জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

ছোট্ট আণুবীক্ষণিক জীব করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ দাবানলের মতো বিশ্বের প্রায় সব দেশে ছড়িয়ে রীতিমতো তাণ্ডব চালাচ্ছে । নিত্যদিন প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিষাক্ত ছোবলে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এ জন্য মহামারিতে রূপ নেওয়া এই ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে দেশে দেশে লকডাউন চলছে।

এরই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারেও ঘরবন্দি সবাই। পরিবারের সবার সঙ্গে নিজেকেও সুস্থ রাখাটা এই সময়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সাধারণের মানুষের চেয়ে এই চ্যালেঞ্জটা প্রশাসনের জন্য আরো বেশি কঠিন। কেনোনা ২৪ ঘন্টা তাঁরা জনগণের সুরক্ষায় মাঠে তৎপর।

আরো বেশি কঠিনতর যদি চারপাশে পানি বেষ্ঠিত কোন দ্বীপ উপজেলাকে করোনা মুক্ত রাখা। যেখানে সাগরের মাঝখানে দ্বীপ। দ্বীপের চতুর্দিকে পানি পথে সহজে গ্রামে প্রবেশ করার অগনিত পথ। এর পরেও এই অসম্ভব কাজটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে ওসি মো. দিদারুল ফেরদৌস কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া দ্বীপকে করোনা মুক্ত রাখতে রীতিমত যুদ্ধে নেমেছেন।

রাতদিন সমান করে কঠোর পরিশ্রমে জনগণের মাঝে সচেতনতা বাড়িয়ে ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রেখেছেন। দেশের সঙ্কটময় সময়ে যখন একে একে ৩টি বিভাগ, ৪৯টি জেলা ও ৩৯৫টি উপজেলা সম্পূর্ণ লকডাউন। ঠিক সে সময়ই কুতবদিয়ার মানুষকে করোনা ছোবল থেকে সুরক্ষা রাখতে ওসির প্রসংশনীয় নানা উদ্যোগ দেখে দ্বীপ উপজেলার শিক্ষিত যুবক আরিফুর ইসলাম অারিফ ওসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

রোববার (৩ মে) দুপুর ১২টায় নিজের ফেসবুক পেইজে যা লিখেন-“কঠোর ওসির শতভাগ সফলতা। এই পুলিশ অফিসার আত্মকেন্দ্রিক। ছবি খুব কম তোলেন। নিজের চেহারা অতোটা দেখান না, যদিও অনেক স্মার্ট । লবণের মাঠ বা ভাঙ্গা বেড়িবাঁধের দূর্গম পথ দিয়ে হেঁটে হেঁটে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন একেবারে অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে।

তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশের এনালগ এলাকার ওসি। আমাদের কুতুবদিয়াতে বিদ্যুৎ নেই, মোবাইল নেটওয়ার্ক এতো ভালো না। ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ফ্রেন্ড বা ফলোয়ারও এতো বেশি নেই। অনেকেই বলছে করোনার মতো ওসিটা খুব নিষ্ঠুর হয়ে গেছে।

কুতুবদিয়াতে বাহির থেকে কেউ ডুকলে সোজা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়েরেন্টাইনে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আর দ্বীপ এলাকা হওয়ায় যেই নৌকা বা ট্রলারে আসছে তাদেরকে হয় ফেরত পাঠাচ্ছে নয়তো ট্রলারে রেখে ১৪ দিনের কোয়েরেন্টাইন নিশ্চিত করছে। এই কারনেই আজ পর্যন্ত কুতুবদিয়া থানা এলাকায় একজনও করোনা রোগী পাওয়া যায়নি। নিরবেই বিপ্লব চালিয়ে যান। দিদারুল ফেরদৌস ওসি, কুতুবদিয়া।”

স্ট্যটাসে মাসুদ করিম সোহেল নামে একজন লিখেন, ‘স্যারের কষ্টের বিনিময়ে আমাদের প্রাণের কুতুবদিয়া করোনা মুক্ত থাকুক এই কামনা করি এবং কুতুবদিয়ার সকল মানুষের উচিত স্যারকে সহযোগিতা করা। তাহলে আমাদের কুতুবদিয়া ইনশাআল্লাহ করোনা মুক্ত থাকবে, দ্বীপের সকল মানুষ নিরাপদে থাকবে ।’

চাঁদনী সাইনী নামে একজন লিখেন, ‘স্যারকে আমার তরফ থেকে হাজার কনগ্রান্টস রহিলো। ওনার কারণে করোনায় নিরাপদ আছে। আজ কুতুবদিয়ার মানুষ করোনা থেকে সুরক্ষিত আছে।’

জানতে চাইলে ওসি দিদারুল ফেরদৌস বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। আমিও কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন, বিপিএম (বার) এর সার্বক্ষনিক দিক নির্দেশনায় করোনা ভাইরাসকে প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ রাখতে নানা পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করছি। করোনা ঠেকাতে আগ থেকেই যদিও নানা পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। তবে আমরা উদাসীন নই। কুতুবদিয়ার মানুষকে নিরাপদ রাখতে থানা পুলিশ রাতদিন (ননস্টপ) কাজ করে যাচ্ছেন। নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সুরক্ষা দেবেন।’

প্রসঙ্গত, কক্সবাজারে রোববার পর্যন্ত ৩২দিনে ১৬০৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। যার মধ্যে পজেটিভ ৪৪। এতে কক্সবাজার জেলায় ৩৮, নাইক্ষ্যংছড়িতে ৫ জন ও বান্দরবন সদর ১জন। কক্সবাজার মহেশখালী উপজেলায় ১০ জন, টেকনাফে ৫ জন, উখিয়া ৬ জন, চকরিয়া ৭ জন, সদরে ৬ জন, পেকুয়া ২ জন, রামু উপজেলায় ৩ জন। জেলার একমাত্র কুতুবদিয়া উপজেলায় এখনো কোন করোনা রোগী সনাক্ত হয়নি।