পেকুয়া প্রতিনিধি :

কক্সবাজারের পেকুয়ায় নিজ ভিটায় ফিরতে চান বনের রাজাখ্যাত জাহাঙ্গীর ও তার ভাই আলমগীরের নির্যাতনের শিকার শতাধিক পরিবার। এছাড়াও পাহাড়ি অঞ্চলের ৫ হাজারের অধিক মানুষ তাদের জিম্মি থেকে মুক্তিও চাই। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, পুলিশের উপর হামলা, ধর্ষণ, পাহাড় ও বননিধনের অভিযোগে ৩৫টির মত মামলা চলমান রয়েছে। পুলিশ এ সমস্ত অপরাধীদের গ্রেফতারে সাড়াঁশি অভিযান পরিচালনা না করায় পেকুয়ার আইনশৃঙ্খলা দিনদিন অবনতি হচ্ছে এমন অভিমত এলাকাবাসীর।

শুক্রবার বারবাকিয়া ইউপির পাহাড়িয়াখালী ও টইটং ইউপির আবাদিঘোনা এলাকায় সরেজমিনে স্থানীয় ভুক্তভোগীদের দেয়া বিবরণে এমন ভয়াবহ ও আর্তনাদের কথা জানা যায়।

আবাদীঘোনা এলাকার আসমা আক্তার, রিনা আক্তার ও ফাতেমা বেগম জানান, বিগত ১২ বছর ধরে বসতঘর নির্মাণ করে আবাদীঘোনায় বসবাস করে আসছিলেন। শান্তিপূর্ণ বসবাসের এক পর্যায়ে গত তিন বছর আগে তাদের ভোগদখলীয় বসতভিটা থেকে জোরপূর্বক তাড়িয়ে দেন জাহাঙ্গীর ও তার সন্ত্রাস বাহিনী। এমনকি তাদের গৃহপালিত গরু-ছাগল ও বসভিটার বড় বড় গাছ কেটে বিক্রি করে দেন। নিঃস্ব হয়ে তারা বসতভিটা ফেরত পাওয়া ও বিচারের আশায় দিনের পর দিন কাটাচ্ছেন।

একই এলাকার রহিমদাদ জানান, বিগত ৪বছর ধরে বসতভিটায় যেতে পারছেননা তিনি। দখলীয় জমি কেটে নেয়ার সাথে সাথে বসতভিটাও কেটে নেন জাহাঙ্গীর-আলমগীর গং। এমনকি থানায় অভিযোগ দেওয়ায় তাদের পুরো পরিবারের উপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করে।

মোঃ নেজাম উদ্দিন বলেন, ৩ একর নাল জমিসহ বসতভিটা কেটে নেন জাহাঙ্গীর আলম ও তার ভাই আলমগীর। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, পুলিশের হামলা, পাহাড় ও বননিধন অভিযোগে ৩৫টির অধিক মামলা চলমান থাকলেও অদৃশ্য কারণে প্রশাসন তাদেরকে গ্রেফতার করছেনা। তিনি জমি ও বসতভিটা ফেরত পাওয়ার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বারবাকিয়া ইউপির পাহাড়িয়াখালী এলাকার নাছির উদ্দিন জানান, জমি থেকে বিতাড়িত করতে তার ছোট ভাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আনছার উদ্দিনকে বারবাকিয়া বাজারে প্রকাশ্যে কুপিয়ে আহত করে। এ ঘটনায় তার পরিবারের আরো চারজনকে কুপিয়ে আহত করে। এ ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ তাদেরকে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করেনি।

সদ্য নির্মমভাবে হত্যাকান্ডের শিকার সালমার মা মর্তুজা বেগম বলেন, তার কিশোরী মেয়েকে বিগত তিন মাস আগে বিয়ের নাম করে জোরপূর্বক নিয়ে যায় আলমগীর। তারপর থেকে জাহাঙ্গীর-আলমগীর তাকে নির্যাতন করতে থাকে। সর্বশেষ গত এক সপ্তাহ আগে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে আলমগীর। এ ঘটনায় আলমগীর ছাড়াও জাহাঙ্গীর আলমসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা হলেও আসামীরা গ্রেফতার হয়নি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এক সময়ের ডাকাত জাফর আলমের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম ও আলমগীর। পিতার ধারাবাহিকতায় দুই সন্তানও দূর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হয়ে ওঠে। ডাকাতি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে আড়াল করতে বিগত ইউপি নির্বাচনে আ’লীগের নাম ব্যবহার করে মেম্বার নির্বাচিত হন। মেম্বার পদটি পাওয়ার পর আরো বেশি দূর্ধর্ষ হয়ে ওঠে জাহাঙ্গীর আলম। একই সাথে তার ভাই আলমগীরও ত্রাসের রাজস্ব কায়েম শুরু করে পাহাড়ি এলাকায়। বিভিন্ন অপরাধে একে একে দুই ভাইয়ের নামে ৩৫টির মত মামলা রেকর্ড হয়। মামলা রেকর্ডের পরবর্তী নিজেকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠে জাহাঙ্গীর আলম। বাংলাদেশ আ’লীগ পেকুয়া উপজেলা শাখা ও বারবাকিয়া ইউনিয়ন শাখার নেতাদের বশে এনে ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতির পদটি ভাগিয়ে নেন।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, জাহাঙ্গীর ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতির পদ পাওয়ার পর তার ভাই আলমগীরসহ তাদের বাহিনী শতশত নিরহ লোকদের বসতভিটা থেকে তাড়িয়ে দেয়া, জোরপূর্বক জমি জবর দখল, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আনছারকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা, কিশোরী সালমাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এছাড়াও বারবাকিয়া ও পাহাড়িখালী এলাকায় সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে পাচারসহ পাহাড় কেটে নিধন করার মত গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এনিয়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত সংবাদ প্রকাশ হলেও অদৃশ্য শক্তির কারণে পুলিশের ধরাচোঁয়ার বাইরে থেকে যায় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী ও সচেতন মহলের।

এবিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য যোগদান করা পেকুয়ার থানার ওসি সাইফুর রহমান মজুমদারের সরকারি দুইটি মুঠোফোনের সংযোগ বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।