ইফতিয়াজ নুর নিশান 

আজ মা’য়েদের দিন, বিশ্ব মা দিবস। মা’য়েদের ভালোবাসতে বা তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে আলাদা কোন দিনের প্রয়োজন হয় না, তবুও প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার কে বিশেষ দিন হিসেবে ধরে নিয়ে পৃথিবীবাসী বিশ্ব মা দিবস হিসেবে পালন করে।না! বিশেষ উদযাপনের দিন বলে লিখছি না, বরং লিখছি হঠাৎ সৃষ্টি হওয়া প্রবল ইচ্ছাটাকে বাস্তবে রূপায়ন করতে।

মা’কে নিয়ে লিখতে গেলে লেখা যাবে কয়েক কোটি ক্রোশ পাতা! নিদারুণ শব্দ সংকটে ভোগা যাবে তবুও ইতি ঘটবেনা বরং চির অক্ষয় হয়েই রবে মা নামক শব্দের অনাবিল সুন্দর ইতিহাস।

একজন মানবশিশু’র মুখের বুলি আস্তে আস্তে যখন ফুটতে শুরু হয় তখন সে প্রথম উচ্চারণ করে একটি শব্দ মা। হয়তো ভাষা ভেদে অথবা উচ্চারণগত পার্থক্য আছে, আমার কাছে পৃথিবীর সকল ভাষায় সব থেকে সুন্দর এবং আকর্ষণীয় শব্দটি হলো “মা”।জাগতিক যত অনূভুতি সব এই একটি শব্দের প্রতি উৎসর্গ করা যায় অবলীলায়, কারণ আপনি অথবা আমিকে জগতের আলো দেখিয়েছেন মা’ই।

একটা ছোট্ট শব্দ হলেও মা শব্দের অন্তরালে লুকিয়ে থাকে অগণিত গল্প,প্রতিটি মানুষের বাস্তব জীবনেই রয়েছে গল্পগুলোর প্রাণবন্ত উপস্থিতি। জাগতিক সব প্রথম যাত্রার প্রারম্ভিক দৃশ্যপটটা রচিত করেন আমাদের মা, আর প্রথম গল্পটা রচনা হয় যখন একজন মা দশমাস দশদিন গর্ভে ধারণের পর অসীম যন্ত্রণা সহ্য শেষে জন্ম দেন সন্তানের।সেই মুখের বুলি শেখানো থেকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে সন্তানকে পরম মমতায় গড়ে তুলেন মা।

পৃথিবীর সব ধর্মেই মায়ের জন্য বরাদ্দ আছে অনন্য স্থান।মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন, “আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। জননী সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেন এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে; সুতরাং আমার (আল্লাহর) প্রতি এবং তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই কাছে।” (সুরা-৩১ লুকমান, আয়াত: ১৪)। এই পবিত্র আয়াতে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছে মা’য়ের মর্যাদা এবং অমূল্য বিশেষত্ব।

ধর্মীয় প্রেক্ষাপট উপস্থাপন করার প্রেক্ষিতে একটি বহুল সমাদৃত গল্প যোগ করতে চাই।

একবার এক ব্যক্তি প্রিয় নবী রাসুলুল্লাহ হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার কাছে কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার বেশি হকদার? তিনি বললেন, মা। লোকটি বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার বাবা- (বোখারি-মুসলিম)। মা’য়ের শ্রেষ্ঠত্ব কতটা অসীম তা বোঝাতে এই গল্পটাই তার চমৎকার এবং সবথেকে সুন্দর উদাহরণ।

শেষ করবো,তবে শেষের আগে আরো কিছু কথা যোগ করা প্রয়োজন মনে করছি সময়ের প্ররোচনায়।

করোনা ভাইরাসের কারণে আজ বিপর্যন্ত সারা পৃথিবী, এই ক্রান্তিলগ্নে আপনার আমার জন্য সদা দুশ্চিন্তায় কাতর হয়ে থাকা মানুষটিই হলেন মা। প্রতিটি সন্তানের কাছে নিরাপদ আশ্রয়স্থল এবং পরম মমতার শেষ ঠিকানা মা।
এই দুঃসময়ে লকডাউনকালীন আলস্যযাপনে যত সম্ভব পারেন থাকুন প্রিয় মায়ের পাশে, জৈবনিক ব্যস্ততার কষাঘাতে এমন সূবর্ণ সুযোগ আর নাও পেতে পারেন!
আর,যারা মা’য়ের পাশে থাকার সুযোগ বঞ্চিত হয়ে আছেন তারা করুন মায়ের নামে স্রষ্টা সমীপে অফুরান প্রার্থনা।

ভালো থাকুক,পৃথিবীর সব মা’য়েরা।

-শিক্ষার্থী,ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়,চট্টগ্রাম।