সংবাদদাতা :

কক্সবাজার সদরে ভুয়া কাজীর ছড়াছড়িতে বিপাকে পড়েছেন প্রকৃত কাজীরা। এ নিয়ে প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনা ও প্রতারণার শিকার হচ্ছে নারীরা। জানাগেছে, একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন ধরে কতিপয় কিছু কাজীদের কাছ থেকে মোটা অংকের বিনিময়ে ওই প্রতারক চক্ররা বিবাহ রেজিস্ট্রি করার জন্য বালাম বহি সংগ্রহ করে এ কাজ করছেন।
আইন-বিধি না মেনে এভাবে যদি মুসলিম নিকাহ রেজিস্টার কার্যক্রম চলে তাহলে প্রকৃত কাজীরা হারিয়ে যাবে। দিন দিন নারীদের ভোগান্তি বাড়বে; আর ভূয়া কাজীদের দখলে চলে যাবে মহান এ পেশা এমন মন্তব্য করেছেন কক্সবাজারের সচেতন মহল।

তারই ধারাবাহিকতায় কিছু ভুয়া কাজী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরাও পড়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে থানা আদালতে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। তারা আইনের ফাঁকে বের হয়ে আবারও এ পেশায় যোগ দিচ্ছেন। তবে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো চলমান রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নিকাহ রেজিস্ট্রার জানান, জবাবদিহিতার অভাবে দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পবিত্র এ পেশা। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে স্থানীয়দের এ পেশায় সুযোগ দেয়া দরকার। তিনি এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

অনুসন্ধানে জানাযায়, কক্সবাজারের ৮ উপজেলায় নিয়োজিত কিছু নিকাহ রেজিস্ট্রারদের বিরুদ্ধে সরকার বিরোধী কর্মকান্ডসহ নানা অভিযোগ প্রকাশ রয়েছে। যদিও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের পক্ষে ডিও লেটার দিয়ে গোপনে মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় প্যানেল পাঠিয়ে স্থানীয়দেরকে এ পেশা থেকে বঞ্চিত করেছেন। এতে করে স¤প্রতি ওর্য়াড ভিত্তিক কাজী নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়েছে বলে দাবী তুলেছেন বঞ্চিতরা।
বর্তমানে কক্সবাজার সদর উপজেলায় যারা নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তারা বিভিন্ন উপজেলা হতে এসে কৌশলে কক্সবাজার সদর ও পৌরসভায় কাজী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এতে স্থানীয় শিক্ষিত লোকজন এ পেশা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অপরদিকে এ ভূয়া কাজীদের কারনে আক্রান্ত নারীরা মারাতœকভাবে প্রতারণার শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

অনুসন্ধানে আরও জানাযায়, কক্সবাজার সদরের ভারুয়াখালী এলাকার  আব্দুল হাকিম ছিদ্দিকী দীর্ঘদিন যাবত নিকাহ রেজিস্ট্রার জাফর আলম ও মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে বালাম বহি নিয়ে ঝিলংজাসহ কক্সবাজার শহরের অলিগলিতে  বিয়ে রেজিস্ট্রি করে আসছেন। এ ধরণের কর্মকান্ডে তিনি একাধিকবার ধরাও পড়েছিলেন। ওই সময় তাকে ভূয়া কাজী হিসেবে চিহ্নিত করে বালাম বহি জব্দ করা হয়েছিলো। কিন্তু কৌশল পাল্টিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে এ পেশায় রয়েছেন। নামে কাজী প্রকৃতপক্ষে তিনি কাজী নন।

অপরদিকে কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া এলাকার হাবিব আহমেদ মাস্টার নামে আরেক ভূয়া কাজীর সন্ধান পাওয়া গেছে। তিনি এরশাদুল্লাহ’র কাছ থেকে বালাম বহি নিয়ে খরুলিয়াসহ শহরের অলিগলিতে বিয়ে রেজিস্ট্রি করে আসছেন। আরও জানা যায়, স্থানীয় ইউপি সদস্য রশিদের সহযোগিতায় খরুলিয়া বাজারে তিনি বিবাহ রেজিস্ট্রি করে আসছেন। অথচ তিনিও কৌশলে কাজী সেজে প্রায় ৩০ বছর ধরে এ পেশায় জড়িত রয়েছেন। অথচ তিনিও কাজী নন।

একই কায়দা অবলম্বন করে মুজিবুর রহমানসহ একাধিক নিকাহ রেজিস্টার হতে বালাম বহি নিয়ে চৌফদন্ডী এলাকায় বিয়ে রেজিস্ট্রি করে আসছেন মুহাম্মদ আলম। তিনিও নানা কায়দা অবলম্বন করে বিয়ে রেজিস্ট্রি করে আসছেন। তিনিও এ পেশায় প্রায় ১৪ বছর ধরে আছেন। তিনিও কাজী নন।

কক্সবাজার সদর উপজেলার দক্ষিণ হাজী পাড়া এলাকার একাধিক সমাজপতি জানান, আক্তার কামাল নামে জনৈক কাজী দক্ষিণ হাজী পাড়ায় বসবাস করছেন। সে সুযোগে তিনিও নানা কৌশলে তার ছেলেদের দিয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিয়ে রেজিষ্ট্রি করছেন। যার কারনে প্রকৃত কাজীরা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছেন।

এছাড়াও কক্সবাজার পৌরসভার ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ডে কাজীর দায়িত্ব পালন করছেন রামু উপজেলার বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন। কক্সবাজার পৌরসভার ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের কাজী সাইফুল্লাহ বিয়ে রেজিস্ট্রি করছেন ঝিলংজার পশ্চিম লারপাড়ায়। তার নিয়োজিত রয়েছে ডজনখানিক সহকারি।

এ নিয়ে মারাত্মকভাবে বিশৃংখলা সৃষ্টি হচ্ছে কাজী সমাজে। যার কারনে প্রতিনিয়ত সেবা প্রার্থীরা বিড়ম্বনা ও প্রতারণার শিকার হচ্ছে।

অন্যদিকে কক্সবাজার পৌরসভার ১১ ও ১২ নং ওয়ার্ডে পার্টনারশীপ হয়ে কাজীর দায়িত্ব পালন করছেন তৈয়াব নামের একজন। তিনিও কাজী নন।

অভিযোগ রয়েছে, কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা আংশিক ও রামু উপজেলার হিমছড়ি পর্যন্ত কৌশলে বিয়ে রেজিস্ট্রি করছেন বেলালের নিয়োগকৃত সহকারিরা। অথচ জবাবদিহিতার অভাবে আইন আর নীতি না মেনে কতিপয় কিছু কাজী এ কর্মকান্ড চালিয়ে আসছেন।

এ বিষয়ে জানার জন্য একাধিক দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে নিকাহ রেজিস্টারের বিষয়টি সরাসরি আইন মন্ত্রনালয়ের বিচার শাখা-৭ বিভাগটি দেখভাল করে বলে জানাগেছে। তাই এব্যাপারে কারো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য যে, উল্লেখিত কাজীগণ ছাড়াও আরও নাম অজানা অনেক ভূয়া কাজীর ছড়াছড়ি রয়েছে কক্সবাজার শহরে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাসহ প্রকৃত কাজীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য দাবী জানিয়েছেন ধর্মপ্রাণ সমাজপতিরা।