সিবিএন ডেস্ক:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় নতুন করে আরও দুটি মামলা করা হয়েছে। আশুগঞ্জ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর টোল প্লাজায় হামলার ঘটনায় আশুগঞ্জ থানায় এই দুই মামলা করা হয়। এর মধ্যে টোল প্লাজা কর্তৃপক্ষ একটি ও আশুগঞ্জ হাইওয়ে সাজেন্ট জহিরুল হক অপর মামলাটি করেন। এ দুই মামলায় অজ্ঞাত এক হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ এ তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন ঘটনায় এ নিয়ে মোট আটটি মামলা করা হলো। এসব মামলায় সবমিলিয়ে অজ্ঞাত প্রায় আট হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।

এর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় গত চারদিনে ছয়টি মামলা করা হয়। এর মধ্যে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করে, পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অপর একটি মামলা করে, আনসার ভিডিপি ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় আনসার বাদী হয়ে একটি মামলা করে, হরতালের দিন আসামি নিয়ে যাওয়ার সময় সুহিলপুর এলাকায় হামলা ও আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় একটি মামলা করে মৌলভীবাজার পুলিশ, এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহিম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে।

এদিকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআইয়ের একটি দল মঙ্গলবার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত পৌরসভা, সুর সম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা বিভিন্ন দপ্তরের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পিবিআইয়ের পরিদর্শক কামরুল হাসান জানান, প্রতিটি ঘটনাস্থলে পিবিআইয়ের বেশ কয়েকটি টিম কাজ করছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত লোকজনসহ আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

এর আগে গত সোমবার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আনোয়ার হোসেন।

ডিআইজি ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন, সুর সম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব, ভূমি অফিস, পৌরসভাসহ বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা পরিদর্শন করেন এবং সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এখানকার প্রতিটি ঘটনার জন্যই মামলা হবে। রোববার এখানে বিভিন্ন জায়গায় যে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ হয়েছে, সেগুলো পরিদর্শন করছি, দেখছি। এটা একেবারেই হৃদয়বিদারক। আমাদের একটি থানা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে একটি একাডেমি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’

হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালকে কেন্দ্র করে গত রোববার রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া। সকাল থেকেই হরতাল সমর্থকেরা বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুরসহ অগ্নিসংযোগ করে।

ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, এসব বিষয়ে তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করবে।

হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতাল থেকে রোববার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ছাড়া একটি মন্দিরের প্রতীমাও ভাঙচুর করা হয়।