মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

সারাদেশের মতো কক্সবাজার জেলা আইনাঙ্গনও করোনার বিষাক্ত ছোবল থেকে রেহাই পায়নি। কক্সবাজারে ১৬ জুন পর্যন্ত ২ জন আইনজীবী সহকারী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের একজন হলো মহিউদ্দিন বয়স (৭০)। তার বাড়ি কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী রহমানিয়া মাদ্রাসার পেছনে পূর্ব বৈদ্যঘেনায়। মহিউদ্দিন গত ২২ মে ভোররাতে মারা যান। পরে কক্সবাজার সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ তার স্যাম্পল সংগ্রহ করে। তার দাফন কাফনের পর একইদিন রাত্রে তার টেস্ট রিপোর্ট ‘পজেটিভ’ আসে। তার আদি নিবাস পেকুয়া উপজেলায়।

করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করা অন্য একজন আইনজীবী সহকারী হলেন-মোহাম্মদ ইমরান (৪৪)। তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে আইসিইউ-তে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৩ জুন ভোরে মারা যান। তার করোনা উপসর্গ থাকলেও গত ১০ জুন তার রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ পাওয়া যায়। তার বাড়ি চকরিয়া উপজেলার পহরচাঁদা গ্রামে।

এছাড়া কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির ৩ আইনজীবী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ২ জন সুস্থ হয়েছেন। তাদের একজন হলেন-এডভোকেট ছৈয়দ হোসেন। তাঁর বাড়ি কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাহ ইউনিয়নে। অপরজন হলেন-সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট নাছির উদ্দিন। তার বাড়ি কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী রোডের কচ্ছপিয়া পুকুর পাড়ে। তাঁর আদি নিবাস চকরিয়ার ডুলাহাজারায়।

কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য এডভোকেট মোঃ আজিম উদ্দিন করোনা পজেটিভ হয়েছেন ১৫ জুন। তিনি চকরিয়ার বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি হোম আইসোলেশনে আছেন।

কক্সবাজারে বিচার বিভাগীয় ২ জন স্টাফ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের একজন হলেন-কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নম্বর-৪ এর স্টেনো টাইপিস্ট ওসমান গনি। তিনি গত ৭ জুন থেকে করোনা পজেটিভ হয়েছেন।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের স্টেনোগ্রাফার জাফর আহামদ গত ১৬ জুন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বিষয়টি একই আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস.এম আব্বাস উদ্দিন সিবিএন-কে জানিয়েছেেন।

সারাদেশের আইনাঙ্গন :

এছাড়া সারাদেশের অধস্তন (নিম্ন) আদালতের বিচারকদের মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ জন। এর মধ্যে লালমনিরহাটের জেলা ও দায়রা জজ ফেরদৌস আহমেদ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন আছেন।

অন্যদিকে নিম্ন আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ২৬ জন করোনা আক্রান্ত বলে জানা গেছে। সারাদেশের জেলা জজদের মাধ্যমে হাইকোর্ট প্রশাসনের কাছে এ তথ্য পাঠানো হয়েছে।

মঙ্গলবার ১৬ জুন সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আদালতে বিচারকার্য পরিচালনা এবং দায়িত্ব পালনকালে সারাদেশে অধস্তন আদালতে এ পর্যন্ত ১৩ জন বিচারক এবং ২৬ জন বিচার বিভাগীয় কর্মচারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশন আছেন আরও চারজন বিচারক।

এই মুহূর্তে ঢাকার সিএমএইচের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন লালমনিরহাট নারী ও শিশুনির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ফেরদৌস আহমেদ। তাকে প্লাজমা থেরাপি দেয়া হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৮ এর বিচারক বেগম শামীম আহমেদ।

অধস্তন আদালতের জন্য যে সকল বিচারক বর্তমানে করোনা আক্রান্ত হয়ে নিজ বাসায় চিকিৎসাধীন আছেন তারা হলেন- কিশোরগঞ্জের নারী ও শিশুনির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক কিরণ শংকর হালদার, জয়পুরহাটের নারী ও শিশুনির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. রুস্তম আলী, আইন ও বিচার বিভাগের উপসচিব এস মোহাম্মদ আলী, কুড়িগ্রামের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. তৈয়ব আলী, ডিপিডিসি-২ এর স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম রেজমিন সুলতানা, নেত্রকোনার সহকারী জজ মো. মেহেদী হাসান, চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেহ মোহাম্মদ নোমান এবং নোয়াখালীর হাতিয়ার চৌকি আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. নিজাম উদ্দিন।

এর আগে গত ১৪ জুন নিম্ন আদালতের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিচার-বিভাগীয় কর্মকর্তা ও সহায়ক কর্মকর্তা-কার্মচারীদের তথ্য চেয়ে সার্কুলার জারি করে হাইকোর্ট প্রশাসন। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত সার্কুলারে এই তথ্য চাওয়া হয়।