সিবিএন ডেস্ক:
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষকদের ও কোমলমতি শিশুদের একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর রাজনৈতিক অভিলাস চরিতার্থ করার কর্মকাণ্ডকে বর্জন করার আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, এ উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী তাদের রাজনৈতিক অভিলাষ চরিতার্থ করার জন্য কওমি মাদ্রাসা ও কোমলমতি শিশুদের ব্যবহার করছে এটা অত্যন্ত ন্যক্কার ও দুঃখজনক।

রোববার (২৮ মার্চ) বিকেলে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমি কওমি মাদ্রাসার সবাইকে অনুরোধ জানাবো যে তাদের রাজনৈতিক অভিলাষ চরিতার্থ করার জন্য আপনারা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবেন না। এ উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর রাজনৈতিক অভিলাষ চরিতার্থ করতে কওমি মাদ্রাসাগুলো ব্যবহার করছে। তারা মাদ্রাসার কোমলমতি শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। দয়া করে কারো রাজনৈতিক অভিলাষের ঢাল হিসেবে ব্যবহার হবেন না। বর্তমান সরকার কওমি মাদ্রসার জন্য অনেক কিছু করেছে এবং ইসলামের খেদমতের জন্য অনেক কিছু করেছে সরকার। তবে সরকার নৈরাজ্য বন্ধ করার জন্য বদ্ধ পরিকর।

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, হেফাজতের আমির ছিলেন মাওলানা আহমেদ শফী। তার বয়স শতবর্ষের কাছাকাছি ছিল। তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ আনা হয়েছে এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে যে তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। যে মামলা তদন্তাধীন আছে। তাদের অভিযোগ হচ্ছে মাওলানা শফীর নাকে রাইস টিউব ছিল এবং তাকে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছিলো। যারা হামলা-হাঙ্গামা করেছিল তারা মাওলানা আহমেদ শফীর অক্সিজেন খুলে নিয়েছিল। সেই কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। যারা নিজেদের আমিরকে হত্যা করার মতো অপকর্ম করে তাদের হাতে ধর্ম রাষ্ট্র কোনটাই নিরাপদ নয়। তাই যে নেতারা এ কাজটি করেছেন তাদের রাজনৈতিক অভিলাষ চরিতার্থ করার জন্যই আজ এ ঘটনা ঘটাচ্ছেন।

সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন ঘটনায় সরকার কি ইসলামী দলগুলোকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সরকার যেকোন নৈরাজ্য দমনে বদ্ধপরিকর। কারণ সরকারের দায়িত্ব জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। সরকারের দায়িত্ব সরকারি সম্পত্তি ও জনগণের সম্পত্তি রক্ষা করা। সুতরাং আজ যারা এ কাজগুলো করছেন, সরকারের দায়িত্ব জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের জন্য রাষ্ট্রের শান্তি, স্থিতি এবং সম্প্রীতি রক্ষার জন্য তাদের দমন করা। সরকার অবশ্যই এটি কঠোর হস্তে দমন করবে।

জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ ২০ জন বুদ্ধিজীবী বিবৃতি দিয়েছেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সংকীর্ণ হয়েছে, এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, আমি বিবৃতিটি দেখেছি। যে ২০ জন বিবৃতি দিয়েছেন তাদের বুদ্ধিজীবী বলতে আমার লজ্জা হচ্ছে। তাদের উচিত ছিল বিবৃতি দিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিন যারা ধর্মের নামে হাঙ্গামা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে একটি বিবৃতি দেওয়া। কিন্তু তারা সেটি না করে সরকারি সম্পত্তিতে যে আগুন দেওয়া হয়েছে, ভূমি অফিস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, রেল স্টেশন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং থানায় আক্রমণ করা হয়েছে, সাধারণ মানুষের ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে, স্বাধীনতা দিবস পালন না করে যারা এসব করেছে তাদের সমালোচনা না করে বরং তাদের পক্ষ নিয়ে বিবৃতি দেওয়ার পর তারা আর স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি বলে দাবি করতে পারেন না। তারা আর টেলিভিশনের পর্দায় গিয়ে সুশীল বলে দাবি করতে পারেন না। তারা উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে গেছেন। তাই তাদের বুদ্ধিজীবী বলতে আমাদের লজ্জা হচ্ছে।

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আরও বলেন, ২৬ মার্চ ছিলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিন। সেদিন স্বাধীনতা দিবস পালন না করে একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী যারা বিশৃঙ্খলা করেছে। তারা সারাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তাদের অভিযোগ ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেন বাংলাদেশে আসলেন। ভারতবর্ষ মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের এক কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল। ১৯৭১ সালে ভারতের সেনাবাহিনী আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তাদের রক্ত ঝরিয়েছে। সেসময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারত সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্ব জনমত সৃষ্টির জন্য একদেশে থেকে আরেক দেশে ঘুড়ে বেড়িয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কোনো দলের নেতা হিসেবে নয়। তিনি বাংলাদেশে কোনো দলের নেতা হিসেবে আসেননি, সে হিসেবে আমন্ত্রণও জানানো হয়নি। আমরা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তিনি এসেছেন সেজন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।