আহমদ গিয়াসঃ
গভীর সাগরে মাছ ধরার লাইসেন্সপ্রাপ্ত জাহাজগুলোর বিরুদ্ধে অগভীর সাগরে এসে মাছ ধরার অভিযোগ ওঠেছে।

শুধু তাই নয়, প্রায়শ: এ জাহাজগুলো অগভীর সাগরে এসে সেখানে মাছধরারত ফিশিংবোটগুলোকে ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দেয় এবং জেলেদের হতাহত করে তাদের মাছ ধরার জালগুলোও লুট করে নিয়ে যায়।

সর্বশেষ গত ১৪ মে কক্সবাজারের উপকুলবর্তী বঙ্গোপসাগরের ১৩ বাম বা প্রায় ১৩ মিটার গভীরতাসম্পন্ন এলাকায় একটি জাহাজের ধাক্কায় এফবি মেহেদী হাসান নামের একটি বোট ডুবে গেছে বলে জানিয়েছে জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতি।

জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতি জানায়, গভীর সাগরে মাছ ধরার লাইসেন্সপ্রাপ্ত জাহাজগুলো প্রায়শ অগভীর সাগরে এসে মাছ ধরছে। অগভীর সাগরে এসে মাছ ধরার সময় তারা স্থানীয় ফিশিং বোটগুলোকেও ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দেয়। এতে জেলেদের হতাহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। তারাও এতেও ক্ষান্ত থাকে না। বোট ডুবিয়ে দিয়ে সেই বোটের জালও কেটে নিয়ে যায়।

জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ বলেন, ডিপ সী ট্রলারগুলো ৪০ মিটারের বেশি গভীরতাসম্পন্ন সাগরে মাছ ধরার লাইসেন্সপ্রাপ্ত। অগভীর সাগরে এসে তাদের জন্য মাছ ধরা নিষিদ্ধ। কিন্তু বেশির ভাগ ট্রলারই তা মানছে না। শুধু তাই নয়, প্রায়শ: তারা অগভীর সাগরে এসে ফিশিং বোটগুলোকে ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দেয়।

তিনি জানান, সর্বশেষ গত ১৪ মে বিকালে সৌরভি-১ নামের একটি ডিপ সী ট্রলার কক্সবাজারের উপকুলবর্তী বঙ্গোপসাগরের ১৩ বাম (প্রায় ১৩ মিটার গভীরতাসম্পন্ন) এলাকায় এফবি মেহেদী হাসান নামের একটি ফিশিং বোটকে ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দেয়। এসময় জেলেরা সাঁতার কেটে অপর বোটে ওঠে প্রাণে রক্ষা পেলেও সৌরভী-১ জাহাজের জেলেরা এফবি মেহেদী হাসানের মাছ ধরার সকল জাল কেটে নিয়ে যায়।

জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতি, গত ফেব্রুয়ারী মাসেও ইনানী উপকুলে এই ধরনের একটি ডিপ সী ট্রলারের ধাক্কায় ডুবে যায় কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ঘোনারপাড়ার ছৈয়দ উল্লাহ বহদ্দার মালিকানাধীন এফবি সায়েম নামের একটি ফিশিং বোট। আর এ ঘটনায় খুরুশকুল ঘোনারপাড়ার মৃত আনর আলীর ছেলে নুরুল আলম ও পূর্ব হামজার ডেইল এলাকার মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে আব্দু রহিম নিখোঁজ হয়ে যায়। এরআগে গত ডিসেম্বরের শেষ দিকেও জাহাজের ধাক্কায় আনোয়ারার একটি ফিশিং ট্রলার ডুবে যায় এবং চার জেলে নিহত হয়।

চট্টগ্রামবন্দরমুখী আন্তর্জাতিক রুটের মালবাহী জাহাজ ও ডিপ সী ট্রলারগুলো সঠিক আইন মেনে সাগরে চলাচল না করায় এমন দূর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ।

গত ১৪ মে ডিপ সী ট্রলারের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া এফবি মেহেদী হাসানের ভাড়াটে মালিক মো. সেলিম জানান, তিনি মাত্র ২ মাস আগে সৌদি প্রবাসী মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ট্রলারটি ভাড়ায় নিয়েছিলেন। সেখানে অগ্রিম প্রদানসহ লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু অবৈধ জলপথে চলাচলকারী সৌরভী -১ নামের ডিপ সী ট্রলারটি তার সকল স্বপ্ন ধুলিসাৎ করে দিয়েছে।

বোট মালিক সেলিম বলেন, ওই বোট ডুবির পর আমরা কুল থেকে আরো চারটি বোট নিয়ে সাগরে যাই এবং ডুবে যাওয়া বোটটি উদ্ধারের চেষ্টা চালাই। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গত ১৮ মে বিকালে উদ্ধার কাজ বন্ধ করে কুলে ফিরে আসি এবং এবিষয়ে কক্সবাজার সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করি (নং ৭৪৫, তারিখ ১৮ মে)। এই বোট ডুবির ঘটনায় ৬৩ লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবী করেন বোট মালিক সেলিম।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বোট মালিক সমিতির নেতা মাহবুবুল হক মুকুল বলেন, ডিপ সী ট্রলারগুলোর বেশিরভাগ মালিকই অত্যন্ত প্রভাবশালী। রয়েছেন বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপিরাও। তাদের অনেকেই আবার লাইসেন্স ও ট্রলারগুলো অন্যকে ভাড়া দিয়েছেন। আর ভাড়ায় নেয়া ব্যক্তিরাই বেআইনীভাবে গভীর সাগরে এসে মাছ ধরছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মৎস্য বিজ্ঞানী বলেন, ৪০ মিটার গভীর সাগরে কখনও ছুরি মাছ পাওয়া যায় না। তাহলে ডিপ সী ট্রলারগুলো ছুরি মাছ ধরে আনে কোত্থেকে? এসব অবৈধ ফিশিং এর কারণে সাম্প্রতিককালে সাগরে ছুরি মাছ আহরণের হার একেবারেই কমে গেছে।

গত কয়েক বছরে সাগরে ছুরি মাছ ধরার হার কমে যাওয়ার ঘটনা স্বীকার করে কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান বলেন, আগে সাগরে ধরা পড়া ছোট মাছের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশই ছিল ছুরি। কিন্তু এখন এর এক তৃতীয়াংশও পাওয়া যাচ্ছে।

ওভার ফিশিং বা অতিরিক্ত মাছ ধরার কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন তিনি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম খালেকুজ্জামান বলেন, আমাদের লজিস্টিক সাপোর্ট না থাকায় গভীর সাগরে গিয়ে আইন প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। তবে এই ধরনের ঘটনা নৌ-বাহিনী ও কোস্টগার্ড এর নজরে আসলে তারা ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।