সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত দ্বি-খন্ডিত করে পরিবেশ প্রতিবেশের সর্বোচ্চ ক্ষতি করে জেটি নির্মান প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে কক্সবাজারের পরিবেশবাদী সংগঠন কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদ।

২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

এতে বলা হয়, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মতিধন্য হচ্ছে কক্সবাজার ও বালিয়াড়ি সমুদ্র সৈকত। ইতিহাস বলে, কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধু ১২ বার এসেছেন। যতবার আসেন ততবার তিনি সমুদ্রে সৈকতে ঘুরে বেড়ান। এমন কি সমুদ্র পাড়ের সাগরিকা হোটেলে তিনি দলীয় সভা করেন। তিনি থেকেছেন সমুদ্র পাড়ের মোটেল শৈবালে , ইনানীর বীচের বনবিভাগের রেষ্ট হাউসে । কারন তিনি প্রকৃতিপ্রেমী। বিশাল হৃদয়ের মানুষ বলে তিনি সমুদ্রের বিশালতা আর দীর্ঘ সৈকতকে তিনি উপভোগ করতেন, ধারণ করতেন। এই সমুদ্রমানব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সৈকত রক্ষা ও শ্রী বৃদ্ধির জন্য সৈকতে ঝাউগাছের বনায়ন করেন। সেই থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য্য আরো অন্যন্য রুপ ধারণ করে। কিন্তু বার বার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সৈকতের সৌন্দর্য্য বিনষ্ট করে তাদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করেন। এতে সৈকতে প্রকৃতির সৌন্দর্য্যহানি হয়। পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি শ্রীহীন হয়ে পড়ে সৈকত।

বিশে^র দীর্ঘতম এই সমুদ্র সৈকত বাঁধাহীনভাবে ১২০ কিলোমিটার রয়েছে। কোথাও কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। আকাশ থেকে দেখলেই মনে হবে দাগহীন সাদা চাদর। কোথাও কোন দাগ নেই , ছেঁড়া নেই। এখন এই বিশাল সৈকতের মাঝখানে বাঁধা দিয়ে দ্বি-খন্ডিত করার জন্য পাঁয়তারা করছে কর্ণফুলি শীপ বিল্ডার্স লি. নামের এক প্রাইভেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। তারা সৈকতে জেটি নির্মান করার অপপ্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেতে এবং পরিববেশ অধিপ্তরের ছাড়পত্র পেতে আবেদন করেছেন।

জেটি নির্মানের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে কক্সবাজারের বড়ছরা দরিয়ানগর সৈকত পয়েন্টসহ বিভিন্ন ইসিএ এলাকায়। এই প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় (ইসিএ) যেখানে এখনো দেখা মেলে লাল কাঁকড়া, কচ্ছপ, শামুক ঝিনুকসহ উপকুলীয় নানা প্রাণীর। এখানে এখনো রয়েছে সাগরলতাসহ বালুয়াড়ির নানা উদ্ভিদ। রয়েছে ঝাউবাগান। যদি জেটি নির্মানের অনুমতি দেয়া হয় তাহলে এটি হবে আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত। এই জেটি হলে সৈকত ও সমুদ্রের পানিতে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটবে । জেটি সংলগ্ন সৈকতের কমপক্ষে ৫ কিলোমিটার জায়গায় জীববৈচিত্র, প্র্রকৃতিতে প্রাণীকুলের অস্তিত্ব থাকবেনা, থাকবেনা সাগলতা, ঝাউগাছসহ অন্যান্য উদ্ভিদ। সৈকতের এলাকাটি শ্রীহীন হয়ে পড়ার পাশাপাশি দুর্গন্ধে পরিণত হবে। জেটিতে বড় বড় জাহাজ ভিড়বে। জাহাজের তেল, বর্জ্যে আর মানুষের ফেলা আবর্জনায় সমুদ্রের পানিও ভারি হয়ে উঠবে।

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ১২০ কিলোমিটারের সমুদ্র সৈকত তখন দ্বি-খন্ডিত হয়ে যাবে। মাঝখানে জেটির বাঁধার কারনে পর্যটকরা সৈকতে অবাধে চলাচল করতে পারবেনা। জেটির কারনে তখন একটি উত্তর সৈকত ও আরেকটি দক্ষিণ সৈকত নামে পরিণত হবে। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে প্রতিবছর ভাঙ্গছে উপকুলীয় সৈকত। জেটি হলে সমুদ্রের ঢেউ বাঁধাগ্রস্থ হবে। আর বাঁধাগ্রস্থ হলেই আশেপাশের এলাকা ভেঙ্গে পড়বে। দরিয়ানগরের এই সমুদ্র সৈকত ঘেষে রয়েছে বানরের পাহাড়। এই পাহাড়ে বানরের পাশাপাশি রয়েছে নানা প্রজাতির পাখিসহ রয়েছে নানা প্রাণী। জেটি হলেই তখন এটি জনবহুল এলাকায় পরিণত হবে, জাহাজের শব্দসহ নানা জনঝঞ্জাটে তখন বানরের পাহাড়ে প্রাণীকুলের অস্তিত্ব থাকবেনা।

একটি জেটির কারনে ১২০ কিলোমিটার সৈকত হবে দ্বি-খন্ডিত। হারাবো বানরের পাহাড়ের প্রাণীকুল। হারিয়ে যাবে সাগরলতা, ঝাউগাছসহ উপকুলীয় জলজ উদ্ভিদ, লাল কাঁকড়া, কচ্ছপসহ উপকুলীয় জলজপ্রাণী। ধ্বংস হবে জীববৈচিত্র ও প্রকৃতি পরিবেশ। ভাঙ্গনের কবলে পড়বে সৈকত। শ্রীহীন এবং দুর্গন্ধময় দুষিত সৈকতে পরিণত হবে। এতে দেশি বিদেশী পর্যটকরা বিমুখ হয়ে পড়বে। সামান্য রাজস্ব আয় করতে গিয়ে বিনিময়ে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। যা অবর্ণনীয় ক্ষতি। আর পক্ষান্তরে দেশ ও পরিবেশের এমন ক্ষতি করে মুনাফালোভী প্রাইভেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলি শীপ বিল্ডার্স লি.সহ অন্যরা মোটা অংকের অর্থ বাণিজ্য করে নেবে। এই প্রতিষ্ঠানের নামে অনুমতি নিয়ে দিতে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে কিছু প্রভাবশালীমহল তদবির করছেন।

আকুল আবেদন এই যে , দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত, প্রকৃতি পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, ইকোটুরিজ্যম সুরক্ষায় কক্সবাজারের ১২০ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতে কোন জেটি নির্মান না করার আদেশ প্রত্যাশা করছি।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক দীপক শর্মা দীপু, সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মোহাম্মদ জুনাইদ, সংগঠনের কর্মকর্তা ডা: চন্দন কান্তি দাশ, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক বিশ^জিত পাল বিশু, উন্নয়ন কর্মকর্তা, দিদারুল আলম রাশেদ, রায়হান উদ্দিন চৌধুরী, কামাল উদ্দিন, ইল্ল বড়ুয়া ও নয়ন চক্রবর্তি।