ওসমান আবির :

মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও ইয়াবার চালান রোধকল্পে নাফ নদীতে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার।দীর্ঘ তিন বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও জেলেদের ভাগ্য খুলেনি এখনও।পাওয়া যায়নি নাফনদীতে মাছ ধরার অনুমতি।তবুও থেমে নেই মিয়ানমার থেকে নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে ইয়াবার অনুপ্রবেশ।চলতি বছরের শুরুতে ইয়াবা গডফাদাররা এলাকা ছাড়া হলে কিছুটা স্থবির হয়ে পড়ে ইয়াবা পাচার।

গত ৩১ জুলাই সিনহা হত্যাকান্ডের ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কিছুটা স্থবির হয়ে পড়লে ইয়াবা গডফাদাররা এলাকায় ফিরে আসে। আবারও নতুন রুপে জমজমাট ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে তারা।প্রতিনিয়ত নাফ নদী পার করে নিয়ে আসছে ইয়াবার বড় বড় চালান।আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরাও পড়ছে মলিকবিহীন ও মালিকসহ ইয়াবার সেই সব চালান।এই সব চালানগুলো পাচারকাজে জড়িতরা বেশির ভাগই রোহিঙ্গা।

গত বৃহস্পতিবার রাতে বিজিবি সদস্যরা উপজেলার হ্নীলার নাফ নদী সংলগ্ন লেদা খাল ও হোয়াইক্যং লম্বাবিল এলাকার নাফ নদী সংলগ্ন মাছের প্রজেক্টে পৃথক অভিযান চালিয়ে একজন রোহিঙ্গা পাচারকারীসহ ৭১ হাজার পিচ ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে।গত ১০ অক্টোবর হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়ার নেচার পার্ক সংলগ্ন নাফ নদীতে বিজিবির সদস্যরা অভিযান চালিয়ে মালিকবিহীন ২ লাখ ২৬ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে।নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ থাকলেও প্রতিনিয়ত নদী পেরিয়ে আসে ইয়াবার বড় বড় চালান।প্রতিদিন কোনো না কোনো স্থানে একাধিক চালান জব্দও হচ্ছে।এদিকে ইয়াবা রোধকল্পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

বিজিবির দেওয়া পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সিনহা হত্যাকান্ডের পর ইয়াবা কারবারীরা বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠেছে।চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৭ মাসে বিজিবির সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করে ইয়াবা জব্দ করেছে ২৮ লক্ষ ৮৩ হাজার।সিনহা হত্যাকান্ডের পরের দুই মাস আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ইয়াবা জব্দ করে ২২ লক্ষ ১৩ হাজার।চলতি এই দুই মাসে সর্বোচ্চ ইয়াবা জব্দ করে বিজিবির সদস্যরা।

আব্দুস সালাম নামের স্থানীয় এক জেলে বলেন,সিনহা হত্যাকান্ডের পর থেকে ইয়াবা গডফাদাররা এলাকায় ফিরে নতুন রুপে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে।রোহিঙ্গাসহ ইয়াবা গডফাদারদের ইশারায় বর্তমানেও মিয়ানমার থেকে ইয়াবার বড় বড় চালান আসছে নাফনদী হয়ে টেকনাফে।এতদিন বন্দুকযুদ্ধের ভয়ে তারা এলাকা ছাড়া হলেও এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদক নির্মূলের সাঁড়াশি অভিযানের স্থবিরতায় তারা আবারও জমজমাট ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে।

ইয়াবা ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে গত ৩ বছরের বেশী সময় ধরে নাফ নদীতে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার।নদীতে মাছ শিকার বন্ধ থাকলেও বাংলাদেশে ইয়াবার অনুপ্রবেশ থেমে নেই।নাফ নদী পেরিয়ে প্রতিনিয়ত আসছে ইয়াবার বড় বড় চালান।আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরাও পড়ছে সেই সব ইয়াবার চালান।এদিকে জেলে পরিবারে দুর্দিন চললেও নাফনদীতে মাছ ধরার অনুমতি মিলছে না।

মাছ ধরার নিষাধাজ্ঞার পর থেকে টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অর্ধ শতাধিক নৌকা ঘাটে নোঙর করে আছে।কিছু কিছু নৌকা অকেজো হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।জেলেরা বলেন, রোহিঙ্গা ও ইয়াবা অনুপ্রবেশের কারণে এমনিতেই নাফ নদীতে নানা সময়েই মাছ ধরার উপর বিজিবির বিধি নিষেধ থাকে।

আবু তাহের নামে এক জেলে বলেন, ইয়াবা ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত তাদের ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু ইয়াবা ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কালিমায় নাফ নদীতে মাছ ধরতে পারছে না হতদরিদ্র জেলেরা।যারা মাছ ধরে সংসারের খরচ নির্বাহ করে।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন,”পলিথিনে মোড়ানো ঘরের নিচে মাথা গোঁজানো জেলে পল্লীর জেলেদের কান্না শোনার কি কেউ নেই?