মোঃ কাউছার ঊদ্দীন শরীফ, ঈদগাঁওঃ

যে বয়সে সন্তান-নাতি-নাতনি নিয়ে আনন্দ-ফূর্তিতে সময় কাটানোর কথা-আর সে বয়সেই ভাবতে হচ্ছে পেটের ক্ষুধা নিবারণের কথা। চল্লিশ বছর আগে যে রিকশার হ্যান্ডেল ধরেছিলেন জীবিকার তাগিদে, তা আজও ধরে রয়েছেন সামসু আলম।

রিকশা চালিয়ে ছেলে-মেয়ে বড় করেছেন, তাদের ঘরে ছেলে-মেয়ে হয়েছে। তবে শেষ বয়সে এসে একটু আরাম-আয়েশে জীবন কাটাবেন, তা আর হয়ে ওঠেনি। দুই ছেলে থাকলেও অভাব-অনটনের কারণে বৃদ্ধ বয়সী পিতামাতার দায়িত্ব না নেওয়ায় একপ্রকার বাধ্য হয়েই আজ রিকশা চালাচ্ছেন তিনি।আবার অনেকের সন্তান না থাকায় রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকে রিকশাচালক প্রায় চার যুগ বছর ধরে। সারা দিন রিকশা চালিয়ে তাদের আয় হয় চারশ থেকে ছয়শ টাকা। এর মধ্যে রিকশার ভাড়া দিয়ে পরিবারের জন্য সচ্ছলতা ফেরানোর স্বপ্ন অধরা থেকেই যাচ্ছে।

ছেলে সন্তান থাকলেও দায়িত্ব নেন না বৃদ্ধা মা-বাবার। তাই জীবন যুদ্ধে দু-বেলা দু-মুঠো ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য অন্য কোনো উপায় না পেয়ে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন ঈদগাঁওর পাঁচ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার অনেক বৃদ্ধ।

ঈদগাঁওর পাঁচটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে রিকশার প্রচলন। বর্তমান সময়ে ব্যাটারি-চালিত রিকশা হওয়ায় বৃদ্ধ চালকদের একটু সুবিধা হলেও যাত্রীর তুলনায় রিকশা রয়েছে কয়েকগুণ।

বৃদ্ধ বয়সী চালকদের এক রকম প্রতিযোগিতা করেই রিকশা চালাতে হয়। অনেক যাত্রী বৃদ্ধ চালকদের রিকশায় ওঠেন না এমন অভিযোগও রয়েছে। তবে আগের তুলনায় বর্তমান সময়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা হওয়ায় বৃদ্ধ চালকরা একটু সুবিধা পাচ্ছেন। এ কারণে ঈদগাঁওতে বৃদ্ধ রিকশা চালকদের সংখ্যাটাও একটু বেশি।

কক্সবাজার সদর উপজেলা ইসলামাবাদ ইউনিয়ন খোদাই বাড়ী এলাকার বাসিন্দা মৃত আব্দু জব্বারের ছেলে মোঃ সামসু আলম(৭০)।যিনি ১৬-১৭ বয়স থেকে রিকশা চালানো শুরু করেন এবং বিয়ের করেন তার ত্রিশ বছর পর। বড় পরিবার হওয়ায় তাদের পরিবারের কেউ শিক্ষিত লোক নেই বললেই চলে। বাবা কৃষিকাজ করে সংসার চালাতেন, সঙ্গে সহযোগিতা করতেন তারা। বাবার মৃত্যুর পর সামান্য ২ শতাংশ জমি পেয়েছেন, যার ওপর রয়েছে তার বসতবাড়ি। এ ছাড়া সম্পদ বলতে আর কিছুই নেই।এক মেয়ে দুই ছেলে, সবাই তাদের পরিবার নিয়ে ব্যস্ত। এখন পরিবারকে নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য এ বয়সেও রিকশা চালাতে হচ্ছে। আর যে রিকশাটি তিনি চালান, সেটিও ভাড়ায়। রিকশা চালিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনো রকম সংসার চলে।

ঈদগাঁওর বৃদ্ধ রিকশা চালক কবির আহমদ, নুরু মিয়া,বাবুল, আমিরা হামজা সহ অনেকে জানিয়েছেন, বর্তমান সময়ে আমাদের মাথা পিছু আয় বাড়লেও, সেই সঙ্গে বেড়েছে দৈনন্দিন জীবনে সব পণ্যের দাম। সারা দিন রিকশা চালিয়ে তাদের যা আয় হয়, তা দিয়ে রিকশা মালিকের ভাড়া মিটিয়ে সামান্য কিছু টাকা থাকে। সে টাকা দিয়েই চালাতে হয় সংসার খরচ। ইচ্ছা থাকলেও অনেক সময় নানান জিনিসপত্র কিনতে পারেন না টাকার অভাবে। তার পরও পরিবারের একটু সচ্ছলতা আনতে দিন-রাত রিকশা চালিয়ে যাচ্ছি। অসুস্থতাজনিতসহ বিভিন্ন কারণে একদিন রিকশা চালানো বন্ধ থাকলে অনেকের বাড়িতে হয় না রান্না। সরকার থেকে দেওয়া ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক পান না তারা কোনো সুযোগ-সুবিধা।

বিষয়ে ইসলামাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর ছিদ্দিক বলেন, যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি তাদের আমরা সরকারের বিভিন্ন ফান্ড থেকে অর্থ সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু ফান্ড কম থাকায় সবাইকে একত্রে সহায়তা করা সম্ভব নয়। তারপরও চেষ্টা করছি।