২০১৬ সালে বিদ্রোহী প্রার্থী ভুট্টো সিকদার বদরখালী ইউনিয়ন আ’লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন

বার্তা পরিবেশক

বদরখালীর ইউপি নির্বাচনে চার বিদ্রোহী প্রার্থী এবার আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হচ্ছে শিরোনামে গত ১৭ মার্চ-২০২১ তারিখে দৈনিক কক্সবাজার পত্রিকায় একটি তথ্যবহুল সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত ওই সংবাদে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক পর্যবেক্ষন পুর্বক বদরখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের অতীত ও বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সংবাদে সত্যতা প্রকাশ করেছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় স্থানীয় সরকার নির্বাচনী মনোনয়ন বোর্ড এবার কোন বিদ্রোহী প্রার্থীকে দলের মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ইতোমধ্যে ঘোষনা দিয়েছেন। সেই আলোকে প্রতিবেদক সংবাদটি প্রচার করেছে।

সংবাদে একটি তথ্য প্রতিয়মান হয়েছে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি নুরে হোছাইন আরিফ নৌকা প্রতীকে কেন কম ভোট পেয়েছেন, বা কী কারণে তিনি বিজয়ী হতে পারেনি। উল্লেখিত সংবাদের জেরধরে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম ভুট্টো প্রকাশ একে ভুট্টো সিকদার একদিন ১৯ মার্চ-২০২১ তারিখে কক্সবাজার পত্রিকায় একটি প্রতিবাদ দিয়েছেন। সেখানে নিজেকে জনপ্রিয় নেতা দাবি করে তিনি বানোয়াট গল্পে সাজানো কল্পকাহিনী তুলে ধরে বক্তব্য দিয়েছেন।

উল্লেখিত একে ভুট্টো সিকদারের কল্পকাহিনী সমৃদ্ধ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বদরখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ নুরে হোছাইন আরিফ জবাব দিয়েছেন। গণমাধ্যমে পাঠানো প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নুরে হোছাইন আরিফ বলেন, বদরখালী ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে আমার পরিবারের ঐতিহ্যবাহি ইতিহাস আছে। আওয়ামী রাজনীতিতে আমার পরিবার উড়ে এসে জুড়ে বসেনি। ১৯৬২ সাল থেকে আমার পরিবারটি এতদাঞ্চলে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আর্দশে উজ্জেবিত হয়ে আমার বাবা মরহুম আবদুল হান্নান বিএ সেই ১৯৬২ সাল থেকে আওয়ামীলীগের রাজনীতি করেছেন। ছিলেন দলের গুরুত্বপুর্ণ পদে। দায়িত্ব পালন করেছেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও বদরখালী সমিতির সম্পাদক সভাপতি পদে। একইভাবে আমার জেঠাতো ভাই মকছুদ আহমদ বিকম বহুকাল যাবত এই অঞ্চলে আওয়ামীলীগের রাজনীতি করেছেন।

নুরে হোছাইন আরিফ বলেন, সর্বশেষ ছাত্রলীগের মাধ্যমে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে নিজেকে জড়িয়ে রেখে পারিবারিক ঐতিহ্য বজায় রেখেছি। জাতির পিতার আর্দশ বুকে ধারণ করে আওয়ামীলীগ সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অবিচল থেকে আজ অবদি আওয়ামীলীগের পতাকাকে সম্মুন্বিত রাখতে নিরলশভাবে কাজ করে যাচ্ছি। যার ফলশ্রুতিতে বদরখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতৃমুলের নেতাকর্মীরা আমাকে পরপর ভোটের মাধ্যমে দুইবার ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত করেছেন।

২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। অথচ ওই নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে আরও চারজন প্রার্থী ভোটযুদ্ধে অংশনেন। তাদের মধ্যে তাঁর মধ্যে আওয়ামীলীগ নেতা খাইরুল বশর আনারস প্রতীকে (৪২১৩) ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। আওয়ামীলীগের অপর বিদ্রোহী প্রার্থী আনম হেফাজ সিকদার চশমা প্রতীকে (৪১৬৭) ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন। আওয়ামীলীগের অপর বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ আলী চৌধুরী মোটর সাইকেল প্রতীকে (২১০১) ভোট এবং আওয়ামীলীগের অপর বিদ্রোহী প্রার্থী বদরখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম ভুট্টো সিকদার (একে ভুট্টো সিকদার) টেলিফোন প্রতীকে পেয়েছিলেন মাত্র ৪০ ভোট।

ওই নির্বাচনে আমি আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী নুরে হোছাইন আরিফ নৌকা প্রতীকে পেয়েছিলাম ১৭৭৯ ভোট। যদিও ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ এবং বিদ্রোহী চার প্রার্থী মিলিয়ে মোট প্রয়োগ হয়েছে ১২৩০০ ভোট। এখানে একটি কথায় স্পষ্ট যে তাঁরা নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করে ১০৫২১ ভোট কেড়ে নিয়েছেন। ওইসময় আমি নির্বাচনে এইধরণের ফল বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীরা ভোটযুদ্ধে থাকার বিষয়টি গণমাধ্যম এবং আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতাদের কাছে অভিযোগ করেছিলাম। সেইদিন বিশ^াস ঘাতক মীর জাফর চক্র দলের সঙ্গে তথা নৌকার সঙ্গে বেইমানি না করলে ঠিকই আমি বিজয়ী হতাম।

