নেই। পুরো সৈকত ফাঁকা। সৈকতের পাশে কয়েকটি কাঠের তৈরি রেস্তোরাঁ খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কর্মচারীরা রেস্তোরাঁ পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করছেন। একটি রেস্তোরাঁর কর্মচারী ইব্রাহিম আজাদ বললেন, গত ১ এপ্রিল থেকে রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ। এতে কর্মচারীরা বেকার বসে আছেন।

সৈকতের সুগন্ধা, সিগাল, লাবণী ও শৈবাল পয়েন্টও ফাঁকা পড়ে আছে। সৈকতে পর্যটকদের বসার জন্য তৈরি দুই হাজারের বেশি কাঠের চেয়ার-ছাতা (কিটকট) ১ এপ্রিল থেকেই বালুচরে স্তূপ করে ফেলে রাখা হয়েছে। এগুলো রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কিটকট মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুবুর রহমান।

সকাল থেকে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট ও মোড়ে পাহারা বসিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ। লোকজনের পাশাপাশি তারা যানবাহন চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করছে।

তবে দুপুরের পর থেকে শহরের পরিবহন প্রতিষ্ঠানের টিকিট কাউন্টারগুলো খুলেছে। কিন্তু টিকিট বিক্রি হচ্ছে কম। দীর্ঘ দেড় মাস পর কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের পথে কয়েকটি বাস ছেড়েছে। বাসের অর্ধেক আসন খালি রাখা হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ গণপরিবহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত গ্রিন লাইন পরিবহনের পরিচালক সুলতান আহমদ বলেন, ‘সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কক্সবাজার থেকে কোনো বাস ঢাকায় ছেড়ে যায়নি। তবে সন্ধ্যার পর বাস ছাড়বে। টিকিট বিক্রি হচ্ছে কম।’

শ্যামলী, হানিফ, এনা, এস আলম, সৌদিয়া পরিবহনেরও একই অবস্থা। সন্ধ্যা ও রাতে ১০ থেকে ১৫টি বাস ঢাকায় ছাড়তে পারে। তবে বিকেল পর্যন্ত ঢাকা থেকে কোনো বাস কক্সবাজার পৌঁছেনি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) এস এম রাকিবুর রাজা বলেন, দূরপাল্লার বাসে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না, তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে ট্রাফিক পুলিশ। নিয়মের বাইরে যাত্রী তুললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দুপুর থেকে সৈকত এলাকার অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা রাখা হলেও বেচাবিক্রি তেমন নেই। এই রেস্তোরাঁগুলো পযটকনির্ভর। কক্সবাজার কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, সর্বশেষ জারি করা সরকারি প্রজ্ঞাপনে গণপরিবহন চালুর পাশাপাশি হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোও সীমিত আকারে খোলা রাখার নির্দেশনা আছে। কিন্তু সৈকতে পর্যটকের সমাগম নিষিদ্ধ থাকায় হোটেল–রেস্তোরাঁগুলো খোলা রেখেও লাভ হচ্ছে না। সকাল থেকে কোনো হোটেলে কক্ষ ভাড়া দেওয়া হয়নি। তাঁর দাবি, গত ১ এপ্রিল থেকে শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল–মোটেল খালি পড়ে থাকায় শত কোটি টাকা লোকসান গুনছেন মালিক কর্তৃপক্ষ। অনেকে ব্যাংকঋণ নিয়ে হোটেল ব্যবসা চালু রেখেছেন। এখন ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা দূরের কথা, হোটেলের বিদ্যুৎ বিল ও কর্মচারীদের বেতন–ভাতা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। সংকট নিরসনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে হলেও সৈকতে পর্যটকদের আসার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, ১ এপ্রিল থেকে সৈকতে পর্যটক সমাগম নিষিদ্ধ করে জেলা প্রশাসন। ঘোষণার আগে মার্চে বেতন–ভাতা পরিশোধ না করেই অন্তত ৩০ হাজার কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছেন হোটেলমালিকেরা। এখনো অধিকাংশ কর্মচারীর মার্চ ও এপ্রিল মাসের বেতন–ভাতা পরিশোধ করা হয়নি। বেশির ভাগ কর্মচারী মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। সরকারি প্রজ্ঞাপনে হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা রাখার ঘোষণায় কর্মচারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরলেও এখন হতাশ সবাই।

এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আমিন আল পারভেজ বলেন, করোনা সংক্রমণের দিক থেকে কক্সবাজার এমনিতে ঝুঁকিতে আছে। এ অবস্থায় সৈকতে লোকসমাগম ঘটলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। সবকিছু আগের মতই চলবে, হোটেল–মোটেল বন্ধ থাকবে। তবে রেস্তোরাঁগুলো শর্ত সাপেক্ষে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখা যাবে।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান বলেন, জেলায় এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ১০৮ জন। এর মধ্যে রোহিঙ্গা ১৩ জন।

সংক্রমণ রোধে ২৩ মে থেকে ৩০ মে পর্যন্ত উখিয়া উপজেলাকে লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে। আগের দিন লকডাউন দেওয়া হয় টেকনাফ উপজেলাতেও। একই সময় উখিয়ার চারটি, টেকনাফের একটিসহ পাঁচটি রোহিঙ্গা শিবিরে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। আরও ২৯টি রোহিঙ্গা শিবিরে সেবা কার্যক্রম সীমিত করা হয়।