সিবিএন ডেস্ক:
বারবার তাগাদা দিয়েও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে পারছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েও বশে আনা যায়নি দলের বিদ্রোহীদের। এই অবস্থায় একক প্রার্থিতা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। কারণ একাধিক প্রার্থী থাকায় প্রায়ই বিজয়ের মালা যাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত কিংবা নির্দলীয় প্রার্থীর গলায়। আবার বিদ্রোহী জয়ী প্রার্থীর সংখ্যাও কম নয়।

সর্বশেষ এমন ঘটনা ঘটেছে রংপুর সদর উপজেলার পুস্করিনী ইউনিয়নে। গত ২০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রানা। যিনি বিদ্রোহী প্রার্থী। এমনকি দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সদর উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষ্ণ রঞ্জন বর্মণও দলীয় মনোনয়ন পাননি। তবে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও পরাজিত হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোকছেদুর রহমান দুলু।

একই রকম ঘটনা রয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা গাইবান্ধাতেও। জেলার সাহাপাড়া ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছেন।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান জানান, এবার তারা একক প্রার্থিতা নিশ্চিতে কাজ করছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-সাধারণ ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা এই সংক্রান্ত নির্দেশ জেলা উপজেলায় পৌঁছে দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন।

যদিও আরও আগে থেকেই ইউনিয়ন, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থিতা নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছিলেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি তিনি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদেও একক প্রার্থী নিশ্চিতের জন্য দলীয় নেতাদের নির্দেশ দেন।

এই বছরের চার জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দলের বর্ধিত সভায় তিনি বলেছিলেন, ‘ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে পাশাপাশি অন্যান্য নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে হবে। এই জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’

সর্বশেষ গত ১০ অক্টোবর আওয়ামী লীগের গাজীপুর শাখার বর্ধিত সভায় দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্দেশ দেন নির্বাচনে যাচাই-বাছাই করে শক্তিশালী ও স্বচ্ছ ইমেজের প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রে পাঠাতে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের কাছে একক প্রার্থিতা নিশ্চিতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন তারা। তৃণমূলে সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরও কোথাও যদি কেউ দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নেন তাকে বুঝিয়ে বা দলীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়ে হলেও নির্বাচন থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা হয়। এরপরও কাজ না হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করা হয়েছে।’

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন বিষয়ভিত্তিক সম্পাদক বাংলা ট্রিবিউনের কাছে দাবি করেন, অনেক ক্ষেত্রে প্রার্থী নির্বাচনে ভুল হওয়ায় যোগ্য ও জনপ্রিয় ব্যক্তিরা বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচন করেন। যার প্রমাণ সম্প্রতি পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মনোনয়নে আত্মীয়তা, স্বজনপ্রীতি, অর্থের বিনিময় যেমন তৃণমূলে হয় তেমনি কেন্দ্রেও হয়। এসব বন্ধ হলেই একক প্রার্থিতা নিশ্চিত সম্ভব হবে।’

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু হয় তৃণমূল থেকেই। থানা বা জেলা থেকে আগ্রহী প্রার্থীদের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়। দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্ট বিভাগের যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের মতামত নিয়ে আলোচনা করে প্রার্থী চূড়ান্ত করে থাকে।