বলরাম দাশ অনুপম, কক্সবাজার :
উদ্বোধন হয়েছে কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলে জলবায়ু উদ্ভাস্তুদের জন্য নির্মিত বিশে^র র্সববৃহৎ আশ্রয়ন প্রকল্পের। বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) সকাল ১১টা ২০ মিনিটের দিকে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রাথমিকভাবে ৬০০ পরিবারের কাছে ফ্ল্যাট হস্তান্তরের মাধ্যমে এ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সরকারপ্রধান। এর মাধ্যমে সমুদ্রদ্বীপ কুতুবদিয়া ও পাশের মহেশখালীতে ১৯৯১ সালে সাগরজলে ভিটেমাটি হারানো জলবায়ু উদ্বাস্তু মানুষ মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলো।
খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে’র আওতায় ৪৪৪৮টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার পুনর্বাসন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে প্রাথমিকভাবে ৬০০ পরিবারের কাছে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেন। জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার পুনর্বাসন বিশ্বে এটিই প্রথম।
বিশেষ এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন-কক্সবাজারকে উন্নত পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। বিশে^র মানুষ যাতে এর সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারেন সে লক্ষে কাজ করছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের কোন মানুষ গৃহহীন থাকবে না। এতে শুভেচ্ছা বক্তব্যে রাখেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন-প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
কক্সবাজারের খুরুশকুলে অনুষ্টানস্থলে উপস্থিত ছিলেন, চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম, মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের আশেক উল্লাহ রফিক, সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, উখিয়া-টেকনাফ আসনের সংসদ সদস্য শাহীন আকতার, মহিলা সংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা আহমদ, খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রকল্প পরচিালক (অতিরিক্ত সচিব) মাহবুব হোসেন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমশিনার এ বি এম আজাদ এনডিসি, সেনাবাহিনীর দশম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং এরিয়া কমান্ডার মো. মাঈন উল্লাহ চৌধুরী, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার), জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকটে সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান।
অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক শুভ উদ্বোধনের ১৯ জন উপকারভোগীদের মাঝে বসতঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়। এসময় খুরুশকূল প্রান্তে তিনজন উপকারভোগী আশ্রয়ণ প্রকল্পস্থলে রোপণ করেন ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা।
জানা যায়-খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প’ এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫৩.৫৯ একর জমিতে ১৮০০.৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫তলা বিশিষ্ট ১৩৯টি ভবন নির্মাণ করার মাধ্যমে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনে বিশ্বে এক অনন্য নজির স্থাপন করছেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায়, বিমানবন্দর স¤প্রসারণের লক্ষ্যে এর মধ্যে সংলগ্ন ৬৮২ একর খাস জমি বিমানবন্দরের জন্য বরাদ্দ সহকারে খতিয়ান চূড়ান্ত করা হয়েছে। চিহ্নিত এই পরিমাণ জমিতে বর্তমানে অবৈধভাবে বসবাসরত ৪৪০৯ পরিবারের লোকজনকে পুনর্বাসন করার জন্য বাঁকখালী নদীতীরের খুরুশকূলের ২৫৩ দশমিক ৩৫ একর জমিতে তৈরি করা হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্প। এর মধ্যে প্রথমধাপে শেষ হয়েছে ২০টি বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজসহ সার্বিক সুযোগ সুবিধা। সূত্রমতে, ২০১৫ সালে শুরু হয় প্রকল্পের ভরাটের কাজ। প্রকল্পে চারতলাবিশিষ্ট ২৪৫টি ভবন নির্মাণ করার কথা রয়েছে। এর মধ্যে সেনাবাহিনী ২০টি ভবন নির্মাণ কাজ শেষ করেছে। প্রতিটি ভবনে রয়েছে ৩২টি করে ইউনিট। নির্মিত এসব ভবনে আশ্রয় পাবে ৬৪০টি পরিবার। এই বৃহৎ আশ্রয় প্রকল্পে রয়েছে স্কুল, মসজিদ-মাদরাসাসহ সার্বিক সুযোগ সুবিধা। পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে কলেজসহ আরো প্রয়োজনীয় নানা প্রতিষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় এই প্রকল্পে নির্মিত ২০টি অত্যাধুনিক ভবনের নামকরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই। কক্সবাজারের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দুর্বলতা অন্য রকম। এটিও এর একটি প্রমাণ। প্রধানমন্ত্রী নিজে ভবনের নামগুলো রেখেছেন। ভবনের নামগুলো হচ্ছে- ১) সাম্পান, ২) কোরাল, ৩) রজনীগন্ধা, ৪) গন্ধরাজ, ৫) হাসনাহেনা, ৬) কামিনী, ৭) গুলমোহর, ৮) গোলাপ, ৯) সোনালী, ১০) নীলাম্বরী, ১১) ঝিনুক, ১২) কেওড়া, ১৩) মুক্তা, ১৪) প্রবাল, ১৫) সোপান, ১৬) মনখালী, ১৭) শনখালী, ১৮) দোলনচাঁপা , ১৯) ইনানী ও ২০) বাঁকখালী।