এখানে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী অন্য কোন প্রার্থী প্রকাশিত সংবাদের ব্যাপারে মন্তব্য করেনি। কিন্তু মন্তব্য করেছেন একে ভুট্টো সিকদার। তিনি দাবি করেছেন, ২০১৬ সালের নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন চাননি। তা হলে আমার প্রশ্ন তিনি (একে ভুট্টো সিকদার) তো সেইদিন (২০১৬ সালে) বদরখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন (প্রমাণ ছবিতে আছে)। বিদ্রোহী প্রার্থী না হলে তিনি কী আমার জন্য বা নৌকার জন্য সেইদিন ভোট করেছেন, না তিনি আমার পক্ষে কাজ করেনি। উল্টো তিনি টেলিফোন মার্কা নিয়ে চেয়ারম্যান পদে ভোটযুদ্ধে ছিলেন। এখানে প্রতিয়মান হয় যে তিনিও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। যদিও তিনি মাত্র ৪০ ভোট পেয়েছেন। অসম্ভব জনপ্রিয় প্রার্থী বলে তিনি এই ৪০ ভোট পেয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশনের ফলাফল বিবরণীতে ভোটের ফলাফল আছে।

নুরে হোছাইন আরিফ বলেন, বদরখালীর ইউপি নির্বাচনে চার বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে প্রকাশিত সংবাদে প্রতিবেদক তথ্যবহুল আলোচ্য বিষয় তুলে ধরেছেন। তবে সংবাদটির পেছনে আমি বা আমার পরিবারের কোনধরণের সম্পৃক্ততা নেই। এটি সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের একান্তই পেশাগত ব্যাপার। এমনও হতে পারে সংবাদটির পেছনে এখানে ততৃীয়পক্ষ কাজ করেছে। কারণ হিসেবে বলতি পারি, একে ভুট্টো সিকদার ও আনম হেফাজ সিকদার দুইজনই এক মায়ের সন্তান। কিন্তু তাদের ব্যক্তিগত হোক আর পারিবারিক মনোমালিন্যে হোক তাঁরা দুইজনই ২০১৬ সালের নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন এবং আসন্ন নির্বাচনেও প্রার্থী হতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এসব ঘটনার জেরধরেও সংবাদটি প্রচার হতে পারে। সেখানে নুরে হোছাইন আরিফকে জড়িয়ে সংবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদলিপি দিয়ে ভুট্টো সিকদার উল্টো ঘোলা পানিতে মাছ শিকার অপচেষ্ঠা করেছে।

বদরখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি নুরে হোছাইন আরিফ বলেন, বানোয়াট কল্পকাহিনীতে ভুট্টো সিকদার নিজেকে অত্যাধিক জনপ্রিয় এবং আমাকে তুচ্ছ করে আমার জনপ্রিয়তা না কী তলানিতে এমন মন্তব্য করেছেন। এইধরণের মন্তব্য শুধুমাত্র অগ্রহনযোগ্য ব্যক্তিদের মুখে শোভা পায়। বদরখালী ইউনিয়নের আমাপর জনসাধারণ এবং আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা জানে নুরে হোছাইন আরিফের জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতা কেমন। বদরখালীবাসির কল্যাণে আমার পরিবার শুধুই দিতে যানে। বিগত কয়েকমাসের ব্যবধানে বদরখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন মসজিদে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে কমপক্ষে কোট টাকার টাইলসও দিয়েছি আমি। মসজিদ-মাদারাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে পাশে আছি। এমনকি প্রতিদিনই কোন না কোন অনুষ্ঠান বিশেষ করে খেলাধুলা, মাহফিলে সাধ্যমতো সহযোগিতা দিচ্ছি। এলাকার গরীব মানুষের সবধরণের বিপদে আমার পরিবার পাশে আছে। এটি যুগে যুগে প্রমাণিত। আজকের বদরখালীকে প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে আমার বাবা মরহুম আবদুল হান্নান চেয়ারম্যানের অবদান জেলাব্যাপী সমাদৃত। তাই আমি ও আমার পরিবারকে জনপ্রিয়তার ফর্মুলা দেখিয়ে কোন লাভ হবেনা।

নুরে হোছাইন আরিফ বলেন, কক্সবাজার জেলার মধ্যে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে নির্ভেজাল পরিবার সনাক্ত করতে গেলে প্রথমে আমার পরিবারকে স্থান দিতে হবে। কারণ আমরা জন্মথেকে জাতির পিতার আর্দশে অনুপ্রাণিত শেখ হাসিনার সৈনিক। আমরা কোনদিন ডিগবাজির রাজনীতিতে বিশ^াসী নই। পরিশেষে আমি আওয়ামীলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী এবং প্রিয় বদরখালীবাসির সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি, যাতে অতীতের মতো আগামী দিনেও জনগনের পাশে থেকে কল্যাণমুলক সবধরণের কাজ করতে পরম করুনাময় আল্লাহ পাক সহায় হোন।