সিবিএন ডেস্ক:
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে গতকাল মঙ্গলবার তার পরিবারের সূত্র জানা গেছে।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে সূত্রটি জানিয়েছে, তার ফুসফুস থেকে তরল পদার্থ অপসারণ করা হয়েছে এবং এতে ক্যানসারের কোনো উপাদান (ম্যালিগনেন্সি) পাওয়া যায়নি।

‘অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করার পর তার অক্সিজেনের স্যাচুরেশন স্তরটি ৯০ শতাংশের নিচে নেমে যায়। তবে আবার অক্সিজেন দেওয়ার পর তা ৯৯ শতাংশে চলে আসে… এটি (স্যাচুরেশন স্তর) ওঠানামা করছে,’ বলে সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানিয়েছে।

কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত রেমডেসিভির ইনজেকশন দেওয়ার পর খালেদা জিয়ার রক্তে সুগারের পরিমাণ প্রতি লিটারে ১৪ থেকে ১৮ মিলিমোলের মধ্যে ওঠানামা করছে। এত কিছুর পরও তার মানসিক অবস্থা ভালো আছে বলেও সূত্র জানিয়েছে।

উন্নত চিকিৎসার জন্য তার পরিবারের সদস্যরা বিএনপি চেয়ারপারসনকে যুক্তরাজ্য বা সিঙ্গাপুর বা থাইল্যান্ডে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তবে এ বিষয়ে কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে বলে সূত্রটি উল্লেখ করেছে।

বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে দলের নেতাকর্মীরা সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু, তারা জানিয়েছেন যে, বিষয়টির সঙ্গে আইনি প্রক্রিয়া জড়িত থাকায় এই সিদ্ধান্ত আদালত থেকে আসতে হবে।

এর আগে গতকাল খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি তদারকি করার জন্য গঠিত ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড তার শারীরিক অবস্থার পর্যবেক্ষণ করেছে।

বোর্ডের সদস্য ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, তারা তার শারীরিক অবস্থার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কিছুটা উন্নতি দেখতে পেয়েছেন।

বিস্তারিত কিছু না বলে গতকাল রাতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে নতুন কিছু ওষুধ দেয়া হয়েছে।’

গত ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় বার করোনা ধরার পরে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে ২৭ এপ্রিল এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এর আগে ১১ এপ্রিল তার প্রথম করোনা পজিটিভ আসে।

গত সোমবার বিকালে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তরিত করা হয় ।

তিনি আর্থ্রাইটিস (বাত), ডায়াবেটিস ও চোখের সমস্যায় ভুগছেন।

ব্রিফিংস:
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে সরকারের কাছে কোনো অনুরোধ করা হয়নি।

রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বেকার মানুষদের ঈদ সামগ্রী বিতরণের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো আবেদন পাইনি..।’,

তিনি উল্লেখ করেন যে, সরকার খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতাদেশ আরও ছয় মাস বাড়িয়েছে।

এদিকে, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছেন, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হবে কি না সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত এখন সরকারের হাতে।

তিনি সাংবাদিকদের সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বলেন, ‘আমি মনে করি সরকারের এই বিষয়ে আদালতের অনুমতি প্রয়োজন কারণ সরকার ৪০১ ধারার (ফৌজদারি কার্যবিধির কোড) অধীনে তার কারাগারের সাজা স্থগিত করেছেন। প্রাসঙ্গিক নথি এবং আইন না দেখে আমি এ সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলতে পারি না।’

কোভিড -১৯-এর প্রাদুর্ভাবের মধ্যে গত বছরের ২৫ মার্চ সরকার একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে দুটি দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার ছয় মাসের জন্য কারাগারের সাজা স্থগিত করে তার মুক্তি দিয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তার পর থেকে তিনি তার গুলশানের বাসায় অবস্থান করছিলেন।

গত বছরের ২ আগস্ট সরকার তার সাজার স্থগিতাদেশ ছয় মাসের জন্য বাড়িয়ে দেয়। চলতি বছরের ১৫ মার্চ এটি আরও ছয় মাসের জন্য বাড়ানো হয়েছে।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, আদালত বিএনপি প্রধানকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করেন। পরে হাইকোর্ট তার সাজা দ্বিগুণ করেন।

একই বছর খালেদা জিয়া আরও একটি দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হোন। তার দলের পক্ষ অবশ্য দাবি করা হয়েছে যে, দুটি মামলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।