ইমাম খাইর, সিবিএন :
বনের ভেতরে যত্রতত্র পড়ে থাকা প্লা‌স্টিকদ্রব্য, আবর্জনা অপসারণের মধ্য দিয়ে এবার কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক বন দিবস পালিত হয়েছে।

রবিবার (২১ মার্চ) দুপুরে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন মেধাকচ্ছ‌পিয়া জাতীয় উদ্যানে এই কর্মসূচিতে সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) সোহেল রানা, রেঞ্জ অফিসার মাজহারুল ইসলাম, মেধাকচ্ছ‌পিয়া বিট অফিসার শাহীন আলমসহ সংশ্লিষ্টরা অংশ গ্রহণ করেন।

সব ধরনের বন সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে কক্সবাজারে এমন মহতি উদ্যোগ নেয়া হয়। অভিযান চলমান থাকবে।

এবারের বন দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘Forest restoration: a path to recovery and well-being’ যা বাংলায় দাঁড়ায় ‘বন পুনরুদ্ধার: উত্তরণ ও কল্যাণের পথ’।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১২ সাল থেকে প্রতি বছরই এ দিবসটি পালন করা হয়।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা তহিদুল ইসলাম জানান, ফুলছ‌ড়ি রে‌ঞ্জের মেধাকচ্ছ‌পিয়া বি‌টের ৩৯৫.৯২ হেক্টর এলাকাজু‌ড়ে প্রাকৃ‌তিক ভা‌বে সৃষ্ট শতবর্ষী গর্জন বাগানই মূলত মেধাকচ্ছ‌পিয়া জাতীয় উদ্যান। যেটি ২০০৪ সা‌লের ৪ এ‌প্রিল ঘো‌ষিত হয়।

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়‌কে ভ্রমনকারীগণ প‌লি‌থিনসহ অন্যান্য আবর্জনা‌ ফে‌লে নষ্ট কর‌ছেন উদ্যা‌নের প‌রি‌বেশ। তাই আন্তর্জাতিক বন দিব‌সে এ বন‌কে প্লা‌স্টিকমুক্ত করার ক্ষুদ্র প্রয়া‌স চালানো হয়। এ প্র‌ক্রিয়া অব্যাহত থাক‌বে বলে জানান ডিএফও তহিদুল ইসলাম।

সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা এ.কে.এম আতা এলাহী জানান, একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার দেশের বিদ্যমান বনাঞ্চল সংরক্ষণ এবং বনায়ন কার্যক্রম জোরদার করেছে। জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে টেকসই বন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ ও বনের প্রতিবেশ সংরক্ষণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশে সরকার নিয়ন্ত্রিত বনভূমির পরিমাণ প্রায় ২৩ লাখ হেক্টর, যা দেশের মোট আয়তনের প্রায় ১৫ দশমিক ৫৮ ভাগ। এর মধ্যে বন অধিদফতর নিয়ন্ত্রিত বনভূমির পরিমাণ প্রায় ১৬ লাখ হেক্টর, যা দেশের আয়তনের প্রায় ১০ দশমিক ৭৪ ভাগ। সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কার্যক্রম এবং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে বর্তমানে বাংলাদেশের বৃক্ষ আচ্ছাদিত ভূমির পরিমাণ বেড়ে দেশের মোট আয়তনের ২২ দশমিক ৩৭ ভাগ এ উন্নীত হয়েছে। যা ২০২৫ সালের মধ্যে ২৪ ভাগের বেশি উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়ে ইতোমধ্যে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।

এদিকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, অপরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্পায়ন, কৃষিভূমি সম্প্রসারণ, আবাসন প্রভৃতি নানা কারণে সংকুচিত হচ্ছে বনাঞ্চল। ফলে দেশের বন ও বন্যপ্রাণী আজ হুমকির সম্মুখিন। সারা দেশে বনভূমির অবৈধভাবে দখলের প্রবণতা দেখা যায়। দেশের সংরক্ষিত বনভূমির এক লাখ ৩৮ হাজার ৬১৩ একর জমি জবরদখল হয়ে গেছে। অবৈধ জবরদখল উচ্ছেদের মাধ্যমে বনভূমি পুনরুদ্ধার ও তা সংরক্ষণে সরকার কাজ করছে এবং ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অবৈধ দখলে থাকা বনভূমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

উপকূলীয় অঞ্চলে জেগে উঠা চরে বনায়নের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগর থেকে ১৬০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ভূমি দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত উপকূলে জেগে উঠা দুই হাজার বর্গ কিলোমিটার চরে নতুন বন সৃজন করা হয়েছে। এসব বন একদিকে যেমন সবুজ বেষ্টনী হিসেবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষা করছে, অন্যদিকে উপকূলীয় জেলাসমূহে পর্যটনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে।