বিশেষ প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের ইনানীতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ‘অজ্ঞাতবাস’ স্থান পরিদর্শন করেছেন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ, গবেষক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর ড. মুনতাসীরমামুন। তাঁর সাথে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক,শহীদ পরিবারের সন্তান ও মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. গাজী সালেহ উদ্দীন।গতকাল বুধবার দেশের বিশিস্ট এই বুদ্ধিজীবীদ্বয় জাতির জনকের স্মৃতি বিজড়িত স্থানটিতে নির্মাণাধীন এপিটাফটির কাজও পরিদর্শন করেন।

ইনানীর চেংছড়ি আদিবাসী পল্লীর প্রয়াত ফেলোরাম রোয়াজা চাকমারভিটায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত স্থানটি বুদ্ধিজীবীদ্বয়ের পরিদর্শনের সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারের বিশিষ্ট সাংবাদিক তোফায়েল আহমদ, জালিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাব ইন্সপেক্টর মোজাম্মেল হক , স্থানীয় সমাজ সেবক মৌলভী আবুল বশর, স্থানীয় জামে মসজিদের ইমামসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিগন।

কক্সবাজারের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অর্থায়নে স্থাপন করা হচ্ছেএপিটাফটি। এটি স্থাপনে ব্যয় করা হচ্ছে প্রায় ৩৪ লাখ টাকা কক্সবাজারেরস্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুর রহমানজানিয়েছেন-‘ ইনানী অরণ্যঘেরা আদিবাসী পল্লীতে বঙ্গবন্ধুর অজ্ঞাতবাসস্থানটির স্মৃতি রক্ষার জন্যই এপিটাফটি স্থাপন করা হচ্ছে। এটিরনির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এখন সেখানে টাইলস লাগানোর কাজচলছে।’

জাতির জনকের স্মৃতি বিজড়িত কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার সাগরতীরের সেই ইনানী অরণ্যের চেংছড়ির প্রয়াত আদিবাসী নেতা ফেলোরামরোয়াজা চাকমার ভিটার স্থানটিও এখন পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় একঅপরূপ স্থান হিসাবে গড়ে উঠছে।ইনানী অরণ্যের আদিবাসী পল্লীর প্রয়াত ফেলোরাম রোয়াজা চাকমারভিটার ঐতিহাসিক স্থানটির প্রায় ৫ একর সরকারি খাস জমি কক্সবাজারেরজেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে চারিদিকে কাঁটাতারের ঘেরা দিয়ে সংরক্ষণ করে।
সেখানে জেলা প্রশাসন ও কক্সবাজারের দক্ষিণ বন বিভাগের ‘জাতির জনকেরস্মৃতিবিজড়িত স্থান’ লেখা দু’টি পৃথক সাইনবোর্ড বর্তমানেশোভা পাচ্ছে।বঙ্গবন্ধু ইনানী চেংছড়ি অরণ্যের নির্জন আদিবাসি পল্লীতে তদানীন্তনপাকিস্তান আমলে কিছু সময় কাটিয়েছিলেন।

ফেলোরাম রোয়াজা চাকমানামের একজন আদিবাসী নেতা ছিলেন ইনানীতে। সেই আদিবাসী নেতাফেলোরামের সাথে বাঙ্গালীর অসাম্প্রদায়িক নেতা বঙ্গবন্ধুর ছিল অকৃত্রিমভালবাসা। রাজনৈতিক জীবনের এই অজ্ঞাত অধ্যায়টি কেবল স্থানীয়বয়োবৃদ্ধরাই জানেন। প্রয়াত ফেলোরাম রোয়াজা চাকমার একমাত্র জীবিত নাতি রবিয়ং চাকমাবলেন-‘ আমরা শৈশব থেকেই আমাদের দাদার (ফেলোরাম রোয়াজা চাকমা)সাথে বঙ্গবন্ধুর সুসম্পর্কের কথা শুনে আসছি। দেশ স্বাধীন হবার পরবঙ্গবন্ধু আমার প্রয়াত দাদাকে ঢাকায় ডেকে নিয়েছিলেন। লোকজনেরসেইসব অজানা স্মৃতি আমরা এখনো নিরবে লালন করছি।’

আদিবাসীপল্লীতে ফেলোরামের বাড়ি দর্শনের সময়কালের প্রত্যক্ষদর্শী এবং সেইসময়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে থাকা স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হাকিম মাষ্টার
এবং মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক ও সখিনা খাতুনদের কেউই আর বেঁচেনেই।

কক্সবাজারের প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, ১৯৫৮ সালে আইউব খানের সামরিকশাষণ আর ১৯৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা কেন্দ্রিক সময়কালে বঙ্গবন্ধুরআরো অনেক স্মৃতি রয়েছে কক্সবাজারে। ১৯৫৮ সালের ১৬ ও ১৭ জানুয়ারিকক্সবাজারের ইনানী সৈকতের বন বিভাগের রেষ্ট হাউজে বঙ্গবন্ধুর অবস্থানেরদালিলিক প্রমাণও রয়েছে। কক্সবাজারের দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন, ইনানী রেষ্ট হাউজেঅবস্থানকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে লেখা নামের সেই পরিদর্শনবইটি এখনো সংরক্ষিত রয়েছে।