মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল ও জেলার চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে রাজনীতি না করে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবায় নিজেদের মনোনিবেশ করার জন্য কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য ও কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সাইমুম সরওয়ার কমল সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

শনিবার ৬ জুন কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে ব্যবস্থাপনা কমিটির এক জরুরি সভা শেষে ১৯ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের এক ভিডিও ফুটেজ এ প্রচারিত বক্তব্যে তিনি এ অনুরোধ জানান। এ সময় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল এর পাশে জেলা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ও উপ পরিচালক ডা. মোঃ মহিউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল গত ৫ জুন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া পর্যটন ব্যবসায়ী আবু সায়েম ডালিম এর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বলেন, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে আবু সায়েম ডালিম করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর কখনো চিকিৎসা সেবা নিতে যাননি। তিনি প্রথমে রামু ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে, পরে উখিয়া SARI Isolation & treatment centre এ চিকিৎসা নেন। সেখানেই আবু সায়েম ডালিম মৃত্যুবরণ করেন। এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, যে ২টি হাসপাতালে আবু সায়েম ডালিম চিকিৎসা নিয়েছেন, সেই ২টি হাসপাতালের সাথে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির কোন সম্পর্ক নেই। ২টি হাসপাতালই সিভিল সার্জনের অধীনে। তিনি বলেন, আবু সায়েম ডালিম এর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর কারণে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অহেতুক যে অভিযোগ আনা হচ্ছে তা মোটেও সত্য নয়।

ভিডিও ফুটেজ এ এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ১৯ টি ওয়ার্ড রয়েছে। যেখানে ২শো চিকিৎসক থাকার কথা, সেখানে চিকিৎসক আছে মাত্র ৫৭জন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে এ ৫৭ জনের মধ্যে প্রায় অর্ধেক চিকিৎসক এখন আইসোলেশনে রয়েছেন। অন্ত্যন্ত কষ্ট করে অন্যান্য চিকিৎসকগণ রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। এ অবস্থায় চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয়, ক্লিনার স্বাস্থ্য কর্মী সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে উৎসাহিত করা উচিত। যাতে তারা কর্মে সাহস ও প্রেরণা পায়।

এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে জেলা পর্যায়ের হাসপাতালের কোথাও কোন আইসিইউ না থাকলেও ৫ বছর আগে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ২বেডের আইসিইউ নির্মাণ করা হয়। যে ২টি আইসিইউ-তে রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। আইসিইউ-তে রোগী থাকাবস্থায় অন্য রোগী রাখা যায়না।

UNHCR এর অর্থায়নে যে ১০ বেড ICU ৮ বেড HDU করা হচ্ছে, সেগুলো সম্পূর্ণ UNHCR এর তত্বাবধানে নির্মিত হচ্ছে। এখানে হাসাপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির কোন হাত নেই। তারপরও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির পীড়াপীড়িতে আগামী ২০ জুনের মধ্যে ১০ বেড ICU ৮ বেড HDU এর কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ৫৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে UNICEF কক্সবাজার সদর হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান করে দিচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, হাসপাতালের বিভিন্ন টেন্ডার প্রক্রিয়ার সাথে ভিন্ন প্রশাসন জড়িত। ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে টেন্ডার প্রক্রিয়ার আদৌ কোন সম্পর্ক নেই।

এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণের শুরুতে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয় যে, করোনা ভাইরাস ছাড়া অন্য বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত সবসময় ৫ শতাধিক রোগী জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকে। তাই ঝুঁকির আশংকায় এ হাসপাতালটি করোনা হাসপাতাল হিসাবে ব্যবহার করা উচিত হবেনা। ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যের মধ্যে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, এসপি’র প্রতিনিধি, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র, প্রেসক্লাবের প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সমাজসেবার প্রতিনিধি সহ অনেকেই রয়েছেন।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনা মহাসংকটে ঘরে বসে কথা না বলে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাউকে উস্কে না দিয়ে, বাস্তবতা উপলব্ধি করে সঠিক তথ্য নিয়ে কথা বলা উচিত। তাহলেই জনগণ উপকৃত হবে।

এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, করোনা রোগীর আধিক্যের কারণে বর্তমান আইসোলেশন সেন্টার ছাড়াও রামু’তে নব নির্মিত BKSP ভবনকে করোনা আইসোলেশন সেন্টার করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি সবার উদ্দেশ্যে বলেন, সকল মানুষ যেমন এক রকম নয়, তেমনি সকল চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয়, স্বাস্থ্য কর্মী সহ অন্যান্যরাও একরকম নয়। তাই কোন চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয়, স্বাস্থ্য কর্মী সহ কারো বিরুদ্ধে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে হাসপাতালের তত্বাবধায়ককে লিখিত অভিযোগ করার জন্য তিনি সবার প্রতি আহবান জানান।

ভিডিও ফুটেজে সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল জেলা সদর হাসপাতাল ও জেলার চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। ভিডিও ফুটেজটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।

ভিডিও ফুটেজটি নিন্মে দেওয়া হলো :