কুর্ণিশ তোমায়

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল, ২০২০ ১০:০০ , আপডেট: ২২ এপ্রিল, ২০২০ ১০:১৭

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


শ্রেণী কার্যক্রমে তেমন মনোযোগ ছিল না।অনেকে পাগল উপাধী দিয়েছিল।আমরা কাছের কয়েকজন বলতাম কবি।এখনও বন্ধুদের অনেকেই তার নামের আগে কবি জুড়ে না দিলে তাকে চিনে না। হাতে ছোট ডায়রি, কলম, কাঁধে ব্যাগ,মাথায় অদ্ভুতুড়ে টুপি, নাকের উপর সাদা চশমা।আনমনে হাটত আর সুযোগ পেলেই হাতের ডায়রীটার পাতা নষ্ট করত।কি সব লিখত।
প্রায় সবাই বিষয়টি নেতিবাচক হিসেবে না নিলেও ইতিবাচক হিসেবে কেউ নিত না।তারপরও সে তার মতই থাকত,চলত।ভাবটা এরকম,”তোরা যে যা বলিস ভাই,আমার সোনার হরিণ চাই” অথবা “তোমরা যা বুঝ,আমি তা বুঝি না বা আমি যা বুঝি তোমরা তা বুঝ না”। সে কি বুঝত আমরা কেউ তা বুঝতাম না বা বুঝার চেষ্টা করতাম না।আসলে আমাদের মাথায় বুঝার মত ঘিলু ছিল না।সে তার ধারণা লালন করেই পড়ে থাকল। প্রচুর পড়ল, চর্চা করল, অধ্যায়ন করল।তার অধ্যায়নের এ পর্যায়ে খুব কম মানুষ যেতে পেরেছে।অবিশ্বাস্য রকম রসহীন নিরেট সত্য এটি।তার অধ্যায়ন, জ্ঞান অর্জনের স্পৃহা, জ্ঞান আহরণের উচ্চতা কল্পনাতীত।তার চিন্তার শেষ বিন্দু আছে,অধিকাংশের যেটা নাই।
মুদ্রা অর্জনের সব রাস্তা পায়ের কাছে হামাগুড়ি খেলেও কোন সময়ই ধ্যানভঙ্গ হয়নি তার।মিডিয়া জগত বাদেও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান তাকে টানতে চেয়েছে অসংখ্যবার।মাতৃভৃুমি ছেড়ে কোথাও যাওয়ার ন্যুনতম আগ্রহ ভুল করেও কোনকালে অংকুরিত হয়নি তার মনের গহীনেও।সংবাদের পিছনে সে ছুটেছে না সংবাদ তার পিছনে ছুটেছে, একটি বিরাট প্রশ্ন।যেটাতে হাত দিয়েছে,সেটা ইতি টেনেই বসা থেকে উঠেছে।
একনিষ্টতা,জেদ,নির্মোহভাব তার চরিত্রের মৌলিক স্তম্ভ। বিশ্বাস করতে পারবেন(?), তার চিন্তার জগত অন্যদের চেয়ে অন্তত আশি বছর পরে।তাকে যারা চিনে কেবল সাংবাদিক হিসেবেই চিনে অথবা ভবঘুরে।জিনিয়াস শব্দটি সবার সাথে যায় না।কিন্তু,জিনিয়াস শব্দের সাথেই সে যায়।উল্টা হয়ে গেল? মোটেই না।এটিই তার চরিত্রের চরিত্র।
প্রায় দুইযুগ ধরেই ইতিহাস আর সমাজচিন্তার পাশাপাশি সমাজের প্রয়োজনে কথা বলে আসছে এই নিভৃতচারি কলম সৈনিক।সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনে কোনসময়ই কাউকে এক ইঞ্চিও ছাড় দেয়নি,পিছপা অনেক দূরের কথা।উদাহরণ দিয়ে এটি ব্যাখ্যা করার পরিবেশ কোনদিন হলে তা করব,আজ নয়।
বর্তমান করোনা সংকটকালে তার শ্রম, প্রকাশ,রাষ্ট্রেরপ্রতি আনুগত্যের স্বীকৃতি,মানুষ হিসেবে নিজের অস্হিত্বের জোরালো উচ্চারণ প্রতিনিয়তই আশা জুগিয়েছে বর্তমান সমাজব্যবস্হার প্রতি আস্হার সংকটে ভোগা ভঙ্গুর অচেনা-অজানা এক মনের।আজ খুব করে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে,তার আশেপাশের গুণগত মানের কেবল আর একজনও যদি থাকত এ করোনা সংকট আজ প্রিয় মাতৃভৃুমি পাহাড়িদ্বীপে প্রবেশ করতে তটস্হ থাকত।হয়ত সব আজকের দৃশ্যের বিপরীতও হত। হয়ত আমরা রাতে ঘুমাতে যেতে পারতাম কোন প্রকার সংশয় ছাড়াই।বিলীন রাস্তায় একা হাটা প্রায় অসম্ভব বলেই আজ…….
আমি আজ কোন সাংবাদিকের কথা বলছি না,বলছি না কোন কবির কথা বা পাগলের কথা,কোন ভবঘুরের কথাও না।
হ্যাঁ,আমি আজ একজন সমাজকর্মীর কথাই বলছি,বলছি একজন সামাজিক নাগরিকের কথা,একজন মাতৃভৃুমি প্রেমিকের কথা, আমাদের মাটির একজন মানুষের কথা। কুর্ণিশ তোমার তরে প্রিয় মাহবুব রোকন।
লিখেছেন- মুহম্মদ হেলাল উদ্দিন, ওসি (তদন্ত) বোয়ালখালী থানা, চট্টগ্রাম।