সংবাদদাতা:
ফেসবুকে নারী সেঁজে ভুঁয়া আইডি খুলে নানা প্রকার গুজব, সমাজের নামি দামি মানুষের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, ব্ল্যাকমেইলসহ নানা অভিযোগে বেলাল আহমদ ওরফে বেলাল আজাদ প্রকাশ বেলাল মুন্সীকে গ্রেফতার করেছে কক্সবাজার সদর থানার পুলিশ।

সোমবার (২০ এপ্রিল) বিকালে কক্সবাজার শহরের হোটেল মিডিয়া ইন্টারন্যাশলানের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

বেলাল মন্সী উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি গ্রামের মৃত বদিউর রহমানের ছেলে। এর আগেও তাকে দুইবার গ্রেফতার করে পুলিশ।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বেলাল দীর্ঘদিন ধরে নারী সেজে ফেসবুকে ভূঁয়া আইডি খুলে নানাভাবে প্রতারণা করে আসছিল। সমাজের নামি-দামি মানুষের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটার্স দিয়ে মানহানির পাশাপাশি ব্ল্যাকমেইল করে আসছিল। সর্বশেষ তার শিকার জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও হোটেল মিডিয়া ইন্টারন্যাশনালের মালিক শিল্পপতি শাহা আলম রাজা। সম্প্রতি, বেগম হাসিনা নামের একটি ভুঁয়া আইডি থেকে তার বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস দিয়ে মানহানিকর তথ্য প্রকাশ করে। এঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এরআগে পুলিশ, সাংবাদিক, আইনজীবী, ব্যবসায়ীসহ নানা পেশাশ্রেণীর সম্মানিত মানুষের বিরুদ্ধে ফেক আইডি খুলে স্ট্যাটাস দেয় বেলাল। এছাড়াও আইনজীবী সহকারি পরিচয়ে কক্সবাজার আদালত পাড়ায় বিচারপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণনার অভিযোগ রয়েছে। রয়েছে আইনজীবীর স্বাক্ষর ও সীল জালিয়াতির অভিযোগ।

জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য এডভোকেট রুহুল আমিন চৌধুরী রাসেল জানিয়েছেন, ‘বেলাল মুন্সি দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া আইডি খুলে সম্মানিত ব্যক্তিদের সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করে আসছিল। সম্প্রতি কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি শাহা আলম রাজার বিরুদ্ধে বেগম হাসিনা নামের একটি ফেক আইডি থেকে নানা ধরণের কুরুচিপূর্ণ কথা প্রকাশ করে। আটক বেলাল উক্ত বেগম হাসিনা নামের আইডি ছাড়াও অন্তত ২২টি ভুয়া আইডি চালিয়ে আসছে’।
অভিযানে নেতৃত্বদানকারি কক্সবাজার সদর মডেল থানার এসআই আলমগীর জানিয়েছেন, ‘বেলাল ওরফে বেলাল আজাদকে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ভুয়া আইডির কথা স্বীকার করেছে। তার বিরুদ্ধে আরো কি কি মামলা রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে’।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি অপারেশন মাসুম খান বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল দ্রুত অভিযান চালিয়ে বেলালকে আটক করা হয়। প্রাথমিকভাবে তার অপরাধ গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একইভাবে তার স্থায়ী ঠিকানা উখিয়া হওয়ায় উখিয়া থানায় তার বিরুদ্ধে কি কি মামলা রয়েছে তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে’।

উল্লেখ্য, বেলাল আহমদ ওরফে বেলাল আজাদ নিজেকে আইনজীবী সহকারি পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে আদালতপাড়া প্রতিদিন সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে আসছে। বিভিন্ন জটিল মামলায় আসামীকে জামিনে মুক্ত করার কথা বলে সাধারণ মানুষ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় কৌশলে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে কক্সবাজার আদালতের সিনিয়র আইনজীবীদের স্বাক্ষরজাল, ডেপুটি জেলারের স্বাক্ষরজাল সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি মামলা সহ বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। আইনজীবী সহকারি সমিতি থেকে নিবন্ধন বাতিল হওয়া বেলাল আজাদ এখনও নিজেকে কখনও আইনজীবী, কখনও সাংবাদিক, আবার কখনও বিচারকের ঘনিষ্টজন পরিচয় দেয় আদালতপাড়ায় চষে বেড়ায় প্রতিদিন। এতে আইনজীবী, আইনজীবী সহকারিদের যেমন সম্মান হানি হচ্ছে, তেমনি সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হয়ে মামলা ভোগান্তিতে পড়ছে।

