মাহফুজা আজাদ 

 

মুন্নি আপাদের বাসাটা খুব পরিপাটি ছিল।কোয়ার্টারে সবার বাসার ডিজাইন একইরকম।টিনশেড বিল্ডিং,সামনের ব্যালকনিটা বেশ বড়।অনায়াসে তিনসেট সোফা বসানো যেতো।তিনটে প্রশস্ত সিঁড়ির একপাশে সিমেন্টের বাঁধানো চেয়ার।একই রকম বাসা।তবুও এই বাসাটায় আমি প্রতিদিন যেতাম।বারান্দার মেঝেতে একটুও ময়লা,ধুলো বা বালি নেই।সাধারন ফ্লোরটা তেল চকচকে।হাঁটলে ছবি দেখা যেতো।

বারান্দার সামনে মাধবীলতা গাছটা মনে হতো যেনো আপনাকে সাদরে আমন্ত্রণ জানাতে প্রস্তুত।গোলাপের দুটো গাছ,বেলি আর কমন নয়নতারার ঝোঁপ।উনাদের ড্রয়ইংরুমে সবচেয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখতাম উনাদের টেলিফোন সেটটা।এনালগ জামানার নাম্বার ঘোরানো টেলিফোন।কুশিকাটার কাজ করা একটা কভার দিয়ে ঢাকা থাকতো সেটা।টেলিফোনের ক্রিং ক্রিং রিং মনে হতো যেনো খুবই অত্যাশ্চর্য কিছু।তখন কোন ঘরে ল্যান্ডফোন থাকাটা ছিল খুবই আভিজাত্যের ব্যাপার।সময়টা ছিল ৮৩/ ৮৪।

২০০০ এর আগে মোবাইল ফোনের এতোটা প্রসার ছিলোনা।১৯৯৮ এ যখন আমার বিয়ে হয় বাসায় ল্যান্ডফোন বা মোবাইল ছিলোনা।বাড়িওয়ালা আন্টি বলেছিলেন উনাদের নাম্বারে ফোন করতে পারবেন সাহেব।একদিন কথা বলার পর আর যাইনি।সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস নয়তো কন্টিনেন্টাল কুরিয়ারে চিঠি আদান- প্রদান হতো।চিঠি দিতে দিতে ওরা আমাদেরকে আপা দুলাভাই সম্বোধন করতো।হৃদ্যতাটা এমন হয়েছিলো যে ইদে ওদের জন্যও আমরা কাপড় কিনতাম।

২০০০ এ এসে ল্যান্ডফোনও দেখলাম অনেক আধুনিক হলো।ক্রমান্বয়ে কলার আইডি হলো,ডিজিটাল হলো।এরপর আমরা মোবাইল কিনলাম।দূরত্ব অনেক কমে এলো।ইন্টারনেট এর কল্যানে মোবাইলের ব্যবহার আরো কয়েকধাপ উন্নত হলো।ফেবুর কল্যানে বন্ধুত্ব, প্রেম, ভালোবাসা,আন্তরিকতাও ভিন্ন মাত্রা পাচ্ছে।সহজ হয়েছে কেনাকাটাও।কিন্তু সেই ল্যান্ডফোনের আভিজাত্য কিংবা আড়ংয়ের খামে সুগন্ধী কলমে লেখা চিঠির মুগ্ধতা স্মৃতিতে জেগে রইবে চিরদিন।

 

লেখক : সহকারী অধ্যাপক , ইংরেজী বিভাগ , কক্সবাজার সিটি কলেজ ।