প্রেস বিজ্ঞপ্তি:

করোনা ভাইরাসের কারণে প্রতি বছরের আড়ম্বরপূর্ণভাবে না হলেও স্বাস্থ্য বিধি মেনে ভার্চুয়াল মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ফিস্টুলা দিবস উদযাপন করেছে কক্সবাজারের আলোকিত স্বাস্থ্য সেবার প্রতিষ্ঠান হোপ ফাউন্ডেশন। শনিবার (২৩ মে) ‘জেন্ডার বৈষম্য দূর করি, স্বাস্থ্য বৈষম্যতা দূরীকরণ করি, এখনই ফিস্টুলা নির্মূল করি’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দিবসটি উদযাপন করা হয়। র‌্যালী বা অন্যান্য কর্মসূচী না করে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে দিবসটি উদযাপন করা হয়।

ভার্চুয়াল আলোচনায় ফিস্টুলা সার্জন ডা. ফাহমিদা সুলতানা বলেন, হোপ ফাউন্ডেশন মানবতার সেবায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। অপারেশনের মাধ্যমে ফিস্টুলা আক্রান্ত মা’দের স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে আমরা সদা প্রস্তুত। আমাদের প্রচেষ্টায় অনেক মা স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়েছেন। এটাই আমাদের সাফল্য।

হোপ হসপিটালের প্রধান ফিস্টুলা সার্জন নৃম্নয় বিশ্বাস বলেন, প্রসবজনিত ফিস্টুলা মায়েদের একটি সমস্যা। হোপ ফাউন্ডেশন ২০১১ সাল থেকে কক্সবাজারে ফিস্টুলা অপারেশন করে আসছে। এই পর্যন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে খুঁজে খুঁজে এনে প্রসবজনিত ফিস্টুলা আক্রান্ত মা’দের অপারেশন করে যাচ্ছি। এভাবে আমরা ইতোমধ্যে কক্সবাজার প্রায় ফিস্টুলা মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। এতে আমরা গর্বিত।

হোপ ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর কেএম জাহিদুজ্জামান বলেন, প্রসবজনিত ফিস্টুলা চিকিৎসায় হোপ ফাউন্ডেশন অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। আমরা নিজস্ব উদ্যোগে ও ব্যবস্থায় ফিস্টুলা আক্রান্তদের এনে বিনামূল্যে চিকিৎমসা সেবা দিচ্ছি। এতে আমরা ব্যাপকভাবে সাফল্য অর্জন করেছি। এভাবে কক্সবাজারকে প্রায় ফিস্টুলা মুক্ত করার প্রায় দ্বারগোড়ায় পৌঁছেছি। তাই সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ আমাদের চট্টগ্রাম বিভাগের ফিস্টুলা নির্মূল করার দায়িত্ব অর্পণ করেছে। চট্টগ্রাম বিভাগকে ফিস্টুলা মুক্ত করতে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

হোপ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট ডা. ইফতিখার মাহমুদ বলেন, কোনো অসহায় মা ও শিশু যেন চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত না হয় সে লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালে ক্ষুদ্র পরিসরে হোপ ফাউন্ডেশন যাত্রা করেছিলো। আমরা চেষ্টা করেছি সেবাকে বাড়াতে। তাই আজ হোপ ফাউন্ডেশন মহীরূপে পরিণত হয়েছে। আমাদের সেবার মধ্যে ফিস্টুলা চিকিৎসা একটি মাইলফলক। কেননা এটি অত্যন্ত জটিল রোগ। আল্লাহর রহমতে সেখানে বিরাট সাফল্য অর্জন করেছি। তাই সরকার ও দাতা সংস্থাগুলো আমাদের প্রশংসা জানিয়েছে এবং সহযোগিতা করে যাচ্ছে। আগামীতে আমরা পুরো দেশে আমাদের সেবা প্রসারিত করার চেষ্টা করবো।

তথ্য মতে, ২০১১ সাল থেকে ফিস্টুলা ফাউন্ডেশন- ইউএসএ ও ডাইরেক্ট রিলিফ- ইউএসএ’র আর্থিক সহযোগিতায় হোপ ফাউন্ডেশন পরিচালিত রামুর চেইন্দাস্থ হোপ হাসপাতালে ফিস্টুলা রোগীদের সম্পূর্ণ বিনা খরচে অপারেশন করা হচ্ছে। এই পর্যন্ত ৫৬৫জন ফিস্টুলা নারীকে অপারেশন করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদেরকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে এই কর্মযাত্রায় অংশীদার হয়েছে জাতিসংঘের সহযোগি সংস্থা ইউএনএফপিএ ও বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ। এসব প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় ফিস্টুলা চিকিৎসায় একটি মাইলফলক তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে হোপ ফাউন্ডেশন।

উল্লেখ্য, ১৯৯৯সালে ক্ষুদ্র পরিসরে হোপ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠান করেছিলেন আমেরিকা প্রবাসী কক্সবাজারের কৃতি ব্যক্তিত্ব ডা. ইফতিখার মাহমুদ। আধুনিক মানের সেবা মাধ্যমে বর্তমানে হোপ ফাউন্ডেশন একটি বড় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। হোপ ফাউন্ডেশনের পরিচালনায় রামুর চেইন্দাস্থ হোপ হাসপাতাল সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপক আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিষ্ঠিত হোপ ফিল্ড হসপিটাল সরকার ও আন্তর্জাতিক মহলে বেশ পরিচিতি অর্জন করেছে। পাশাপাশি জেলার দুর্গম বিভিন্ন এলাকায় ১০টির বেশি বার্থসেন্টার ও মেডিকেল সেন্টার পরিচালনা করছে হোপ ফাউন্ডেশন এবং খুব শিগরিই ৭৫ শয্যার ফিস্টুলা সেন্টার চালু করতে যাচ্ছে যেটি বাংলাদেশে প্রথম চিকিৎসা কেন্দ্র।