অভিযোগ রয়েছে, রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজার জেলায় সব ধরণের জন্মনিবন্ধন বন্ধ থাকলেও বেলাল আহমদ প্রকাশ বেলাল আজাদ নিমিষেই এসব জন্মনিবন্ধন ফরম তৈরী করে দিচ্ছে। সম্পূর্ণ জাতিয়াতির মাধ্যমে ভূঁয়া এসব জন্মনিবন্ধন তৈরী করে ভূক্তভোগীদের ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। মামলায় প্রয়োজন আছে বলে নানা অজুহাত দেখিয়ে বাধ্য হয়ে এসব জন্মনিবন্ধন ফরম তৈরী করে দিচ্ছে। গত ২০১৯ সালে উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর জাল করা একটি জন্মনিবন্ধ ধরা পড়ে যাওয়ায় জালিয়াতচক্রের প্রধান বেলালের জালিয়াতি ফাঁস হয়ে যায়। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে বেলাল গা ঢাকা দেয়। বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি গ্রামের মৃত বদিউর রহমানের ছেলে বেলাল আহমদ ওরফে বেলাল আল আজাদ। পিতা মাতার ইচ্ছে ছিল ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করে মানুষের মত মানুষ গড়বে বেলালকে। এ কারণে তাকে প্রথমে উখিয়ার রুমখাঁপালং দাখিল মাদ্রাসা ও পরে সোনারপাড়া দাখিল মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেয়। কিন্তু, পড়ালেখায় বেশী দূর যেতে পারেনি বেলাল। পিতা হারা অভাব অনটনের সংসারে দিনে দিনে পা বাড়ায় অপরাধ জগতে। কোন উপায়ন্তর না দেখে কক্সবাজার আইনজীবি সহকারি সমিতি থেকে বাগিয়ে নেয় নিবন্ধন। অবশ্য, পরে তার নিবন্ধ আইনজীবী সহকারি সমিতি থেকে বাতিল হয়ে যায়। এরপরও আইনজীবী সহকারির পদটি ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে যাচ্ছে আদালত পাড়ায়।

এদিকে আদালতপাড়ায় তার নানা প্রতারণার বিষয়টি একের পর এক ফাঁস হতে শুরু করলে জেলার আরেক টাউট ঈদগাও এলাকার জনৈক বিদেশী চ্যানেলের সাংবাদিক নামধারী ব্যক্তির সহায়তা নেয়। ওই সাংবাদিককে ভাগিয়ে নিয়ে তার অখ্যাত নিউজ পোর্টালের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে শুরু করে চাঁদাবাজি। এছাড়াও বিভিন্ন অনলাইন, স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয়ে নানা কৌশলে সাধারণ মানুষের কাজ থেকে হাতিয়ে নিতে শুরু করে অবৈধ আয়। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসে গিয়ে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কৌশলে নানা সুবিধা আদায় করে যাচ্ছে। অপরাধ জগত থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আয় করার সুবাধে এই পর্যন্ত বেলাল বিয়ে করেছেন তিনটি। কিন্তু, এতকিছুর পরও রহস্যজনক কারণে আদালতপাড়া সহ পুরো জেলায় বিচরণ করছে। বেলালের এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করছে না।

গত কয়েক বছর আগে নিজেকে আইনজীবী সহকারি পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আইনজীবীদের স্বাক্ষর জাল, বিচারকের স্বাক্ষর জাল, কোন তদন্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষর থেকে শুরু করে জেল সুপার ও ডেপুটি জেলাদের স্বাক্ষর সম্পূর্ণ জাতিয়াতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়। এতে করে একদিন সাধারণ মানুষ হয়রানি হচ্ছে, অন্যদিকে কক্সবাজার আদালতে বিচারকার্য সম্পন্ন করতে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আর এসব কিছুর বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। এসব কিছু ধীরে ধীরে যখন বেলাইল্যার অপকর্ম ফাঁস হয়ে যাচ্ছে, তখন আদালত প্রাঙ্গণ থেকে এখন গা ডাকা দিয়েছে। নিয়ে কক্সবাজারের স্থানীয় পত্রিকা, অনলাইন সহ বিভিন্ন গনমাধ্যমে বেলাইল্যার অপকর্ম নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হলে আদালতপাড়া তোলপাড় সৃষ্টি হয়। অনেকে ওই বেলাইল্যাকে খুঁজতে মাঠে নেমেছে। অনেকে আবার আইন শৃংখলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।